“১৯৭১-এর যুদ্ধে ত্রিপুরার সাধারণ মানুষেরও যোগদান ছিল অবিস্মরণীয়। ত্রিপুরার মানুষ ভারতীয় সেনাদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মুক্তিযুদ্ধে নিজেদের দায়িত্ব পালন করেন। রাজ্যপাল মুক্তিযুদ্ধে লেন্স নায়ক এলবার্ট এক্কার সর্বোচ্চ বলিদানের কথাও বক্তব্যে তুলে ধরেন।”
আগরতলা, ১৬ ডিসেম্বর।।
৫৪তম বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে লিচু বাগানস্থিত এলবার্ট এক্কা পার্কে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে রাজ্যপাল ইন্দ্রসেনা রেডি নান্নু, মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা, উচ্চশিক্ষামন্ত্রী কিশোর বর্মন সহ উচ্চপদস্থ সেনা আধিকারিক এবং সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের আধিকারিকগণ উপস্থিত ছিলেন। ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের যেসকল বীর সৈনিক তাদের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন তাদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে রাজ্যপাল ইন্দ্রসেনা রেড্ডি নান্নু বলেন, আজকের দিনটি খুবই গর্বের এবং ঐতিহাসিক দিন। প্রতি বছর ১৬ ডিসেম্বর এই দিনটি বিজয় দিবস হিসাবে পালিত হয়ে আসছে। এই দিনটি শুধুমাত্র নিছক একটি স্মরণীয় দিবসই নয় বরং ভারতীয় সেনা বাহিনীর ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে আত্মবলিদান স্মরণ করার দিবস। ১৯৭১-এর যুদ্ধে ত্রিপুরার সাধারণ মানুষেরও যোগদান ছিল অবিস্মরণীয়। ত্রিপুরার মানুষ ভারতীয় সেনাদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মুক্তিযুদ্ধে নিজেদের দায়িত্ব পালন করেন। রাজ্যপাল মুক্তিযুদ্ধে লেন্স নায়ক এলবার্ট এক্কার সর্বোচ্চ বলিদানের কথাও বক্তব্যে তুলে ধরেন। যেই ইতিহাস ত্রিপুরার মানুষের স্মরণীয় অধ্যায়ে লেখা থাকবে। তিনি দেশ রক্ষায় ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রতিনিয়ত দায়িত্ব ও কর্তব্যের কথাও তুলে ধরেন। পাশাপাশি আজকের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী শিল্পী, ভারতীয় সৈনিক, প্রতিযোগীদের প্রশংসা ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা) মানিক সাহা বলেন, আজকের দিনটি দেশের ইতিহাসের এক গৌরবোজ্জ্বল দিন। এই দিনটি শুধু একটি স্মারক নয়, বরং সাহস, আত্মত্যাগ ও দেশপ্রেমের চিরন্তর প্রতীক। ১৯৭১ সালে ভারতীয় সেনাবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বে যে ঐতিহাসিক বিজয় অর্জিত হয়েছিল তা আজও আমাদের অনুপ্রেরণা যোগায়। তিনি আরও বলেন, ত্রিপুরার মাটি মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবিকতা ও সহমর্মিতা উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল। অসংখ্য শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়ে এবং সর্বাত্মক সহযোগিতার মাধ্যমে ত্রিপুরা সেই সময় ইতিহাসে এক গর্বিত অধ্যায় রচনা করে। এই ভূমিকা রাজ্যের মানুষ আজও গর্বের সঙ্গে স্মরণ করে। এলবার্ট এক্কা ওয়ার মেমোরিয়াল আমাদের বীর সেনানীদের আত্মত্যাগের এক জীবন্ত স্মারক। এখান থেকে আমরা দেশপ্রেমের শিক্ষা গ্রহণ করতে পারি। এই প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা লেন্স নায়ক এলবার্ট এক্কার আত্মবলিদানের কথা তুলে ধরেন। মুখ্যমন্ত্রী দেশ রক্ষা ও জাতির কল্যাণে আত্মোৎস্বর্গকারী সকল বীর শহীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিগ্রেডিয়ার ধীরাজ সিং অফিসার ৭৩ মাউন্টিং বিগ্রেড। অনুষ্ঠানে এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ফাস্ট লেডি এন. রেণুকা, পুলিশের মহানির্দেশক অনুরাগ, তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের সচিব ড. পি. কে. চক্রবর্তী, জেলাশাসক ও সমাহর্তা ডা. বিশাল কুমার প্রমুখ। উল্লেখ্য, অনুষ্ঠানের শুরুতেই বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে ৭৩ মাউন্টিং বিগ্রেডের সাহসিকতার উপর একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়। এছাড়াও তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তর, ভারতীয় সৈনিক, এন.সি.সি. ক্যাডেড এবং রিয়াং শিল্পীদের দ্বারা হজাগিরি নৃত্য সহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান প্রদর্শিত হয়। অনুষ্ঠান মঞ্চে রাজ্যপাল ইন্দ্রসেনা রেড্ডি নান্নু এবং মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা ৫৪তম বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে বসে আঁকো প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।

