।।ভিকি প্রসাদ।।

ডেস্ক রিপোর্টার, ২৬ডিসেম্বর।।
   প্রদেশ বিজেপির যুব মোর্চার সভাপতির পদ নিয়ে শুরু হয়েছে জোর লড়াই। সভাপতির মিউজিক্যাল চেয়ারে লড়াইয়ের অলিন্দে বেশ কয়েকজনের নাম ঘুরাফেরা করলেও প্রথম কক্ষে রয়েছেন দুই জন।তাদের মধ্যে একজন বিশালগড়ের বিধায়ক সুশান্ত দেব। অন্য জন প্রদেশ বিজেপির যুব মোর্চার সহ – সভাপতি ভিকি প্রসাদ। এই দুইজনের টিআরপি বারবার উঠানামা করছে। উভয়েই বিজেপির দুই গোষ্ঠীর মুখ। অন্তত  যুব মোর্চার সভাপতি পদ দৌঁড়ে।


বিশালগড়ের বিধায়ক সুশান্ত দেবের নাম নিয়ে বিজেপির লোকজনের মধ্যে তেমনি কোনও আপত্তি না থাকলেও ভিকি প্রসাদকে নিয়ে জোর আপত্তি দলের অন্দরেই। বিজেপির অধিকাংশ নেতাদের কাছে নাকি ভিকি প্রাসাদের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন চিহ্ন রয়েছে। রাজনীতির অতীতের পাতার তথ্য অনুযায়ী, মূলত ভিকি প্রাসাদের রাজনীতিতে হাতে খড়ি কংগ্রেস বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মনের হাত ধরে। রাজ্য রাজনীতিতে ভিকি সুদীপের অনুগামী হিসাবেই পরিচিত। অভিযোগ ,সুদীপের কারণেই বাই – সাইকেল চালানো ভিকি অর্থনৈতিক ভাবে সুঠাম হয়ে উঠেছিল। এখন নানান ঢালকে হাতিয়ার করে ভিকি প্রসাদ তার আর্থিক সাপ্লাইকে ধরে রেখেছে। বদলে গেছে তার চাল – চলন। তার জীর্ণ বসত ঘর এখন অট্টালিকা। সুদীপ বিজেপি ছাড়লেও ভিকি থেকে যায় গেরুয়া শিবিরে। বিজেপির বিভিন্ন গোষ্ঠীটিতে মাথা ঢুকিয়ে নিজের রাজনৈতিক মেরুদন্ড সোজা করার চেষ্টা করেছিলেন।

।।বিধায়ক সুশান্ত দেব।।

ভারতীয় জনতা পার্টির কর্মীদের বক্তব্য,
২৩- র নির্বাচনেও বিজেপির রাজনৈতিক মঞ্চে ভাষণ দিতে গিয়ে ভিকি নাকি বলেছিলেন, ” বিপ্লব কুমার দেবের হাত ধরেই ক্ষমতায় ফিরছে বিজেপি।” এখানে রীতি মতো মুখ্যমন্ত্রী ডা:মানিক সাহাকে খাটোই করেছিলো  ভিকি। ভিকি প্রাসাদের এই বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরালও হয়েছিলো। গেরুয়া অন্দরের তথ্য, এখন অবশ্যই ভিকি প্রসাদ আছেন মুখ্যমন্ত্রীর গ্রুপেই। অর্থাৎ সুদীপ থেকে বিপ্লব।আবার বিপ্লব থেকে মানিক। সব গোষ্ঠীতেই ভিকি প্রাসাদের বিচরণ। এটা থেকে স্পষ্ট ভিকি বরাবর ছলম পাল্টাতে উস্তাদ। স্বাভাবিক ভাবেই  বিজেপির মধ্যে প্রশ্ন উঠছে ভিকি প্রসাদের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে।


কংগ্রেস রাজনীতির খবর, ২০১৩- র বিধানসভা নির্বাচনে জিঞ্জার হোটেলে বসেই কংগ্রেস প্রার্থীদের নির্বাচনী খরচের টাকা পকেটে রেখেছিলেন ভিকি। তখন ভিকি ছিলো সুদীপের একনিষ্ঠ অনুগামী। এবং কংগ্রেসে ছিলো সুদীপ রাজত্ব। তাই ভিকি টাকা লুঠ করলেও কেউর কিছু বলার ছিলো না। কংগ্রেস ভবনে গেলেই আজও ভিকি সম্পর্কে এই সংক্রান্ত তথ্য উগলে দেয় কংগ্রেসীরা।
          পরবর্তীতে ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে সুদীপের হাত ধরে ভিকি বিজেপিতে নাম লেখায়।ক্ষমতায় আসে বিজেপি। সুদীপ বর্মন বসেন মন্ত্রীর চেয়ারে। ব্যাস, ভিকির কেল্লা ফতে। অভিযোগ, পাবলিক হেলথ ডিপার্টমেন্টে ফিটকারী, চুন দেওয়ার বরাত পেয়ে গিয়েছিল  ভিকি প্রসাদ। অন্তরালে ছিলেন তার রাজনৈতিক গড ফাদার সুদীপ।কিন্তু তার সাপ্লাই করা ফিটকারি, চুনের মান নিয়ে আজও প্রশ্ন উঠছে দপ্তরে। বলেছে দপ্তরের কর্মীরা।এরপর ভিকিকে আর অর্থিক ভাবে পেছনে তাকাতে হয় নি। এখন ভিকির ব্যবসার প্রসার অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। অভিযোগ, এই সময়েই ভিকি প্রসাদ জীরানিয়া রেল ইয়ার্ডের নিগোসিয়েশন ব্যবসার মধ্যস্থতাকারী ছিলেন। সঙ্গে ছিলো তার সঙ্গী চাংকি। তৎকালীন সময়ে তার বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের প্রচুর অভিযোগ ছিল।কৃষ্ণনগর কুশাভাউ ভবনে কান পাতলেই শোনা যায় এই সমস্ত তথ্য।

।।ভিকি প্রসাদের বসত ঘরের ইন্টেরিয়র।।(ছবি – এফবি)

রাজনীতির রান্না ঘরের চিত্র বলেছে, এক সময় সুদীপ রায় বর্মন বিজেপিতে গুরুত্বহীন হয়ে উঠেছিলেন। তৎকালীন সময়ে পরিস্থিতি আঁচ করে বিজেপির হেভিওয়েট নেতা টিংকু রায়ের কাছে ভিকি নি:স্বর্ত আত্ম সমর্পন করেন। এরপর থেকেই ধীরে ধীরে ভিকি শক্তি সঞ্চয় করে। সঙ্গে আছে তেল, বাটারের রাজনীতিও। এখন ভিকি প্রসাদ যুব মোর্চার সভাপতির জন্য প্রবল দাবিদার হয়ে উঠেছেন। তার মূল প্রতিদ্বন্দ্বী বিশালগড়ের বিধায়ক সুশান্ত দেব। এখন দেখার বিষয় শেষ পর্যন্ত সুশান্ত- র টিআরপিকে ভিকি টপকাতে পারে কিনা।


রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের আশঙ্কা এই মুহূর্তে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ডা: মানিক সাহাও আছেন চ্যালেঞ্জের মুখে।কারণ ভিকি প্রসাদকে যুব মোর্চার চেয়ারে বসিয়ে দিলে, মুখ্যমন্ত্রীর জন্য এটা, আগামী দিনে হতে পারে খাল কেটে কুমোর আনা মতো অবস্থা। তাই রাজ্যের নিষ্কলুষ মুখ্যমন্ত্রী ডা: মানিক সাহাকে থাকতে হবে সতর্ক। সিদ্ধান্ত নিতে হবে সন্তর্পনে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *