ডেস্ক রিপোর্ট,২২জানুয়ারি ত্রিপুরা পূর্ণরাজ্য প্রাপ্তির ৫০তম বর্ষ রাজ্যব্যাপী যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা হয়েছে।শুক্রবার রাজ্যের মূল অনুষ্ঠানটি রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনের ১নং প্রেক্ষাগৃহে অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ত্রিপুরা পূর্ণরাজ্য দিবসের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে এক ভিডিও বার্তায় রাজ্যবাসীকে শুভেচ্ছা জানান। অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং কেন্দ্রীয় যোগাযোগ মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী দেবুসিন চৌহান উপস্থিত ছিলেন। রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে আয়োজিত ত্রিপুরা পূর্ণরাজ্য প্রাপ্তির ৫০তম বর্ষপূর্তির মূল অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব। উপস্থিত ছিলেন উপমুখ্যমন্ত্রী যীষ্ণু দেববর্মা সহ রাজ্য মন্ত্রিসভার অন্যান্য সদস্যগণ, মুখ্যসচিব কুমার অলক। অনুষ্ঠানে ত্রিপুরা পূর্ণরাজ্য প্রাপ্তির ৫০ বর্ষ পূর্তি উপলক্ষ্যে
ডাক টিকিট, ‘ইন্ডিয়া পারফিউম’- আগর উডের লোগো এবং লক্ষ্য ২০৪৭ ডকুমেন্টের প্রকাশ করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। পূর্ণরাজ্য দিবস উপলক্ষ্যে এই অনুষ্ঠানে পূর্ণরাজ্য দিবস সম্মাননা ২০২২ ও চিফ মিনিস্টার্স সিভিল সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়।

অনুষ্ঠানে ত্রিপুরা পূর্ণরাজ্য প্রাপ্তির ৫০তম বর্ষ উদযাপন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভিডিও বার্তায় রাজ্যবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, ত্রিপুরার ইতিহাস সবসময়ই গরিমায় পরিপূর্ণ। মাণিক্য রাজ থেকে শুরু করে আজকে পর্যন্ত ত্রিপুরা একটি স্বশক্ত রাজ্য হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। রাজ্যের জনজাতি থেকে শুরু করে সব অংশের জনগণ ত্রিপুরার উন্নয়নে একজোট হয়ে কাজ করছেন। ত্রিপুরা প্রতিটি চ্যালেঞ্জকে মা ত্রিপুরাসুন্দরীর আশীর্বাদে সাহসিকতার সঙ্গে মোকাবিলা করছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ত্রিপুরা বর্তমানে উন্নয়নের দিশায় দ্রুত এগিয়ে চলছে। তাতে ত্রিপুরার জনগণের চিন্তাধারার বড় ভূমিকা রয়েছে। ত্রিপুরার জনগণের প্রতিটি প্রয়োজন পূরণ করার লক্ষ্যে ডাবল ইঞ্জিন সরকার নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে। ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থার পরিকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে ত্রিপুরা আগামীতে বাণিজ্য করিডোরের হাব হতে যাচ্ছে। তিনি বলেন, এক সময়ে দেশের অন্যান্য রাজ্যগুলির সঙ্গে ত্রিপুরার সম্পর্ক স্থাপনের একমাত্র উপায় ছিলো সড়কপথ। বর্ষার সময় ভূমিধস হয়ে রাস্তা বন্ধ হয়ে গেলে ত্রিপুরা সহ পুরো উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিতে প্রয়োজনীয় সামগ্রীর অভাব দেখা দিতো। বর্তমানে ত্রিপুরা সড়ক যোগাযোগ সহ রেল, বিমান ও জলপথের মাধ্যমে দেশ বিদেশের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনে সক্ষম হয়েছে। জলপথে বাংলাদেশের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনে চিটাগাং বন্দরের অনুমতি চেয়েছিলো ত্রিপুরা সরকার, যা ডাবল ইঞ্জিনের সরকার পূরণ করে দিয়েছে। ২০২০ সালে আখাউড়া ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট দিয়ে বাংলাদেশ থেকে প্রথম ট্রানজিট কার্গো ত্রিপুরায় পৌঁছেছে। প্রধানমন্ত্রী ভিডিও বার্তায় আরও বলেন, সার্বিক উন্নয়নের মধ্য দিয়ে ত্রিপুরা এখন উন্নত রাজ্যগুলির সঙ্গে সামিল হতে যাচ্ছে। ত্রিপুরা সরকার গরিবদের পাকা ঘর প্রদানে প্রশংসনীয় কাজ করছে। শুধু তাই নয় ঘর নির্মাণে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিকেও প্রয়োগ করছে। প্রশাসনিক পারদর্শিতা থেকে শুরু করে আধুনিক পরিকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে যে উন্নত ত্রিপুরা গড়ে উঠছে তা আগামী দশকের জন্য রাজ্যকে তৈরি করবে। এরজন্য বর্তমান রাজ্য সরকার কঠোর পরিশ্রম করছে বলে প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করেন।
পূর্ণরাজ্য দিবসের ৫০তম বর্ষ পালনের মূল অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভাষণ রাখতে গিয়ে বলেন, ত্রিপুরাসুন্দরী মায়ের আশীর্বাদে ত্রিপুরা এখন বিকাশের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। ত্রিপুরা উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির মধ্যে ইতিহাস বিজড়িত একটি অন্যতম রাজ্য যা আজ পূর্ণরাজ্য প্রাপ্তির ৫০ তম বর্ষ পালন করছে।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেন, দেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ২০১৪ সালে দায়িত্বভার গ্রহণ করে ত্রিপুরা সহ উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিকে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা প্রদান করেছেন। ফলে উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির সঙ্গে দিল্লির দূরত্ব অনেকটাই কমে গেছে। প্রধানমন্ত্রী উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিকে অষ্টলক্ষ্মী আখ্যা দিয়ে উন্নতির সংকল্প নিয়েছেন। বিগত দিনে দেখা গেছে দিল্লি থেকে উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির জন্য যে অর্থ প্রদান করা হতো তা সঠিকভাবে কাজে লাগানো হতো না। বর্তমানে দিল্লি থেকে যে পরিমাণ অর্থ উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির জন্য পাঠানো হয় তা সঠিকভাবে রাজ্যগুলির উন্নয়নে ব্যয় করা হচ্ছে। তিনি বলেন, গত ৪ বছরে ত্রিপুরায় যোগাযোগ, পরিকাঠামো, ক্রীড়া, বিনিয়োগ, কৃষি সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন হয়েছে। কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের যৌথ আন্তরিক প্রচেষ্টার ফলে ত্রিপুরার দীর্ঘদিনের ব্রু শরণার্থী পুনর্বাসনের সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হয়েছে। ব্রু শরণার্থীদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে তাদের গৃহ নির্মাণ সহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা প্যাকেজের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকার প্রদান করেছে। ব্রু শরণার্থীরা এইসব প্রচেষ্টার ফলে জীবনের মূল স্রোতে ফিরে এসে ত্রিপুরার উন্নয়নের কাজে সামিল হবেন বলে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আশা ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, ত্রিপুরার ডাবল ইঞ্জিন সরকার ২০১৮ সাল থেকে নিয়ম, নীতি, নিয়ত এই তিনটি বিষয়ের উপর গুরুত্ব দিয়ে ত্রিপুরার আমূল পরিবর্তনের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। এই ডাবল ইঞ্জিন সরকারের প্রায় ৪ বছরের সময়কালের মধ্যে ত্রিপুরার জনগণের গড় আয় প্রায় ১ লক্ষ ৩০ হাজার হয়েছে। শুধু তাই নয় এই ডাবল ইঞ্জিন সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টার ফলেই রাজ্যের কৃষকদের মাসিক গড় আয় বেড়ে ১১ হাজার ৯৬ টাকা হয়েছে। যা ২০১৫-১৬ সাল ছিলো ৬,৫৮০ টাকা। এছাড়াও রাজ্য সরকার জাতীয় সড়ক উন্নয়নে, সৌভাগ্য যোজনা প্রকল্প রূপায়ণে, অটল জলধারা মিশনের মাধ্যমে রাজ্যের প্রতিটি বাড়িতে বিশুদ্ধ পানীয় জলের সংযোগ প্রদানে প্রশংসনীয় কাজ করছে। ত্রিপুরার এই উন্নয়নের ধারাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে এবং ত্রিপুরাকে উন্নত রাজ্য হিসেবে গড়ে তুলতে রাজ্যের জনগণকে ত্রিপুরা সরকারের পাশে থাকার জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আহ্বান জানিয়েছেন।
অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় যোগাযোগ মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী দেবুসিন চৌহান বলেন, শিক্ষা, সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে ত্রিপুরা একটি ইতিহাসজড়িত রাজ্য। ত্রিপুরায় জাতি জনজাতি অংশের জনগণ সৌহার্দ্যপূর্ণভাবে বসবাস করছে। দেশের উন্নয়নের মানদন্ডের পরিপ্রেক্ষিতে ত্রিপুরার উন্নয়ন আরও বেশি হওয়ার সম্ভাবনা ছিলো। কিন্তু ত্রিপুরার বিগত সরকারের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির ফলে ত্রিপুরার উন্নয়ন সেভাবে ঘটেনি। ২০১৪ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী দেশের শাসনভার নেওয়ার পর উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির উন্নয়নের পথ খুলে যায়। অনুরূপভাবে ২০১৮ সালে ত্রিপুরায় শাসন ক্ষমতা পরিবর্তনের পর রাজ্যের পরিকাঠামো, যোগাযোগ সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়নের গতি বেড়ে যায়। কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের ইতিবাচক প্রচেষ্টার ফলে ত্রিপুরার উন্নয়নের যে জয়যাত্রা শুরু হয়েছে তা কেউ আটকাতে পারবে না। ২০১৪ সাল থেকে পরিকাঠামো, যোগাযোগ ইত্যাদি সবক্ষেত্রেই গুরুত্ব দিয়ে কেন্দ্র সরকার কাজ করছে। ত্রিপুরার যোগাযোগ, পরিকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি টেলিকম পরিকাঠামো উন্নয়নেও কেন্দ্রীয় যোগাযোগ মন্ত্রক আরও উদ্যোগ গ্রহণ করবে বলে তিনি রাজ্যবাসীকে আশ্বস্ত করেন।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সুযোগ্য নেতৃত্বে সমগ্র দেশ আত্মনির্ভর ভারত ও স্বনির্ভরতা এই দুই মন্ত্রকে সামনে রেখে এগিয়ে যাচ্ছে। তার সাথে উন্নয়নের প্রশ্নে একদা উপেক্ষিত ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলের অষ্টলক্ষ্মাকে আত্মনির্ভর করার দিশায় কাজ চলছে। পাশাপাশি ত্রিপুরাকেও সমৃদ্ধশালী রাজ্য হিসেবে গড়ে তুলতে বিকাশমূলক কর্মকান্ডে গতি সঞ্চারিত হয়েছে।
তিনি বলেন, ভাবি প্রজন্মের সামনে একটি স্পষ্ট ভবিষ্যৎ রূপরেখা তুলে ধরতে অগ্রণী ভূমিকা নেবে আগামী ২৫ বছরের পরিকল্পনা। আগামী ২৫ বছর ত্রিপুরা কোন পথে অগ্রসর হবে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর হাত ধরে তা জনগণের সামনে উন্মোচিত হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *