ডেস্ক রিপোর্টার,১৪নভেম্বর।।
      ২০০৮- র  ১ অক্টোবর  আগরতলা বোমা বিস্ফোরন থেকে শুরু আইএসআই এজেন্ট মুনির খানের গ্রেফতার। হুজি জঙ্গি মামুন মিয়ার গ্রেফতার থেকে আন্তর্জাতিক জাল ড্রাফট মামলা সহ মক্কা মসজিদ বিস্ফোরণ মামলার মাষ্টার মাইন্ড আব্দুল রহমান কায়ুম কান্ড।প্রতিটি ক্ষেত্রেই ব্যর্থ ছিলো রাজ্যের পুলিশ। সর্ব শেষে  আন্তর্জাতিক মানব পাচার সংক্রান্ত মামলাও সুপার ফ্লপ করেছে রাষ্ট্রপতি কালার্স পদক প্রাপক রাজ্য পুলিশ। সংশ্লিষ্ট ঘটনাগুলি নিয়ে সম্পূর্ণ ঘুমে ছিলো রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দপ্তর। একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়েছে গত  ৮ নভেম্বর।
            আন্তর্জাতিক মানব পাচারের করিডোর হয়ে উঠেছে ত্রিপুরা। দীর্ঘ দিন ধরেই চলছে এই কার্যকলাপ। কিন্তু রাজ্য পুলিশ – গোয়েন্দা সম্পূর্ন ঘুমে।তারা   ঘুণাক্ষরেও  জানতে পারেনি।বা জানার চেষ্টা করেনি। হয়তো বা আন্তর্জাতিক মানব পাচারকারীদের নোটের গন্ধে আচ্ছন্ন ছিলো তারা।এই কারণেই গোটা রাজ্যে আন্তর্জাতিক মানব পাচারকারীরা নিটোল জাল বিস্তার করলেও রাজ্যের পুলিশ – গোয়েন্দা ছিলো ধৃতরাষ্ট্রের মতো।


   রাজ্য পুলিশের ব্যর্থতার খতিয়ানের তালিকা বেশ লম্বা। যতটা কম বলা যায়, ততটাই ভালো। তবে রাজ্য পুলিশের ব্যর্থতার বেশ কিছু তথ্য সমৃদ্ধ নিদর্শন আমরা তুলে ধরবো এই প্রতিবেদনে।

#মক্কা মসজিদ বিস্ফোরণ:
________________________

বিস্ফোরণের পর মক্কা মসজিদ (২০০৭)

                ২০০৭ সালে হায়দরাবাদ মক্কা মসজিদের বিস্ফোরণের ঘটনা সংঘঠিত হয়েছিলো।এই বিস্ফোরণের ঘটনার মূল মাষ্টার মাইন্ড ছিলো আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আলকায়দার সদস্য আব্দুল রহমান কায়ুম। বিস্ফোরণের আগে কায়ুম বেশ কিছুদিন আগরতলার বর্ডার গোল চক্করে অবস্থান করেছিলো।এই সময় শহরের লক্ষ্ণী নারায়ণ বাড়ি রোডের ঠিকানা দিয়ে রাজ্য থেকে হাতিয়ে নিয়েছিল পিআরটিসি ও পাসপোর্ট। তার স্কুল সার্টিফিকেট ছিলো গান্ধীগ্রাম স্কুলের।বিস্ফোরণের কিছুদিন পর আব্দুল রহমান কাইয়ুম কলকাতায় গা ঢাকা দিয়েছিলো।তখন তাকে গ্রেফতার করেছিলো কলকাতার লালবাজার থানার পুলিশ। লাল বাজার থানার পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে কাইয়ুম সমস্ত তথ্য উগলে দিয়েছিলো। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে লাল বাজার থানার পুলিশ আগরতলায় সদর মহকুমা শাসক অফিসে অভিযান চালিয়ে আগরতলার ঠিকানায় থাকা ভারতীয় নাগরিকত্ব সংক্রান্ত সমস্ত নথিপত্র সিজ করেছিলো।অথচ রাজ্য পুলিশ ছিলো সম্পূর্ন ঘুমে।


হুজি জঙ্গি মামুন মিয়া (২০০৮)

মামুন মিয়া কাণ্ড:
________________
            
     বাংলাদেশ ভিত্তিক হুজি জঙ্গি মামুন মিয়া শহরের ফায়ার সার্ভিস চৌমুহনীতে ঘর ভাড়া নিয়ে থাকতে বসবাস করতো।পুলিশ সদর দপ্তরের বিপরীত দিকে ছিলো তার ভাড়া বাড়ি।কিন্তু রাজ্য পুলিশ তা জানতেই পারে নি। সে ছিলো বাংলাদেশের মোস্ট ওয়ান্টেড জঙ্গি।শেষ পর্যন্ত রাজ্য পুলিশকে ঘুমে রেখে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা মামুনের ভাড়া বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করেছিলো।ঘটনা ২০০৮- র এপ্রিল মাসে। মামুন মিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক থাকার কারণে তৎকালীন বাম সরকারের খাদ্য ও ক্রীড়া মন্ত্রী শহিদ চৌধুরীকে তার মন্ত্রিত্বের চাকরি খোয়াতে হয়েছিলো।


আগরতলা সিরিজ বোমা বিস্ফোরণ।(২০০৮)

আগরতলা বোমা বিস্ফোরণ:
__________________________

            ২০০৮ – র ১অক্টোবর। সান্ধ্য রাতে শহরের পাঁচটি জায়গাতে সিরিজ বোমা বিস্ফোরণ হয়েছিলো।রাজ্যের নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন এটিটিএফ ছিলো ঘটনার নেপথ্যে। কিন্তু পুলিশ,গোয়েন্দার কাছে আগাম কোনো খবর ছিলো না। বোমা বিস্ফোরণে পর শুরু হয়ে গিয়েছিল পুলিশ কর্তাদের কম্পন। এই ঘটনায় একশ জনের অধিক গুরুতর জখম হয়েছিলো। বরাত জোরে কয়েকজন নাগরিক ফিরে আসেন মৃত্যুর মুখ থেকে। আজও অনেকে শারীরিক ভাবে পুঙ্গ হয়ে বোমা বিস্ফোরণের স্মৃতিকে বয়ে নিয়ে যাচ্ছে প্রতিদিন।


পাক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই

মুনির খান মামলা:
___________________
            
  পাকিস্তানের আইএসআই এজেন্ট মুনির খান। তার বাড়ি করাচিতে। সে বেশ কিছু দিন অবস্থান করেছিলো আগরতলার আরালিয়াতে।সেখান থেকে চলে গিয়েছিল বাংলাদেশে।বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজ্য সফরে বোমা বিস্ফোরণে উদ্দেশ্য নিয়ে পুনরায় মুনির প্রবেশ করেছিল রাজ্যে। সোনামুড়া রাঙামাটি সীমান্ত দিয়ে রাতের আঁধারে এপারে প্রবেশ করেছিলো মুনির।পুলিশ ছিলো ঘুমে।রাতে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা মুনির খানকে রাঙামাটি সীমান্ত অঞ্চল থেকে গ্রেফতার করেছিল।ঘটনা ২০০৯ সালে।


জাল ড্রাফট

আন্তর্জাতিক জাল ড্রাফট মামলা:
_______________________________
         
  এই মামলাতেও নাম জড়িয়ে ছিলো ত্রিপুরার। রাজধানী সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আন্তর্জাতিক জাল ড্রাফট মামলার কুশীলবদের একে একে জালে তুলেছিল দেশের সর্বোচ্চ তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই কিন্তু রাজ্যের পুলিশ এই ঘটনার সম্পর্কে ছিল সম্পূর্ণ অন্ধকারে। সারা দেশ জুড়ে সিবিআই এই মামলার তদন্ত করে একশর অধিক চাইকে গ্রেফতার করেছিল।তাদের মধ্যে ১৬ জন ছিল ত্রিপুরার। অবাক করার মতো ঘটনা সিবিআই রাজ্যে আসার আগে ত্রিপুরা পুলিশ ছিলো ঘুমে।


দাউদ মার্চেন্ট

দাউদ মার্চেন্ট কাণ্ড:
___________________
     
    মুম্বাইয়ের বাসিন্দা দাউদ মার্চেন্ট ছিলো ডি – গ্রুপের ডন দাউদ ইব্রাহিমের ডান হাত। টি – সিরিজের কর্নধার গুলসেন কুমারকে গুলি করে হত্যা করেছিল দাউদ মার্চেন্ট। গুলশান কুমারকে হত্যার পর দাউদ দেশের বিভিন্ন জায়গাতে আশ্রয় নিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত দাউদ মার্চেন্ট ব্যবহার করে ত্রিপুরাকে। পাসপোর্ট- র মাধ্যমে আগরতলা চেকপোস্ট দিয়ে দাউদ মার্চেন্ট চলে গিয়েছিল বাংলাদেশে।কিন্তু ত্রিপুরা পুলিশের কাছে কোনো খবর ছিলো না। ঢাকাতে যাওয়ার পর “র”- র দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বাংলাদেশ পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ অপরাধী প্রত্যাবর্তন চুক্তি অনুযায়ী দাউদ মার্চেন্টকে তুলে দিয়েছিল ভারত সরকারের হাতে। দাউদ মার্চেন্ট ছিলো ভারতের মোস্ট ওয়ান্টেড অপরাধী।
    


এরকম বহু আন্তর্জাতিক অপরাধ চক্রের মৃগয়া ক্ষেত্র ত্রিপুরা। অপরাধীরা রাজ্যের মাটিতে বসে অপরাধের সলতে পাকালেও রাজ্য পুলিশ – গোয়েন্দার কোনো হুশ ছিলো না। তারা বরাবর উদাসীন।তাদের দেওলিয়াপনার জন্য ত্রিপুরাকে বারবার করিডোর হিসাবে ব্যবহার করছে অপরাধীরা।


তা আবারও প্রমাণ করলো ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি। এনআইএ – র দফা ওয়ারী হানাতেই বেরিয়ে আসে কিভাবে আন্তর্জাতিক মানব পাচার চক্রের চাইরা বাসা বেঁধেছিল ত্রিপুরার বিভিন্ন অঞ্চলে। তৎসঙ্গে সামনে আসে রাজ্য পুলিশ – গোয়েন্দার ব্যর্থতা ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *