* অভিজিৎ ঘোষ*
————————-

“তৃণমূল কংগ্রেস”—এই মুহূর্তে রাজ্য রাজনীতিতে ফ্যাক্টর হয়ে উঠেছে।শাসক দল বিজেপি ও বিরোধী দল সিপিআইএম’র ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলে তৃতীয় বিকল্পের স্বপ্ন দেখছে তৃণমূল কংগ্রেস। বঙ্গ ভোটে জয়ের পর ত্রিপুরাতে জোয়ার এসেছে তৃণমূলের।এই যেন মরা গাঙে জল আসার মতো অবস্থা।আগে তৃণমূলের অস্তিত্ব থাকলেও ঘাসফুলের “সালোকসংশ্লেষে’ কোথায়ও যেন একটা ত্রুটি ছিলো।তাই উপযুক্ত জল-আলো-বাতাসের অভাবে দেখতে জীর্ণকায় ছিলো ঘাসফুল।
এখন পরিস্থিতি অনেকটা পাল্টেছে। রাজ্য রাজনীতিতে অঙ্কুরোগমের জন্য পেয়েছে অনুকূল পরিবেশ। স্বাভাবিক ভাবেই অনুকূল পরিবেশে ঘাসফুল বাড়তে শুরু করেছে নিজস্ব গতিতে। অল্প কিছু দিনেই হয়ে উঠছে রিষ্টপুস্ট।রাজনীতির লড়াইয়ের ময়দানে এই মুহূর্তের “বট-চামল-গর্জনের মতো বৃক্ষকে কতটা বেগ দিতে পারবে ঘাসফুল? তা এখনই বলা যাচ্ছে না।তবে এটা ঠিক ভোটের বাজারের শিরা-ধমনীর রক্ত সঞ্চালনের আচ পেয়ে গেছে ঘাসফুল। একথা হলফ করে বলছেন রাজ্য রাজনীতির বিশারাদরা।
রাজ্যে সংখ্যালঘু (মুসলিম) ভোট তুলনায় কম থাকলেও তা হেলাফেলার নয়। বেশ কিছু বিধানসভা কেন্দ্রে তারা “ডিসাইডিং ফ্যাক্টর।”—–মনে করছে রাজনীতিকরা। সমস্ত অংশের ভোটারদের সঙ্গে সংখ্যালঘু অংশের ভোট নিজেদের মুঠোতে আনতে রণ কৌশল সাজিয়েছে তৃণমূল।পশ্চিম বাংলাতেও সংখ্যালঘু অংশের ভোট মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বরাবর অক্সিজেন দিয়ে থাকে।তার প্রভাব পড়বে ত্রিপুরাতেও।সংখ্যালঘুরা ঝুঁকতে শুরু করেছে তৃণমূলের দিকে।

তৃণমূল নেতৃত্বের বক্তব্য,”এই মুহূর্তে ত্রিপুরাকে টার্গেট করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।” ২০২৩-র বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখেই রণ কৌশল করছে তৃণমূল।তার জন্য রাজ্য জুড়ে চলছে কাজ।প্রাথমিক ভাবে তৃণমূল কংগ্রেস রাজ্যের মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলগুলিকে টার্গেট করছে।রাজ্যের জনসংখ্যার ৮-১০শতাংশ মানুষ মুসলিম সম্প্রদায়ের। হিন্দু ৮৩ শতাংশ। খ্রিস্টান সাম্প্রদায়ের মানুষ আছে ৪.৩ শতাংশ এবং বৌদ্ধ ধর্মের লোকজন রয়েছে ৩.৪ শতাংশ। সংখ্যালঘুদের এই পরিসংখ্যান ভোট ময়দানে একটা “ফ্যাক্টর” হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
প্রদেশ তৃণমূল নেতৃত্ব এই মুহূর্তে রাজ্যের সংখ্যালঘু ভোটারদের কাছে পৌছার চেষ্টা করছে। বাংলার বিধানসভা নির্বাচনে পর ত্রিপুরাতে যারা তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান করেছে তাদের বড় অংশ সংখ্যালঘু। সংখ্যালঘুরা বারবার বিজেপি বিরোধী। বিজেপিও তাদের ভোটের প্রতি খুব বেশি ভরসা রাখতে পারেনি। সম্প্রতি অবশ্যই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব বলেছেন,”ত্রিপুরাতে সংখ্যালঘু বলতে কিছু নেই।সবাই ভারতীয় নাগরিক।ত্রিপুরার বাসিন্দা।” রাজনীতিকরা বলছেন, তৃণমূলের চোরাস্রোত কোন দিকে বইছে তা বিলক্ষণ আচ করতে পেরেছেন মুখ্যমন্ত্রী।

রাজনীতির বিশারদদের ভাষায়, এতদিন রাজ্যের সংখ্যালঘু ভোট ব্যাংক ছিলো কংগ্রেস ও সিপিআইএম’র দখলে।।এখন তৃণমূল কংগ্রেস সংখ্যালঘু ভোট ব্যাংক নিজেদের কব্জায় নিতে সাজিয়েছে ব্লু প্রিন্ট।
তথ্য দিয়ে রাজনীতিকরা বলছেন,
সিপাহিজলা জেলার বিশালগড়,কমলাসাগর
বক্সনগর, নলছড়,সোনামুড়া ও ধনপুর এই ছয়টি বিধানসভা কেন্দ্রে সংখ্যালঘুরা ভোট জয় পরাজয়ের ব্যবধ্যান গড়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।উত্তর ও উনকোটি’র কৈলাসহর,কুর্তি-কদমতলা যুবরাজনগর ও বাগবাসা কেন্দ্রে একই পরিস্থিতি। দক্ষিণ জেলার রাজনগর, রাজধানীর রামনগর ও বাধারঘাট বিধানসভা কেন্দ্রগুলিতেও সংখ্যালঘু ভোট ম্যাজিক দেখানোর জন্য যথেষ্ট। তথ্য বলছে,রাজ্যের ১২-১৩টি আসনে সংখ্যালঘু ভোটাররা নির্বাচনে জয়-পরাজয়ের ব্যবধান গড়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে।
২০১৮-র বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির ‘ফ্লো’ ছিলো।মোদি-বিপ্লব দেবের সাইক্লোনে তছনছ হয়ে গিয়েছিলো বামেরা।কিন্তু তখনও বিজেপির পাশে দাঁড়ায়নি সংখ্যালঘুরা।তার প্রমান পাওয়া গেছে হাতেনাতে ।
সিপাহিজলার বিশালগড়,কামলাসাগর,বক্সনগর, সোনামুড়া ও ধনপুরে পরাজিত হয়েছেন বিজেপি প্রার্থীরা। উত্তর জেলার কুর্তি-কদমতলা, যুবরাজনগর উনকোটির কৈলাশহর, চন্ডিপুর।দক্ষিণের রাজনগর।এই দশটি আসনে বিজেপি সুবিধা করতে পারেনি।বিজেপি-আইপিএফটি সরকারের বিরুদ্ধে বর্তমানে রাজ্যে একটা প্রতিষ্ঠান বিরোধী হওয়া যে বইছে তা বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না পদ্ম শিবিরের থিঙ্ক-ট্যাঙ্কদের।

পাহাড় রয়েছে প্রদ্যুতের গ্রিপে।পেছন থেকে বিজেপি বিরোধী শিবিরকে উৎসাহিত করছে বিরোধী দল সিপিআইএম।সব মিলিয়ে রাজ্যে বিজেপি বিরোধী হাওয়া বইলে তা প্রতিরোধ করা কিছুটা হলেই কঠিন হবে শাসক দলের পক্ষে।এমন ইঙ্গিত করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।তারপরও এখন পর্যন্ত বিজেপির পক্ষেই ৭৫ শতাংশ অনুকূল পরিস্থিতি বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশারদরা।
সাম্প্রতিক কালে ঘটে যাওয়া ঘটনার প্রভাব যে জনমনে বিজেপি’র বিরুদ্ধে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।তারপরও রাজ্য রাজনীতিতে “বটবৃক্ষ” বিজেপিই। কিন্তু ভুললে চলবে না উই পোকা যে কোনো সময় বট বৃক্ষকেও ধরাশায়ী করতে পারে। এই চিরন্তন সত্য মাথায় রাখতে হবে বিজেপিকে।অন্যথায় ঢাকা পড়ে যেতে পারে বিপদের ঘোর কালো মেঘে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *