“রাজ্যে বিভিন্ন প্রান্তে আগুনের স্ফুলিঙ্গ জ্বলে উঠার পর সর্ব প্রথম আঙুল উঠে প্রশাসনিক কর্তাদের দিকে।অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় প্রশাসনিক ব্যর্থতার কারণে আগুন জ্বলে উঠেছিলো দাউ দাউ করে। গত ১২ জুলাই গণ্ডাছড়া জতুগৃহ হওয়ার পেছনেও ছিলো চূড়ান্ত প্রশাসনিক ব্যর্থতা।প্রশাসন এটা স্বীকার না করলেও চিত্র পরিষ্কার।”
। গন্ডাছড়ার ধ্বংসলীলার নিদর্শন।(ছবি – নিজস্ব)
ওসি পলাশ দত্ত ছুটি নিয়ে ভুল করেছেন। এবং ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকেও সংহার ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছেন এসডিপিও বাপি দেববর্মা। তাহলে শাস্তি স্বরূপ ওসিকে ক্লোজ করা হয়েছে।কিন্তু এসডিপিও সাহেব বহাল তবিয়তে কেন?
ডেস্ক রিপোর্টার, ৪আগস্ট।। গোটা গণ্ডাছড়া এখনো থমথমে।যদিও প্রশাসনের ভাষায় সব স্বাভাবিক। সীমান্ত মহকুমা ফিরে এসেছে নিজস্ব ছন্দে। আক্ষরিক অর্থে কি সত্যিই গণ্ডাছড়ার জনজীবন ছন্দে প্রবাহিত হচ্ছে?কিছুটা হলেও খটকা আছে। আতঙ্ক বিরাজ করছে উভয় সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে।আর অবিশ্বাসের বিষ বাষ্পে স্থানীয় লোকজনের শিরা- ধমনীর রক্ত সঞ্চালন থমকে গিয়েছে। একথা অবশ্যই মৌখিক ভাবে কেউ স্বীকার করবে না। এটা হলফ করে বলা যায় এখনো অজানা আতঙ্কে কাবু গণ্ডাছড়া।
।প্রশাসনের ভাষায় স্বাভাবিক ছন্দে গণ্ডাছড়া।(ছবি – নিজস্ব)।
প্রশাসনিক ভাবেও বেশ কিছু ভুল আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে স্থানীয় অসহায় মানুষগুলি।রাজ্যে বিভিন্ন প্রান্তে আগুনের স্ফুলিঙ্গ জ্বলে উঠার পর সর্ব প্রথম আঙুল উঠে প্রশাসনিক কর্তাদের দিকে।অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় প্রশাসনিক ব্যর্থতার কারণে আগুন জ্বলে উঠেছিলো দাউ দাউ করে। গত ১২ জুলাই গণ্ডাছড়া জতুগৃহ হওয়ার পেছনেও ছিলো চূড়ান্ত প্রশাসনিক ব্যর্থতা।প্রশাসন এটা স্বীকার না করলেও চিত্র পরিষ্কার। শাক দিয়ে যে মাছ ঢাকা অসম্ভব এটা বোধ হয় ধলাই জেলা প্রশাসন ভুলেই গিয়েছিলো।
পরমেশ্বর রিয়াংয়ের মারধরের ঘটনা়র তপ্ত গণ্ডাছড়া ছেড়ে ওসি কেন চলে এলেন? তাহলে পলাশ দত্ত কি আগাম কিছু আঁচ করেছিলেন?তাই নিজের খাকি উর্দিতে দাগ লাগার আগেই ছুটিতে চলে এসেছিলেন তিনি ? গণ্ডাছড়ার ঘটনার কয়েকদিন আগে অর্থাৎ পরমেশ্বর রিয়াংয়ের মারধরের পর থানার ওসি পলাশ দত্ত হঠাৎ ছুটিতে চলে যান। কেন?
।।খুন হওয়া পরমেশ্বর রিয়াং।।
আনুষ্ঠানিক ভাবে ওসি পলাশ দত্ত নিশ্চয় দপ্তরকে তার ছুটির কারণ জানিয়েছেন।তবে পরমেশ্বর রিয়াংয়ের মারধরের ঘটনা়র তপ্ত গণ্ডাছড়া ছেড়ে ওসি কেন চলে এলেন? তাহলে পলাশ দত্ত কি আগাম কিছু আঁচ করেছিলেন?তাই নিজের খাকি উর্দিতে দাগ লাগার আগেই ছুটিতে চলে এসেছিলেন তিনি ? আবার ১২ জুলাইয়ের ঘটনার পর ওসি পলাশ দত্ত তার কর্মস্থল গণ্ডাছড়া থানায় যোগ দিয়েছিলেন।কিন্তু দপ্তর তাকে রাখে নি। থানা থেকে ক্লোজ করে নিয়ে আসে। ধরে নেওয়া যাক পলাশ দত্তের ব্যর্থতার জন্য তাকে ক্লোজ করেছে দপ্তর।
।।বিজ্ঞাপন।।
অভিশপ্ত ১২ জুলাই রাতের ঘটনা ঠেকাতে ব্যর্থ গণ্ডাছড়ার মহকুমা পুলিশ আধিকারিক বাপি দেববর্মা। অভিযোগ স্থানীয় লোকজনের।
অভিশপ্ত ১২ জুলাই রাতের ঘটনা ঠেকাতে ব্যর্থ গণ্ডাছড়ার মহকুমা পুলিশ আধিকারিক বাপি দেববর্মা। অভিযোগ স্থানীয় লোকজনের। পুলিশের সামনেই অগ্নিসংযোগ,ভাঙচুর,লুটপাট হয়েছিল।কিন্তু এসডিপিও – র নেতৃত্বাধীন পুলিশ কিছুই করতে পারেনি।তবে পুরো ধংস লীলা নাকি উপভোগ করেছেন। দাবী প্রত্যক্ষদর্শীদের।
বাপি দেববর্মা (এসডিপিও,গন্ডাছড়া)
তাহলে বলা যায়, ওসি পলাশ দত্ত ছুটি নিয়ে ভুল করেছেন। এবং ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকেও সংহার ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছেন এসডিপিও বাপি দেববর্মা। তাহলে শাস্তি স্বরূপ ওসিকে ক্লোজ করা হয়েছে।কিন্তু এসডিপিও সাহেব বহাল তবিয়তে কেন? তাকেও ক্লোজ করা দরকার ছিলো। বা ব্যর্থতার জন্য সাময়িক বরখাস্ত করতে পারতো স্বরাষ্ট্র দপ্তর।রাজ্যে এরকম দৃষ্টান্ত বহু রয়েছে।
কোনো অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির পর ওসি – এসডিপিওকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে তাদের কর্মস্থল থেকে। গন্ডাছড়ার ঘটনার ক্ষেত্রে ওসি পলাশ দত্তকে শাস্তির যুপ কাষ্ঠে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এসডিপিও – র ক্ষেত্রে নীরব কেন আরক্ষা প্রশাসন? তাহলে কি প্রশাসনের এক চোখে তেল,অপর চোখে ঘী? প্রশ্ন তুলছেন সাধারণ মানুষ। আপাতত নয়তো কুলুঙ্গীতে তোলা থাক ওসি – এসডিপিও’ র কথা।
ঘটনার দিন বিকাল নাগাদ তারা আশঙ্কার কথা জানিয়েছিল রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা ডিআইবি’কে। গণ্ডাছড়াতে ডিআইবি’র দায়িত্ব প্রাপ্ত কনস্টেবল নন্দন পালকে বার বার ওয়াকিবহাল করা হয়েছে।
।।গন্ডাছড়া মহকুমা শাসক চন্দ্র জয় রিয়াং।।
তাদের পরেই আসছে খোদ গণ্ডাছড়ার মহকুমা শাসক চন্দ্র জয় রিয়াংয়ের কথা। ঘটনার দুপুরে মহকুমা প্রশাসন মাইকিং করে গোটা গণ্ডাছড়াতে ১৬৩ ধারা জারি করেছিলো। অর্থাৎ নিশ্চিত ভাবে বলা যায়, প্রশাসন আশঙ্কা করেছিল বড় ধরনের কোনও ঘটনার। এবং এটাই বাস্তব হয়েছে। তাহলে প্রশ্ন উঠে মহকুমা প্রশাসন কেন সব জেনে বুঝেও পর্যাপ্ত পরিমাণ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেনি? তার দায় ভার বর্তাবে না মহকুমা শাসক চন্দ্র জয় রিয়াংয়ের উপর? নিঃসন্দেহে , গণ্ডাছড়ার ঘটনার পেছনে মহকুমা প্রশাসনের বড় ব্যর্থতা রয়েছে। তারপরও প্রশাসন কেন চন্দ্র জয় রিয়াংয়ের বিরুদ্ধে ব্যর্থতার জন্য কোনো ব্যবস্থা নেয় নি? কেন – ই মহকুমা শাসক চন্দ্র জয় রিয়াংকে গণ্ডাছড়াতে বহাল তবিয়তে রেখে দেওয়া হয়েছে? প্রশ্ন আমজনতার।
।জতুগৃহে গো – মাতার নিথর দেহ।(ছবি – নিজস্ব)।
ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনের কথায়, ঘটনার দিন বিকাল নাগাদ তারা আশঙ্কার কথা জানিয়েছিল রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা ডিআইবি’কে। গণ্ডাছড়াতে ডিআইবি’র দায়িত্ব প্রাপ্ত কনস্টেবল নন্দন পালকে বার বার ওয়াকিবহাল করা হয়েছে। স্থানীয় লোকজনের বক্তব্য, কনস্টেবল নন্দন পাল বারবার তাদেরকে আশ্বস্ত করেছে কিছুই হবে না। নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে অটোসাটো। গোয়েন্দা কনস্টেবল নাকি এমনও বলেছেন, কয়েক গাড়ি অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন করা হবে গণ্ডাছড়ায়। কিন্তু তার দেওয়া সমস্ত গালগপ্প ফিকে হয়ে যায় কিছুক্ষণের মধ্যেই।
।।গোয়েন্দা কর্মী কনস্টেবল নন্দন পাল।।
গন্ডাছড়ার ক্ষতিগ্রস্থ লোকজনের দাবি, মহকুমার এসডিএম ও এসডিপিও পদে তারা দেখতে চাইছে আইএএস ও আইপিএস অফিসারদের।
গোয়েন্দা কর্মীর এই আশ্বাসের পর পরেই হায়নার দল বাঙালি মহল্লায় ঝাঁপিয়ে পড়ে শিকারের উদ্দেশ্যে। কিন্তু গোয়েন্দা কনস্টেবল নন্দন এখনো আছেন গণ্ডাছড়াতে। স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে পাওয়া প্রাপ্ত তথ্য বলছে প্রশাসন সতর্ক হলেই ঠেকানো যেতো সাম্প্রদায়িক সংহার। কেবল মাত্র তাদের ব্যর্থতার কারণেই জতুগৃহে আটকে গিয়েছিলো অসহায় বাঙালি সম্প্রদায়ের মানুষ।
।অসহায় মানুষগুলির দিন কাটছে শরণার্থী ক্যাম্পে।
গন্ডাছড়ার মানুষ এখন ভরসা করতে পারছেন না এস ডি পি ও বাপি দেববর্মা ও মহকুমা শাসক চন্দ্র জয় রিয়াংয়ের উপর। তাদের আস্থা নেই গোয়েন্দা কর্মী নন্দন পালের উপর। গন্ডাছড়ার ক্ষতিগ্রস্থ লোকজনের দাবি, মহকুমার এসডিএম ও এসডিপিও পদে তারা দেখতে চাইছে আইএএস ও আইপিএস অফিসারদের। টিসিএস – টিপিএস অফিসারদের উপর তাদের বিন্দু মাত্র বিশ্বাস নেই।