
ডেস্ক রিপোর্টার,১১ মার্চ।।
“রাজ্যে বসবাসকারী হিন্দু ও মুসলমান বাঙালিরা বহিরাগত।” বলেছেন,তিপ্রামথার সুপ্রিমো প্রদ্যুৎ কিশোর দেববর্মণ। প্রদ্যুৎ তার হাব ভাবে বুঝিয়ে দিলেন,রাজ্যের হিন্দু ও মুসলমান বাঙালিদের পিঠে বহিরাগত স্টিকার সেটে দেওয়ার জন্য তিনি যেন ঠিকা নিয়ে রেখেছেন । আর প্রদ্যুৎ কিশোরের সঙ্গে সঙ্গে জনজাতিদের বৃহৎ অংশ লাফাচ্ছে ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চার মতো। তবে এটা নতুন নয়, বাঙালিদের বিদেশি তকমা দিয়ে দশকের পর দশক বিচ্ছিন্নতাবাদী জনজাতিরা গোটা রাজ্যকে করেছিলো রক্ত স্নাত। যাদের পোশাকি নাম উগ্রপন্থী। টিএনভির বিজয় রাঙ্খল থেকে শুরু করে এটিটিএফের রঞ্জিত দেববর্মা এবং এনএলএফটির নয়নবাসী থেকে বিশ্বমোহন প্রত্যেকেই বাঙালির রক্তে হোলি খেলেছে। তারা নিজ নিজ সময়ে বাঙালি বিতাড়নের নামে সংঘটিত করেছে একের পর এক গণহত্যা। রাজ্য জুড়ে শুরু হয়েছিল বাঙালির লাশের মিছিল। অপরাধ বাঙালিরা বাংলাদেশী।তাদের এই রাজ্য থেকে বিতাড়িত করতে হবে। বাঙালির বিরুদ্ধে রচনা হয়েছিলো এক গভীর ষড়যন্ত্র।এই ষড়যন্ত্রের উপাখ্যান লেখা ছিলো টিএনভির সুপ্রিমো তথা প্রাক্তন জঙ্গি নেতা বিজয় কুমার রাঙ্খলের ঐতিহাসিক লাল ডায়েরীতে।

তিপ্রামথার সুপ্রিমো প্রদ্যুৎ কিশোর, অনিমেষ দেববর্মা, আইপিএফটির প্রয়াত নেতা এন সি দেববর্মা, প্রাক্তন বৈরী নেতা বিজয় কুমার রাংখল, রঞ্জিত দেববর্মা, , চুনি কলই, মন্টু কলই,নয়নবাসী ও হালের বৈরী নেতা বিশ্ব মোহনের মিথ্যাচারের হাড়ি হাটে ভেঙ্গে দিলেন খোদ আরেক জনজাতি তথা রাজ্যের প্রাক্তন উপ মুখ্যমন্ত্রী জিষ্ণু দেববর্মণ। এখন কোথায় লজ্জায় মুখ ঢাকবেন প্রদ্যুৎ – বিজয় – অনিমেষ – রঞ্জিতরা? স্বাধীন ত্রিপুরা, পৃথক রাজ্য, তিপ্রাল্যান্ড ও গ্রেটার তিপ্রাল্যান্ডের ফেরী ওয়ালাদের মুখে ঝামা ঘষে দিয়েছেন জিষ্ণু দেববর্মণ।এখন তাদের মুখে লেগেছে চুন কালি। কিভাবে তুলবেন এই চুন – কালি?

*তিপ্রাসারা ত্রিপুরার ভূমিপুত্র নয়।
* ত্রিপুরায় বসবাসকারী তিপ্রাসারা বিদেশি।
* ত্রিপুরার মূল ভূমিপুত্র বাঙালিরাই।
*তিপ্রাসারা এসেছে তিব্বত ও বার্মা থেকে ।
* এরা তিব্বতীয় -বার্মিজ বংশোদ্ভূত ।
*তিপ্রাসাদের আদি বাড়ি চীনে ।
*তারা পশ্চিম চীনের ইয়ান-সে-কিয়াং
এবং হোয়াং হো নদীর তীরের বাসিন্দা।

প্রদ্যুৎ কিশোরের নেতৃত্বাধীন রাজ্যের তিপ্রাসাদের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছেন রাজ পরিবারের সদস্য তথা জনজাতি নেতা,রাজ্যের প্রাক্তন উপ মুখ্যমন্ত্রী জিষ্ণু দেববর্মন। রাজ্যের প্রাক্তন উপ- মুখ্যমন্ত্রী তার অপ্রকাশিত বই “মাস্টার অফ টাইম”- র পান্ডুলিপির গুরুত্ব পূর্ন অংশ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুলে ধরে বলেন, রাজ্যের তিপ্রাসা জাতির নাড়ির যোগ চীনের সঙ্গেই।এরা ত্রিপুরার ভূমিপুত্র নয়।এই রাজ্যের মূল ভুমিপুত্র বাঙালিরা।

রাজ পরিবারের সদস্য তথা রাজ্যের প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী জিষ্ণু দেব বর্মন তার অপ্রকাশিত বইয়ের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুলে ধরা পান্ডুলিপিতে দাবি করেছেন, আনুমানিক ২৩৮ থেকে ২৬৪ খ্রিস্ট পূর্বে সম্রাট অশোকের সময় বর্তমানে উত্তরাখণ্ডের কোথাও না কোথাও “কর-তিপুরা” নামে একটি রাজ্য ছিল। সম্রাট অশোক হিমালয়ের উচ্চভূমিতে তার সীমানা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য এই রাজ্যকে আক্রমণ করে পরাজিত করেছিলেন বলে মনে করা হয়েছিল। অশোক জয় করা অন্যান্য রাজ্যের নামগুলির মধ্যে বিখ্যাত অশোক স্তম্ভে কর-তিপুরার নাম খোদিত আছে।

অন্যদিকে, উত্তরাখণ্ডের হিমালয় পর্বতমালায় কিরাত রাজ্য নামে একটি রাজ্য ছিল। রাজমালায় ত্রিপুরা রাজ্যকে কিরাত দেশ বা কিরাত রাজ্য বলা হত। সম্ভবত: এই রাজ্যটি ইন্দো-আর্য ভাষাভাষীদের কাছে কিরাত-পুর বা কিরাত শহর নামে পরিচিত ছিল। সম্ভবত: পরে এটি কিরাতি-পুর এবং এর পরবর্তীকালে কর-তিপুর এবং অবশেষে ত্রিপুরায় রূপান্তরিত হতে পারে।

জিষ্ণুদেব বর্মন তার লেখা পান্ডুলিপিতে দাবী করেছেন,কিংবদন্তি এবং পৌরাণিক কাহিনী ছাড়াও পণ্ডিতরা ত্রিপুরার উৎপত্তি সম্পর্কে বিভক্ত ছিলেন। কৈলাশ চন্দ্র সিনহা তাঁর রাজমালার সংস্করণে বলেছেন, “বার্মার শান রাজবংশের একটি শাখা কামরূপের পূর্ব অংশে একটি রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। কালক্রমে রাজার কনিষ্ঠ পুত্র আদিবাসীদের কাছে পরাজিত হয় এবং সে কারণে তিনি তার রাজ্য কাছাড়ের উত্তরাঞ্চলে স্থানান্তর করতে বাধ্য হন। তিনি বলেছিলেন, “কাছাড়”ই প্রাচীন ত্রিপুরা রাজবংশের উৎপত্তির সেই স্থান ছিল।”

রাজ্যের প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, ত্রিপুরার উৎপত্তি সম্পর্কে অনেক পণ্ডিত তাদের মতামত দিয়েছেন।
‘A Cultural History of Assam, Vol-1
নামক বইয়ে ডক্টর বি.কে. বড়ুয়া লিখেছেন,
“তিপ্রাসা লোকদের আদি বাড়ি ছিল ইয়ান-সে-কিয়াং ও পশ্চিম চিনের হোয়াং হো নদীর নিকটে। সেখান থেকে তারা ব্রহ্মপুত্র, চিন্দোইন এবং ঈরাবতী নদীর গতিপথ বেয়ে ভারত ও বার্মায় প্রবেশ করে। আসামে আসা ঝাঁকটি ধুবড়ির কাছে ব্রহ্মপুত্র নদের বিশাল বাঁকের দিকে এগিয়ে গিয়েছিল। সেখান থেকে তাদের কেউ কেউ দক্ষিণে গিয়ে গারো পাহাড় ও পার্বত্য তিপেরা রাজ্য দখল করে।”

W.W এর মতে Hunter ‘A Statistical Account of Bengal Vol.-VI – এ বলেছেন “ত্রিপুরার শাসকরা তিব্বতীয় বার্মিজ বংশোদ্ভূত ছিলেন”। Major Fisher মত দেন যে, “তিপরা এবং কাছারি একই উৎপত্তি এবং তাদের রীতিনীতি, ধর্ম, চেহারাও মোটামুটি একইরকম”। Sidney Endle তাঁর ‘দ্য কাছারিস’ এ বলেছেন, “বৈশিষ্ট্য এবং সাধারণ চেহারাতে তারা মঙ্গোলিয় ধরণের খুব কাছাকাছি বলে অনুমান করা যায় এবং তিব্বত এবং চীনকে জাতির আদি বাড়ি হিসাবেও মনে হয়”।

রাজনীতিকরা বলছেন, প্রাক্তন উপ মুখ্যমন্ত্রী জিষ্ণু দেব বর্মনের “মাস্টার অফ টাইম “নামক বইটি প্রদ্যুৎ কিশোরকে একেবারেই ব্যাকফুটে ঠেলে দেবে। একজন জনজাতি হিসাবে ইতিহাসের তথ্য প্রমাণ তুলে ধরে জিষ্ণু দেববর্মন বলছেন, বাঙালিরাই ত্রিপুরার ভূমিপুত্র।এখন প্রদ্যুৎ কিশোর পাল্টা ঐতিহাসিক তথ্য-প্রমাণ নিয়ে কি দেখাতে পারবেন জনজাতিরাই ভূমিপুত্র?

বাস্তব অর্থে প্রদ্যুৎ কিশোর যুক্তিহীন,অবাস্তব ভাবে রাজ্যের ভুঁইফোর ভূমি পুত্রের স্বপ্নচারী হয়ে উঠেছেন।তিনি গ্রেটার তিপ্রাল্যান্ডের ললিপপ সামনে এনে জনজাতিদের উস্কে দিয়ে নিজের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক শ্রীবৃদ্ধির প্রয়াস শুরু করেছেন। শাসক দল বিজেপির ভিতর থেকে প্রশ্ন উঠছে, জনজাতিরা যেহেতু ভূমি পুত্র নয়,তাহলে তাদের সঙ্গে সাংবিধানিক সমাধান ইস্যুতে আলোচনার কোনো প্রয়োজন নেই।

কোনো আবশ্যকতা নেই ইন্টারলকেটর নিয়োগের।বকলমে প্রদ্যুৎ অপপ্রচার করে এই রাজ্যের মূল ভুমিপুত্র বাঙালিদের অপমান করছেন।

এবং দুই সস্প্রদায়ের মধ্যে জাতির দাঙ্গা লাগানোর জন্য তৈরি করছেন নীল নকশা। তিপ্রামথা প্রদ্যুৎ কিশোরের বর্তমান কার্যকলাপ বিচার বিশ্লেষণ করে একথা বলছেন,এরাজ্যের সুশীল সমাজ।