ডেস্ক রিপোর্টার,২১মার্চ।।
এই মুহূর্তে রাজ্য রাজনীতির ‘ট্রাম কার্ড’ তিপ্রামথার সুপ্রিমো প্রদ্যুত কিশোর। রাজনীতির বিশ্লেষকরা একথা অকপটে স্বীকার করছেন। গত ১২মার্চ রাজধানীতে জনসভার মাধ্যমে তার প্রমাণও করলেন প্রদ্যুত।
২৩-র বিধানসভা নির্বাচনে তিপ্রামথা একা ক্ষমতায় আসতে পারবেনা। এটা রাজনীতির অন্ধ ব্যক্তিদের কাছেও ওয়াকিবল।প্রদ্যুতও বিলক্ষণ জানেন। তবে রাজ্য রাজনীতির শিরা-ধমনীর চাপ বাড়িয়ে দিয়েছেন প্রদ্যুত।
রাজনৈতিক বিশারদদের বক্তব্য, ক্ষমতার স্বাদ পেতে হলে প্রদ্যুতকে কোনো না কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আতাঁত করতেই হবে। গত ১২মার্চ জনসভায় প্রদ্যুত একই সুরে কথা বলেছেন।তবে প্রদ্যুত জোট করবেন, কিন্তু তা হবে শর্ত সাপেক্ষ। প্রদ্যুত কিশোরের শর্ত সম্পর্কে ওয়াকিবহাল রাজ্যের মানুষ।
প্রদ্যুত বলেছেন, তিপ্রাসাদের দাবি একমাত্র পূরণ করতে পারে কেন্দ্রীয় সরকার।অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি পূরণের আবেদনও রেখেছেন।ঘুরিয়ে বললে প্রদ্যুত কিশোর ২৩-র জোটের বিষয়ে ফ্লেভার দিয়েছিলেন বিজেপিকেই। আপাত দৃষ্টিতে পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনের পর উঠে আসা চিত্র অনুযায়ী ২৪-র জাতীয় নির্বাচনে বিজেপি’র পাল্লা ভারী। এটা বুঝতে পেরেছেন প্রদ্যুত নিজেও।তাই গ্রেটার তিপ্রাল্যান্ডের দাবি আদায় করতে হলে প্রদ্যুতকে হাত মেলাতে হবে বিজেপি’র সঙ্গে। তবে রাজ্যের সংখ্যা গরিষ্ঠ বাঙালিদের ক্ষেপিয়ে বিজেপি প্রদ্যুতের দাবি কতটা পূরণ করবে? এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া ছিলো শুধু সময়ের অপেক্ষা। রবিবার পাতাল কন্যা বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর চিত্র পাল্টে যায়।প্রদ্যুত কিশোর বিজেপি’র প্রতি এক রাশ অভিমান ও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “বিজেপি’র সঙ্গে জোটের সমস্ত দরজা বন্ধ।তিনি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে বলেন,৩৫টি আসনে প্রার্থী দেবে মথা।ফলাফল ঘোষণার পর দেখা যাবে কে জয়ী হয়েছে আর কারা পরাজিত।
রাজনীতিকদের বক্তব্য, দিল্লির গান্ধী পরিবারের সঙ্গে প্রদ্যুতের মধুর সম্পর্ক।এক সময় প্রদ্যুত নিজেই ছিলেন প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি।তাই কংগ্রেসের প্রতিও প্রদ্যুতের দুর্বলতা রয়েছে। রাজনীতিকদের কথায়, ” প্রদ্যুত কংগ্রেস-বিজেপি’র সঙ্গে একটা লুকো-চুরি খেলা শুরু করেছিলেন।কিন্তু এখন বিজেপি’র সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়ে গেছে।পাতাল কন্যার বিজেপিতে যোগদান, গ্রেটার তিপ্রাল্যান্ড হবে না বলে বিজেপি নেতৃত্বের ঘোষণা, তিপ্রামথাকে ছোট রাজনৈতিক দল বলে বিজেপি নেতৃত্বের কটাক্ষ।সব মিলিয়ে এখন সাপে-নেওলে হয়ে গেছে বিজেপি-তিপ্রামথার সম্পর্ক।
প্রদ্যুত এখন ভরসা করবেন কংগ্রেসকে।যদিও কংগ্রেসের সেই শক্তি নেই।দেশীয় রাজনীতিতে কংগ্রেস এক ঘোর অন্ধকার ভবিষ্যতের দিকে ধাবিত হচ্ছে।তবে ত্রিপুরাতে কংগ্রেস আগের তুলনায় কিছুটা শক্তি সঞ্চয় করছে।এই শক্তি বিধানসভা ভোটে বাজিমাত করতে কতটা কার্যকরী হবে তা বলবে সময়েই। রাজনীতিকদের বক্তব্য, রাজ্য রাজনীতির এই প্রেক্ষাপটে প্রদ্যুত কিশোর কংগ্রেসের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে বামেদের সঙ্গে “ডিফেন্সিভ স্ক্রিন” খেলা শুরু করতে পারেন।কারণ বিজেপিকে টক্কর দেওয়া এখন প্রদ্যুতের কাছে চ্যালেঞ্জ।
রাজনীতিকরা বলছেন, প্রদ্যুত ২৩-র ভোটে ‘গেম মেকার’। এটা তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন(যদি কোনো বড় অঘটন না ঘটে)।তাই রাজনীতির লুকো-চুরি খেলা শুরু করেছেন তিনি। প্রকাশ্যে কোনো ঘোষণা না দিলেও তিপ্রাসাদের স্বার্থের জন্য কংগ্রেস-বিজেপি উভয় রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলছিলেন। এবং শুরু করেছিলেন “প্রেসার পলিটিক্স”। কিন্তু পাতাল কন্যা বিজেপিতে যোগদান প্রদ্যুতের পরিকল্পনায় ছন্দ পতন ঘটায়। বিজেপিও প্রদ্যুতকে পাল্টা প্রেসার দেওয়ার জন্য পাতাল কন্যাকে হাতিয়ার করে।
বিজেপি ও প্রদ্যুত কিশোরের এই সম্পর্কের অবনতিতে খুশি প্রদেশ কংগ্রেস।তারাও চেয়ে আছে প্রদ্যুতের দিকে।তবে অবশ্যই কংগ্রেসও ভোটের আগে তিপ্রামথার সঙ্গে জোট যাবে না।কারণ ভোটের আগে প্রদ্যুতের সঙ্গে জোট করলে বাঙালি ভোট হাতছাড়া হবে।এটা বিলক্ষণ বুঝতে পেরেছে কংগ্রেস নেতৃত্ব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *