ডেস্ক রিপোর্টার,১১ মে।।
*সাল – ২০১৩
*তারিখ: ৯নভেম্বর
*সময়: রাত ১০টা ৩০মিনিট
*ঘটনাস্থল: শহরের দূর্গা চৌমুহনী,
*অপরাধের ধরন: গ্যাং ওয়ার
*প্রেক্ষাপট: আগরতলা পুর নিগমের নিগোসিয়েশন বাণিজ্য
* খুনের কাজে ব্যবহৃত অস্ত্র: পিস্তল
*খুন হওয়া ব্যক্তি: দিলীপ ঘোষ
*বাসিন্দা: রামনগর ৯ নম্বর রোড।
*থানাঃ পশ্চিম আগরতলা
*মামলা নম্বর: ৪৪৬/১৩
*ধারা: ১২০(বি), ৩০২, ৩৪ আইপিসি ও ২৭ অস্ত্র আইন।
*রাজ্যের ক্ষমতায় : বামফ্রন্ট সরকার
*মুখ্যমন্ত্রী: মানিক সরকার

*সাল – ২০২৪
*তারিখ: ৩০এপ্রিল
*সময়: রাত ৮টা
*ঘটনাস্থল: শহর সংলগ্ন শাল বাগানের হাতিপাড়া
*অপরাধের ধরন: গ্যাং ওয়ার
প্রেক্ষাপট: ঊষা বাজার সিপিডব্লিউডি- র নিগোসিয়েশন বাণিজ্য । *খুনের কাজে ব্যবহৃত অস্ত্র: পিস্তল
*খুন হওয়া ব্যক্তি: দূর্গা প্রসন্ন দেব ওরফে ভিকি
*বাসিন্দা: ঊষা বাজার,
*থানাঃ এয়ারপোর্ট
*মামলা নম্বর: ৩৭/২৪
*ধারা: ১২০(বি), ৩০২, আইপিসি ও ২৭ অস্ত্র আইন।
*রাজ্যের ক্ষমতায় : বিজেপি লিড সরকার
*মুখ্যমন্ত্রী: ডা: মানিক সাহা

বাম জামানার সর্বশেষ গ্যাং ওয়ারের ঘটনায় প্রাণ ঝড়ে ছিলো দিলীপ ঘোষের।দিলীপ হত্যাকাণ্ডের পর তদানীন্তন বাম সরকারের পুলিশ ধারাবাহিক ভাবে একে একে অভিযুক্তদের জালে তুলেছিলো। কিন্তু দিলীপ খুনের মাষ্টার মাইন্ড মুজিবুর রহমান, বলরাম রাজভর, দীপক মিয়া, আবু সৈয়দরা ছিলো পুলিশের ধরাছোঁয়ার বাইরে। গা ঢাকা দিয়েছিল বাংলাদেশে। অনুসন্ধানকারী পুলিশ কোনো ভাবেই অভিযুক্তদের জালে তুলতে পারছিলো না। পুলিশের এই ব্যর্থতার দাগ লাগতে শুরু করেছিলো খোদ তৎকালীন বাম সরকারের মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মানিক সরকারের ধবধবে বক সাদা পাঞ্জাবিতে। কালি ছিটিয়ে পড়েছিলো মেলারমাঠের লাল বাড়িতে। তখন তদন্তকারী পুলিশের দুইটি সিদ্ধান্ত ব্যাকফুটে ঠেলে দিয়েছিল দিলীপ ঘোষের খুনিদের। পুলিশ খুনীদের ভাতে মেরে ফেলার ব্লু প্রিন্ট রচনা করেছিলো। বাম পুলিশের এই সিদ্ধান্ত ছিলো নজির বিহীন। এবং রাজ্যের অপরাধ ও অপরাধী দমনের এক মাইলস্টোন।

দিলীপ ঘোষ হত্যাকাণ্ডের এক দশক পর রাজ্যে ফের গ্যাং ওয়ারের বলি দুর্গ প্রসন্ন দেব ওরফে ভিকি। ভিকির মূল হত্যাকারীদের পুলিশ এখনো টিকির নাগাল পায় নি। দিলীপ ঘোষ খুনের পর রাজ্যের অপরাধ ও অপরাধী দমনে মানিক সরকারের পুলিশের ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত কি নিতে পারবে হালের ডা: মানিক সাহার পুলিশ? অন্তত ক্লাব সম্পাদক দূর্গা প্রসন্ন- র হত্যাকারীদের কবর থেকে খুঁজে বের করতে। প্রশ্ন তুলছেন রাজ্যের আমজনতা।

তৎকালীন সময়ে দিলীপ ঘোষ হত্যা মামলার তদন্ত নিয়ে কি ভূমিকায় ছিলেন বাম মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার? পুলিশ মহলে গুঞ্জন, দিলীপ ঘোষের খুনিদের টুটি চেপে ধরতে রাজ্য পুলিশের তৎকালীন মহানির্দেশককে ডেকে এনে মানিক সরকার পরিষ্কার ভাবে জানিয়ে দিয়েছিলেন, ” দিলীপের হত্যাকারীদের যে কোনো মূল্যে গ্রেফতার করতেই হবে। নয়তো তাদেরকে ভাতে মারার ব্যবস্থা করতে।” তদানীন্তন বাম মুখ্যমন্ত্রীর মানিক সরকারের এই বক্তব্য শুনে পুলিশ তেল খাওয়া মেশিনের মতো কাজ করতে শুরু করেছিল।
*দিলীপ হত্যা মামলার তদন্তকারী পুলিশের প্রথম পদক্ষেপ ছিলো অভিযুক্তদের স্থাবর – অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোক করা।
*পুলিশের দ্বিতীয় পদক্ষেপ ছিলো অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ইন্টারন্যাশনাল পুলিশ বা ইন্টারপোলের কাছে রেড কর্নার নোটিশ জারি করা।
*পুলিশের তৃতীয় পদক্ষেপ অপরাধীদের কাস্টডি ট্রায়াল।

তৎকালীন বাম সরকারের পুলিশের এই তিনটি সিদ্ধান্তে কোমর ভেঙ্গে গিয়েছিল দিলীপ ঘোষের খুনিদের।পুলিশ অভিযুক্ত মুজিবুর রহমান,বলরাম রাজভর, দীপক মিয়া আবু সৈয়দদের স্থাবর – অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোক করার জন্য আদালতের কাছে আবেদন জানিয়েছিলো। অপরাধীদের আইনের পিঞ্জুরাতে আনতে আদালত পুলিশের আবেদন মঞ্জুর করে। এরপর ধারাবাহিক ভাবে দিলীপ ঘোষ হত্যাকারীদের স্থাবর – অস্থাবর সব সম্পত্তি ক্রোক করে পুলিশ অর্থাৎ পুলিশ দিলীপ ঘোষের খুনিদের অর্থনৈতিক ভাবে দুর্বল করে দিয়েছিলো। তাদের সমস্ত ব্যাংক একাউন্ট সিজ করে দিয়েছিলো। একই ভাবে সমস্ত জমি জমা।
সম্পত্তি ক্রোক করার পর দীপক মিয়া, আবু সৈয়দ সহ বাদবাকি অভিযুক্তরা পুলিশের গর্তে মাথা ঢুকিয়ে দিতে বাধ্য হয়।তারপরও নাগালের বাইরে ছিলো হত্যাকান্ডের মাষ্টার মাইন্ডদের অন্যতম মুজিবুর রহমান ও বলরাম রাজভর। শেষ পর্যন্ত তদন্তকারী পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড কর্নার নোটিশ বা এনসিআর জারি করেছিলো।
* যার মামলা নম্বর: A-4639/6-2014(মোশন)

এরপর মুজিবুর ও বলরামদের বাঁচার রাস্তা শেষ হয়ে যায়।তাদের পক্ষে বাংলাদেশে গা ঢাকা দিয়ে থাকা সম্ভব হয় নি। দুই অভিযুক্ত বাধ্য হয়ে ফিরে আসে রাজ্যে।এবং পুলিশের কাছে করতে হয় আত্মসমর্পণ।
দিলীপ ঘোষ খুনের দীর্ঘ এক দশক পর আবারও মনে করিয়ে দিয়েছে বাম জামানার পুলিশের সেই ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তের কথা। হালে গ্যাং ওয়ারের খুন খুন হওয়া দূর্গা প্রসন্ন- র মামলার তদন্তকারী অফিসাররা কি দিলীপ ঘোষ হত্যা মামলার তদন্তকে “মডেল” হিসাবে বেছে নেবেন? রাজ্যের বর্তমান বিজেপি লিড সরকারের মুখ্যমন্ত্রী ডা: মানিক সাহাও ভিকির খুনিদের গ্রেফতারের জন্য কড়া বার্তা দিয়েছেন। আস্থা রেখেছেন নিজের পুলিশের উপরও।

রাজ্যের অবসর প্রাপ্ত সিনিয়র পুলিশ আধিকারিকরা স্পষ্ট ভাবেই বলেছেন, তদন্তকারী পুলিশের উচিত প্রাথমিক ভাবে দূর্গা প্রসন্ন’র খুনিদের সমস্ত স্থাবর – অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোক করা এবং যদি খুনিরা বিদেশে অবস্থান করে থাকে,তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের কাছে রেড কর্নার নোটিশ জারি করা। আদালতে কাস্টডি ট্রায়ালের ব্যবস্থা করা।তাহলেই অভিযুক্তদের বোতল বন্দী করা সম্ভব। তারা নিজেরাই এসে পুলিশের কাছে ধরা দিতে বাধ্য হবে। আর তাহলেই বাম পুলিশের মতো সফল হবে রাম পুলিশও। পূর্বতন বাম মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের পুলিশ যা করতে পেরেছেন, বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী ডা: মানিক সাহার পুলিশেরও তা করতে বাধা কোথায়? মুখ্যমন্ত্রী তো পুলিশকে দিয়েই রেখেছেন ফ্রী হ্যান্ড।