নিগোসিয়েশন বাণিজ্যের ভয়াবহতা। ( প্রতিকী ছবি)

ডেস্ক রিপোর্টার,১৪ সেপ্টেম্বর ।।
             শহর সংলগ্ন ঊষাবাজারের সিপিডব্লিওডি’র নিগোশিয়েশন বাণিজ্য এখনো তার ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। বাম জমানায় নির্দিষ্ট চেইনের মাধ্যমে চলতো সিপিডব্লিওডি’র নিগোশিয়েশন বাণিজ্য। বামেদের পতন ঘটলেও নিগোশিয়েশন বাণিজ্যে কোনোরকম হেরফের ঘটেনি। শুধুমাত্র হয়েছে হাত বদল। একসময় হার্মাদ বাহিনীর নামধারী সমাজদ্রোহীরা সিপিডব্লিওডি’র নিগোশিয়েশন বাণিজ্যের নিশান উড়াতো। এখন অবশ্যই এই নিশান শোভাবর্ধন করছে গেরুয়া শিবিরের নামধারী স্বঘোষিত কারবারীদের হাতে। ঊষাবাজার চত্বরে কান পাতলেই লোকমুখে শোনা যায় এই সংক্রান্ত রোমহর্ষকর তথ্য। তবে রাজ্য প্রশাসন থেকে শুরু করে রাজনৈতিক নেতৃত্ব কারোর কোনো হেলদোল নেই। আর এই নিগোশিয়েশন বাণিজ্যকে কেন্দ্র করে অপরাধের বধ্যভূমিতে পরিণত হয়েছে গোটা বড়জলা বিধানসভা কেন্দ্র।

             বিপ্লব কুমার দেব মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসেই ঘোষণা দিয়েছিলেন নিগোশিয়েশন কারবারী, নেশা ব্যাপারী, জমি দস্যু সহ অপরাধ সিন্ডিকেটের চাঁইদের সঙ্গে কোনো আপোষ করবে না বিজেপি সরকার। তিনি এই জন্য পুলিশকেও সতর্ক করে দিয়েছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেবের শাসনকালেই সিপিডব্লিওডিকে কেন্দ্র করে বড়জলা বিধানসভা কেন্দ্রে মাথাচাড়া দিয়েছিলো নিগোশিয়েশন বাণিজ্য। অপহৃত হয়েছিলেন ঠিকাদাররাও। আর হুমকি হুজ্জুতি তো ছিলো পাস্তা ভাতের মতো। অথচ নিগোশিয়েশন বাণিজ্যের চাঁইদের বিরুদ্ধে প্রশাসন কোনো কঠোর পদক্ষেপই নিতে পারেনি। বিপ্লব জমানার শেষে মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসেছেন ডা: মানিক সাহা। কিন্তু এখনো বহাল তবিয়তে সিপিডব্লিওডি’র নিগোশিয়েশন বাণিজ্য।


নিগোসিয়েশন মাফিয়াদের “গডফাদার” ডাক্তার বাবু! (প্রতীকী ছবি)

সিপিডব্লিওডি’র নিগোশিয়েশন বাণিজ্যের অন্তরালে কারা নাড়ছে কলকাঠি? গোটা সিস্টেমের মাস্টারমাইন্ডই বা কে? কোথায় যাচ্ছে নিগো বাণিজ্যের কোটি কোটি অর্থ? কাদের হচ্ছে পকেট ভর্তি? এসমস্ত রোমহর্ষকর প্রশ্নের উত্তর জানা যাবে এই প্রতিবেদনে।


নিগগোসিয়েশন বাণিজ্যের আর্থিক লেনদেন(প্রতীকী ছবি)

দীর্ঘ ২৫ বছরের বাম জমানার অপশাসনের পর অনেক প্রত্যাশা জাগিয়ে সরকার গঠন করেছিলো বিজেপি। কিন্তু দলের একাংশ মন্ত্রী, বিধায়ক – নেতা টাকার মোহে আচ্ছন্ন হয়ে যান। বামেদের ফেলে যাওয়া অপরাধের ঐতিহ্যকে হাতে তুলে লালনপালন করতে শুরু করেন তারা। তাতে অবশ্যই কালিমালিপ্ত হচ্ছে দল। এবং প্রশাসনের দণ্ডমুণ্ডের কর্তা ব্যক্তিরা। কিন্তু কার কি আসে যায়? অর্থই যেখানে শেষ কথা, সেখানে তো অপরাধ চাগার দেওয়াটা স্বাভাবিক। তারমধ্যে যদি ডাক্তারবাবুদের মতো মানুষকে পেয়ে যায় রাজনীতির নামধারী অপরাধীরা, তাহলে তো এদের কেল্লা ফতে। আর এটাকেই বাস্তবায়িত করেছে বড়জলা বিধানসভা কেন্দ্রের অপরাধ চক্রের চাঁইরা। একসময় এই অঞ্চলের ডাক্তারবাবু স্বপ্ন দেখতেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী হওয়ার। কিন্তু মন্ত্রিত্ব ভাগ্যে জুটি নি। মন্ত্রীত্বের স্বপ্ন বিলিন হলেও ডাক্তারবাবুর কাছে চলে আসে মধুর ভাণ্ড। যার পোশাকি নাম “সিপিডব্লিওডি”। তাই স্বাস্থ্য দফতর না পেলেও ঊষাবাজারকে কেন্দ্র করে সিপিডব্লিওডির মতো একটা “মধুর ভাণ্ড” পেয়েছেন। তবে এই “টাকার কল” চালানোর জন্য তিনি পেয়ে গিয়েছেন বেশ কিছু দক্ষ কম্পাউন্ডারও। ডাক্তার বাবু আর কমপাউন্ডারদের মিশেলে সিপিডব্লিওডির রমরমা নিগোশিয়েশন বাণিজ্য চলছে নির্দ্বিধায়।

       স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ  এই চিকিৎসক তার কর্মজীবনে প্রচুর সফল অস্ত্রোপচার করেন । স্বাভাবিক ভাবেই নিগোশিয়েশন বাণিজ্যে ‘অপারেশন সিপিডব্লিওডি’ চালাতে গিয়ে তার কোনো সমস্যা হয়নি। দক্ষ হাতেই তিনি পরিচালনা করছেন “অপারেশন সিপিডব্লিওডি” ডাক্তারবাবুর এই কার্যকলাপ নিয়ে গুঞ্জন গোটা বড়জলা কেন্দ্রে। স্থানীয়দের বক্তব্য অনুযায়ী, ডাক্তারবাবুকে এখন অপারেশন করার জন্য আর নার্সিংহোমে যেতে হয় না। নিগোশিয়েশন বাণিজ্যের অপারেশন সেরে নেন উষা বাজার ছিনাইহানীর বাসিন্দা ঠিকাদার তথা ডাক্তারবাবুর “মিতা” দিলীপ ঘোষের বাড়িতে। কখনো আবার দিলীপের বাণিজ্যিক পার্টনার বলরামের বাড়িতেও শক্ত হাতেই নিখুঁত অপারেশন করেন ডাক্তারবাবু। দিলীপ,বলরাম উভয়ের গায়ে এখনো বুদবুদ করছে বাম জমানার ঘামের দুর্গন্ধ।নিগোশিয়েশন বাণিজ্যে ডাক্তারবাবুর এই নিপুন অপারেশন দেখে রীতিমতো ‘থ’ খেয়ে যায় এলাকার দক্ষ নিগো মাফিয়ারাও। তাদেরকেও নাকি ডাক্তারবাবু হার মানিয়ে নিয়েছেন। স্বাভাবিক ভাবেই নিগো মাফিয়াদের কাছে এই ডাক্তারবাবু হয়ে উঠেছেন তাদের আদরের “স্যার”।

“হ্যালো”তেই কামাল করেন ডাক্তারবাবু! (প্রতীকী ছবি)

ডাক্তারবাবুর আসকার পেয়ে এলাকার সমাজদ্রোহী তথা দাগী নিখো মাফিয়া রাজু বর্মন, প্রভাকর ঘোষ, সুকান্ত গুপ্ত (বাস্তকার, আরডি), বিমান দাসরা ধরাকে সরা জ্ঞান মনে করছে। তারা ঠিকাদারদের হুমকি হুতি দিতে, মারধর করতে এবং অস্ত্রের মুখে অপহরণ করতেও দ্বিধাবোধ করে না। আর এই কারণেই দিনদুপুরে তারা ঠিকাদারকে অপহরণ করে বুঝিয়ে দিয়েছে ক্ষমতা। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব মামলার তদন্তের জন্য ক্রাইম ব্রাঞ্চকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন। ক্রাইম ব্রাঞ্চ তদন্তও করেছে। আদালতে জমা দিয়েছে চার্জশিটও। কিন্তু ডাক্তারবাবুর মতো প্রভাবশালী লোকের রক্তচক্ষুতে ক্রাইম ব্রাঞ্চের চার্জশিট হয়ে যায় সাদামাটা। তারই ফাঁক গলে বেরিয়ে যায় অপরাধীরা। আজও তারা বহাল তবিয়তে সিপিডব্লিওডি নিগোশিয়েশন বাণিজ্য করছে এবং মাসান্তে ডাক্তারবাবু সহ প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের বিশ্বস্ত পকেটে পৌঁছে দিচ্ছে মোটা অঙ্কের অর্থরাশি।

নিগো কারবাররীদের বধ্যভূমি সিপিডব্লিওডি অফিস। (প্রতীকী ছবি)

এই অর্থের ভাগবাটোয়ারা পাচ্ছেন মন্ত্রী থেকে শুরু করে যুবনেতাও। আর এই কারণেই বড়জলাতে নিগোশিয়েশন বাণিজ্যের রমরমা চললেও সমাজের ভদ্রবেশী রাজনৈতিকবিদরা গান্ধারীর মতো চোখে কালোপট্টি বেঁধে রেখেছেন। হালে শোনা যাচ্ছে, ঊষাবাজারে সিপিডব্লিএডি’র মধুর ভান্ডে থাবা বসিয়েছেন মোহনপুরের রতনশ্রী ও বামুটিয়ার কে মোহন। সব মিলিয়ে ঊষাবাজারের সিপিডব্লিওডিকে কেন্দ্র করে কর্পোরেট কায়দায় ডাক্তারবাবুর নির্দেশনায় চলছে নিগোশিয়েশন বাণিজ্য। এই নিগো বাণিজ্যের পসরা সাজাতে গিয়ে ডাক্তারবাবু কালিমালিপ্ত করেছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেবকেও। এবং বর্তমান নিষ্কলুক মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ মানিক সাহার সাদা পাঞ্জাবীতেও কালি ছেটানোর চেষ্টা করছেন “অপারেশন সিপিডব্লিওডি”র মূল মাস্টারমাইন্ড ডাক্তারবাবু তথা মাফিয়াদের আদরের “স্যার”।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *