ডেস্ক রিপোর্টার,১৩মার্চ।।
আগরতলা রেল স্টেশনে মাথাচাড়া দিয়েছে “পার্সেল মাফিয়া” চক্র। তাদের দৌরাত্মে অতিষ্ট ব্যবসায়ীরা। পার্সেল মাফিয়াদের জিজিয়া করের আতঙ্কে ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা রেলে পণ্য আনতে সাহস করছে না।কেউ কেউ আনলেও পণ্যের পরিমান কমিয়ে দিয়েছে। শ্রমিকদের নাম করে পার্সেল মাফিয়ার লুটতরাজ শুরু করেছে গোটা স্টেশন চত্বরে। পুলিশ এবং রেলওয়ে কর্তপক্ষও মুখে কুলুপ এটে রেখেছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা পার্সেল মাফিয়াদের বাড়বাড়ন্ত নিয়ে রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেবের দ্বারস্থ হবে বলে জানা গেছে।
আগরতলা রেল স্টেশনে কান পাতলেই শোনা যায় পার্সেল মাফিয়াদের উপাখ্যান। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, রেলে আসা প্রতি কার্টনে শ্রমিকদের দশ টাকা করে দেওয়া হতো।রেলের পার্সেলের কামড়া থেকে নামানোর জন্য ব্যবসায়ীরা এই টাকা দিয়ে থাকতেন। রোজ প্রতিটি রেলে ৮/১০টি কামড়াতে পার্সেলে পণ্য আসে।স্বাভাবিক ভাবেই কার্টনের পরিমানও প্রচুর। প্রতি কার্টনে ১০টাকা লেবার চার্জ।এই নিয়মেই চলতো কাজ।দিনের শেষে প্রত্যেক শ্রমিক এক হাজার থেকে ১৫শ টাকা রোজগার করতো। কখনো ব্যবসায়ীরা খুশি হয়ে বাড়িয়েও দিতেন।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, গত কয়েকমাস ধরে এই সিস্টেমের ব্যাঘাত ঘটে। রেল স্টেশনে আগমন ঘটে “পার্সেল মাফিয়াদের”। “পার্সেল মাফিয়া” সরদার সিদ্ধি আশ্রম এলাকার অভিজিৎ নম:। তার নেতৃত্বে এক দঙ্গল যুবক দখল নেয় রেল স্টেশন। তারা একটি ভুয়া শ্রমিক সংগঠন তৈরি করে।তদের দাবি, রেল স্টেশনের শ্রমিকরা এই সংগঠনের অন্তর্ভুক্ত।এখন থেকে ব্যবসায়ীরা সরাসরি শ্রমিকদের কোনো টাকা দেবে না।টাকা দিতে হবে তাদেরকে। গোটা স্টেশন চত্বরে এই হুলিয়া জারি করে পার্সেল মাফিয়ারা। মাফিয়াদের রক্তচক্ষুতে শ্রমিকরাও ভরকে যায়।শ্রমিকদের জানিয়ে দেওয়া হয় সংগঠনে নাম না নথিভুক্ত করলে স্টেশন থেকে বের করে দেওয়া হবে। মাফিয়ার সিস্টেম বদল করে লাগু করে নতুন আইন। তারা জানিয়ে দেয়, ব্যবসায়ীদের প্রতি কার্টনের ৭০টাকা করে লেবার চার্জ দিতে হবে। এর চেয়ে কম দিলে শ্রমিকরা কার্টন ধরবে না।এবং রেলে আসা কোনো কার্টন চুরি বা না পাওয়া গেলে তাদের কোনো দায় ভার থাকবে না। অর্থাৎ ঘুরিয়ে ব্যবসায়ীদের হুমকি দিয়ে দেয় পার্সেল মাফিয়ারা।
বাধ্য হয়ে ব্যবসায়ীরা এখন প্রতি কার্টনে ৭০টাকা করে দিয়ে থাকে শুরু রেল থেকে নামানোর জন্য।একজন ব্যবসায়ীর দেড়শ-দুইশ কার্টন বা বস্তা আসে রেলে।তাহলে টাকার পরিমান কত হবে? এটা সহজেই অনুমান করা যায়। প্রতিদিন প্লাস্টিক, কাজগ সংক্রান্ত জিনিস আসে।এগুলি খুব হালকা।তাদের প্যাকেটের পরিমান বেশি হয়। কিন্তু জিনিস কম প্যাকেটের পরিমান বেশি হওয়াতে তাদেরকেও প্রচুর টাকা দিতে হয় রেল থেকে প্যাকেট নামানোর ক্ষেত্রে।স্বাভাবিক ভাবেই চাপ বাড়ছে ব্যবসায়ীদের।বড় ব্যবসায়ী থেকে মাঝারি ছোট ব্যবসায়ী প্রত্যেকেই স্টেশনের পার্সেল মাফিয়াদের এই কার্যকলাপে বিতশ্রদ্ধ।
অভিযোগ, পার্সেল মাফিয়া চক্রের মাধ্যমে রেলে করে রাজ্যে প্রবেশ করছে মাদক দ্রব্য।একই ভাবে রাজ্যে থেকে গাজা পাচার হচ্ছে বহিঃ রাজ্যে।সম্প্রতি রেলের পার্সেলে রাজ্যে আসে প্রচুর পরিমান ফেন্সিডিল।এক অটো চালক দেখে ফেলে ফেন্সিডিলের কার্টন।সে সঙ্গে সঙ্গে কাস্টমসকে জানিয়ে দেয় বিষয়টি। খবর পেয়ে কাস্টমস আধিকারিকরা ছুটে আসে ঘটনাস্থলে।এবং ফেনসিডিল উদ্ধার করে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় পার্সেল মাফিয়াদের সঙ্গে কাস্টমস আধিকারিকদের গোপন সমঝোতা রয়েছে।এর সুবাদে কাস্টমস তাদের সোর্সের নাম বলে দেয় পার্সেল মাফিয়াদের কাছে।এরপরই অটো চালককে আটক করে স্টেশন চত্বরে প্রকাশ্যে মারধর করে। এই ঘটনা তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ কিরে পুলিশ।কিন্তু তারা পার্সেল মাফিয়াদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। অটো চালককে স্টেশন থেকে বের করে দেওয়া হয়। পার্সেল মাফিয়া অভিজিৎ নম:’র লোকজন জানিয়ে দেয় অটো চালককে স্টেশনে দেখলে তাকে খুন করে ফেলবে।মাফিয়াদের ভয়ে অটো চালক এখন আর স্টেশনে আসার সাহস করছে না।
এক সময় জিরানিয়া রেল স্টেশনেও একই অবস্থা ছিলো।মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে সমস্যা নিরসন হয়েছিলো।বন্ধ হয়েছিলো মাফিয়ারাজ।তাই ব্যবসায়ীরা আগরতলা রেল স্টেশনেও চাইছে মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ।
