স্বাধীন ভারতে সংসদে বঙ্কিমচন্দ্রের বন্দেমাতরম ধ্বনি ও নেতাজীর জয় হিন্দ ধ্বনি দেওয়ার রেওয়াজ ছিল দীর্ঘ দশক ধরে। যে সরকার বঙ্কিমচন্দ্রের বন্দেমাতরম গানটির বর্ষব্যাপী অনুষ্ঠানের কর্মসূচি নিয়েছে অথচ আবার এই বিজেপি সরকারই সংবিধান দিবসের প্রাক্কালে শীতকালীন অধিবেশন থেকে এই ধ্বনি দেওয়া যাবে না বলে ফতোয়া জারি করেছেন।
আগরতলা,২৯ নভেম্বর।।
বন্দেমাতরম ও জয় হিন্দ ধ্বনি সংসদে নিষিদ্ধ করায় আমরা বাঙালী দল তীব্র বিরোধিতা করেছে।একের পর এক বাঙালী বিদ্বেষী মনোভাবের মধ্যে দিয়ে হিন্দুত্ববাদী সরকারের বাঙালী জাতিকে যে তারা সহ্য করতে পারে না তা প্রমাণ হচ্ছে ধীরে ধীরে। হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকারের বাঙালী বিদ্বেষী মনোভাব আবারও জনসমক্ষে প্রকাশ করলো সংবিধান দিবস পালনের প্রাক্কালে।যে বিজিপি সরকার পশ্চিম বঙ্গের ক্ষমতা দখলের লক্ষ্যে ঘটা করে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বন্দেমাতরম গানটির সার্ধশত বর্ষ উদযাপন উপলক্ষে বর্ষব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাতে ঢাকঢোল পিটিয়ে। যে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় এসে বাঙালীর মন জয় করার জন্য নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর মৃত্যু রহস্য ও ফাইল গুলো জনসমক্ষে প্রকাশ করার অঙ্গীকার করেছিলেন।যেই দল বলে শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি এই দলের জন্মদাতা বলে বাংলার মানুষের মন কেড়ে নেয়। এই দলই হিন্দুত্বের দোহাই দিয়ে ধীরে ধীরে বাঙালী জাতিসত্ত্বার ইতিহাস ও মনীষীদের ইতিহাস মুছে দিতে চাইছে তা ভাবা যায় না। স্বাধীন ভারতে সংসদে বঙ্কিমচন্দ্রের বন্দেমাতরম ধ্বনি ও নেতাজীর জয় হিন্দ ধ্বনি দেওয়ার রেওয়াজ ছিল দীর্ঘ দশক ধরে। যে সরকার বঙ্কিমচন্দ্রের বন্দেমাতরম গানটির বর্ষব্যাপী অনুষ্ঠানের কর্মসূচি নিয়েছে অথচ আবার এই বিজেপি সরকারই সংবিধান দিবসের প্রাক্কালে শীতকালীন অধিবেশন থেকে এই ধ্বনি দেওয়া যাবে না বলে ফতোয়া জারি করেছেন। বিশেষ বুলেটিন প্রকাশ করে রাজ্যসভার সচিবালয় থেকে জানানো হয়েছে এখন থেকে সংসদে এই দুটি শ্লোগান নিষিদ্ধ করা হয়েছে এই কারণে এই ধ্বনি গুলো নাকি শালীনতা বিরুদ্ধ তাই এখন থেকে এই ধরনের ধ্বনি দেওয়া যাবে না। পরাধীন ভারতবর্ষকে স্বাধীন করার জন্য যে বিপ্লবীরা হাসিমুখে বন্দেমাতরম ধ্বনি দিতে দিতে হাজার হাজার দেশপ্রেমিক নিজের জীবন উৎসর্গ করেছে ভারত মায়ের মুক্তির জন্য।

নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর জয় হিন্দ শ্লোগানে হাজার হাজার মানুষ ভারতবর্ষকে অত্যাচারী ব্রিটিশের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করার জন্য নেতাজীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে আজাদ হিন্দ ফৌজে অংশ গ্ৰহণ করে ছিলেন দেশ মাতৃকাকে মুক্ত করার জন্য।আর তাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে ও হাজার বাঙালী বিপ্লবীদের আত্মাহুতির কারণেই এই দেশ থেকে ইংরেজ শাসক চলে যেতে বাধ্য হয়েছিল।আর এস এস, কমিউনিস্ট, হিন্দু মহাসভা, মুসলিম লীগ বা নরমপন্থী কংগ্রেস নেতাদের আন্দোলনের কারণে ইংরেজরা এই দেশ ছাড়েনি। একমাত্র নেতাজীর ভয়ে ইংরেজরা এই দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়ে ছিলেন।আর এই সকল মেকী দেশ দরদী দল গুলো তখন নেতাজীর বিরুদ্ধাচরণ করে ইংরেজদের লেজুড়বৃত্তি করেছে। আর তারাই স্বাধীন ভারতে দীর্ঘ দশক ধরে এই দেশের শাসন ক্ষমতা দখল করেছে। আর তাই এই সকল দল গুলো নেতাজীর বংশধরদের ইতিহাস মুছে ফেলতে একের পর এক ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে বাঙালীর প্রতি।

আসলে বর্তমান সরকারের মধ্য প্রদেশের এক সাংসদ কিছু দিন আগে রাজা রামমোহন রায় কে ব্রিটিশদের দালাল ও ভূয়ো সমাজ সংস্কারক বলে মন্তব্য করে নিজেদের বাঙালী বিদ্বেষী মনোভাবের পরিচয়ের পাশাপাশি বাঙালী জাতির প্রতি তুচ্ছতাচ্ছিল্য ও ঘৃণ্য রাজনীতির বহিঃপ্রকাশ করেছে।শুধু তাই নয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা জাতীয় সঙ্গীত গানটিকেও বাদ দেওয়ার জন্য চেষ্টা করছে। অসমে আমার সোনার বাংলা গান গাওয়ার জন্য রাষ্ট্রদ্রোহী হিসেবে চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।

উত্তরপ্রদেশের পাঠ্যপুস্তক থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা কবিতা উপন্যাস বাদ দিয়ে দিয়েছে। এখানেই শেষ নয় কিছু দিন আগে বিজেপির আরেক সাংসদ বলেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নাকি ইংরেজদের খুশি করতে অর্থাৎ পঞ্চম জর্জ কে খুশি করতে জনগণ মন গানটি লিখেছিলেন। এই ভাবে বিজেপি নেতাদের একের পর এক বাঙালী মনীষীদের প্রতি ও বাঙালী জাতির প্রতি ঘৃণ্য মনোভাব উগরে দিচ্ছে।

