ডেস্ক রিপোর্টার, ১৩সেপ্টেম্বর।।
          টুকরো হচ্ছে হিমন্ত  বিশ্ব শর্মার অসম।পৃথক রাজ্য হবে বরাক ভ্যালি!অসমের বাঙালিরা হয়েছে এক জোট।বরাক ভ্যালি পৃথক হলে আপত্তি নেই সরকারের।বলেছেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা।বরাকের বাঙালিরা পাচ্ছে না যোগ্য সন্মান।তাই তারা তুলেছেন পৃথক রাজ্যের দাবি।
              উত্তর – পূর্বাঞ্চলের পৃথক রাজ্য অসম। অসমের বৃহত্তর অঞ্চল জুড়ে আছে বরাক ভ্যালি। বরাক নদীর বুক চিড়ে গড়ে উঠেছে এই অঞ্চলের জনবসতি। বরাকে বসবাসকারী লোকজনের সিংহভাগ বাঙালি। বরাক ভ্যালির মূল শহর শিলচর। ১৮৮৫ সালে শিলচর শহরের জন্ম। বাঙালি অধ্যুষিত এই শহরটি অসমের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। গুয়াহাটির পরেই শিলচর। আজ এই ঐতিহাসিক শহরে বসবাসকারী বাঙালি সম্প্রদায়ের লোকজন বঞ্চিত তাদের অধিকার থেকে।


          
এই অঞ্চলের বাঙালি ও বাংলা ভাষাকে পিষে মারার জন্য একশ্রেণীর ধান্দাবাজ রাজনীতিকরা সক্রিয় কালে কালেই। তাই বরাকের বাঙালিরও হয়েছে জোটবদ্ধ ।তারা এবার দাবি করেছে পৃথক বরাক রাজ্য। অর্থাৎ বরাকের লোকজন অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে অসম থেকে পৃথক হতে চাইছে। পৃথক রাজ্যের দাবিতে বিভিন্ন বাঙালি সংগঠন বরাক ভ্যালিতে চালিয়ে যাচ্ছে তাদের ধারাবাহিক আন্দোলন।


বরাক ভ্যালি সহ গোটা অসমে বাঙালিদের শোষণ ও দমন পীড়ন নিয়ে বারবার সরব হচ্ছে বরাক ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট বা বিডিএফ।
বরাক ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের পক্ষ থেকে শিলচরে  সাংবাদিক বৈঠক করে, বরাক ভ্যালী সহ গোটা অসমের বাঙালি সম্প্রদায়ের দুঃখ, দুর্দশা ও বঞ্চনার দিনলিপি তুলে ধরে নেতৃত্ব।সংগঠনের মুখ্য আহবায়ক প্রদীপ দত্ত রায় ক্ষোভ প্রকাশ করে জানিয়েছেন, অসম সরকার বরাকের বাঙালিদের যোগ্য সন্মান দিতে পারছে না।

।।শিলচর রেল স্টেশন।।



বাঙালিদের বঞ্চিত করা হচ্ছে তাদের প্রাপ্য সুযোগ ,সুবিধা থেকে। অসম বিধানসভার  তথ্য তুলে ধরে প্রদীপ দত্ত রায় জানিয়েছেন, অসমের বিজেপি সরকার এখন পর্যন্ত এক লক্ষ ৮৬ চাকরি দিয়েছে। তার মধ্যে বাঙালি অধ্যুষিত  বরাকে চাকরি দেওয়া হয়েছে মাত্র ২১২টি। লন্ডন, অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশে বাংলাকে সহযোগী ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।কিন্তু অবাক করার মতো বিষয় হিমন্ত বিশ্ব শর্মা নেতৃত্বাধীন অসমের বিজেপি সরকার বাংলা ভাষাকে সহযোগী ভাষা হিসেবে এখনো স্বীকৃতি দেয় নি।


অসমে বাঙ্গালীদের প্রতি অবিচারের এক দৃষ্টান্ত তুলে প্রদীপ দত্তরায় বলেছেন, ১৯৬১ সালের ১৯ মে বরাকে হয়েছিল ভাষা আন্দোলন। নারী পুরুষ অনেকই হয়েছিলেন শহীদ। এই ভাষা শহীদদের নামে শিলচর রেলস্টেশনের নামাকরণ করার অনুমতি দিচ্ছে না অসম সরকার। অথচ অনেক আগেই কেন্দ্রীয় সরকার ও রেল মন্ত্রক ভাষা শহীদদের নামে রেল স্টেশনের নামাকরণ করার অনুমতি দিয়েছে।

।।প্রদীপ দত্ত রায়।।

যেহেতু রাজ্য সরকার রাজি হচ্ছে না, তাই শহীদদের নামে স্টেশনের নামকরণ করা যাচ্ছে না। অন্যদিকে বিদেশী তথা বাঙালি বিতরণের নামে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় মৃত্যু হওয়া  লোকদের শহীদের স্বীকৃতি দিয়েছে অসম সরকার। এবং তাদের দেওয়া হয়েছে আর্থিক সাহায্য সহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা। এটা কি বাঙালিদের সঙ্গে অবিচার না? প্রশ্ন বরাক ভ্যালির আমজনতার।


বরাক ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের মুখ্য আহবায়ক প্রদীপ দত্তরায়ের কথায়, সম্প্রতি অসম সরকার অসম সাহিত্য সভাকে পাঁচ কোটি টাকা দিয়েছে। একইভাবে ডিমাসা, বরো সাহিত্যকেও আর্থিক অনুদান দিয়েছে অসাম সরকার। দুর্ভাগ্যের হলেও সত্যি, বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলনকে একটি কানা কড়িও দেয় নি হেমন্ত বিশ্ব শর্মার বিজেপি সরকার। প্রদীপবাবু প্রশ্ন তুলেছেন, রাজ্য সরকার বিভিন্ন সম্প্রদায়ের উৎসব অনুষ্ঠানে অনুদান দিয়ে থাকে। কিন্তু বাঙ্গালীদের সর্ববৃহৎ উৎসব দুর্গাপূজাতে বরাকের পূজা কমিটি গুলিকে কোন আর্থিক অনুদান দেয়নি অসম সরকার।

।।ডিটেনশন ক্যাম্পে হিন্দু বাঙালিরা।।

আক্ষেপ করে তিনি বলেন, বিজেপি নেতৃত্ব বরাবর হাক ডাক দিয়ে বলে থাকেন, তারা মূলত কাজ করে হিন্দুদের স্বার্থে। কিন্তু কোথায়? অসমের ডিটেনশন ক্যাম্প গুলিতে এখনো বন্দী হিন্দু বাঙালিরা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কথা দিয়েছিলেন,  বিজেপি ক্ষমতায় এলে ডিটেনশন ক্যাম্প গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে। বরং বিজেপির জামানাতেই গোয়ালপাড়াতে এশিয়ার বৃহত্তর ডিটেনশন ক্যাম্প তৈরি করা হয়েছে। আর এই ক্যাম্পে থাকা সিংহ ভাগ লোকজন হিন্দু বাঙালি।বিডিএফের মুখ্য আহবায়ক প্রদীপ দত্ত রায় বলেন, বিজেপি বাঙালি হিন্দুদের প্রতি অবিচার করছে। তার প্রমাণ বরাক ভ্যালি।এই কারণেই বরাককে পৃথক রাজ্য করার দাবি তুলছে বাঙালিরা।


প্রদীপ দত্ত রায় আক্ষেপের সুরে বলেন, বরাক ভ্যালিতে ১৫ টি বিধানসভা কেন্দ্র ছিল।এখন তা কমিয়ে ১৩ টি করা হয়েছে। এখানেও বাঙ্গালীদের প্রতি করা হয়েছে অবিচার। স্বাভাবিক ভাবেই এই অঞ্চলের বাঙালিরা ১৩ আসন নিয়ে বিধানসভা নির্বাচন করবে না। তারা ৬০ আসন বিশিষ্ট পৃথক রাজ্যের বিধানসভা গঠন করবে ২০২৪ সালে।
 

।।অসম বিধানসভা ভবন।।

বরাক ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের নেতাদের কথায়, শিলচর অসমের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর হলেও তাতে নেই একটিও উড়ালপুল।অথচ গুয়াহাটিতে অসম সরকার ধাপে ধাপে বাইশটি উড়ালপুল তৈরি করেছে। ইচ্ছে করলে শিলচরেও উড়ালপুল তৈরি করতে পারে রাজ্য সরকার।কিন্তু এই অঞ্চলে বাঙ্গালীদের বসবাস বলেই  তৈরি হচ্ছে না উড়ালপুল। সব মিলিয়ে অসমে এক শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে বাঙালি সম্প্রদায়ের মানুষ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *