ডেস্ক রিপোর্টার, ১৭সেপ্টেম্বর।।
রাজ্য জুড়েই মাথা চাড়া দিয়েছে নানান অপরাধ। তারমধ্যে গোঁদের উপর বিষফোঁড়ার মতো অবস্থা তৈরি করেছে তস্কর বাহিনী’। রাজধানী থেকে শুরু করে জেলা ও মহকুমাগুলিতে তস্কর বাহিনীর তাণ্ডবে দিশেহারা মানুষ। নাভিশ্বাস উঠছে রাজ্যের তথাকথিত নেটওয়ার্ক সমৃদ্ধ পুলিশের। মানুষ নিজেদের সহায় সম্পত্তি রক্ষার স্বার্থে পুলিশের উপর আস্থা হারিয়ে নিজেরাই এখন ‘চৌকিদারের ভূমিকা পালন করছে। রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় এই দৃশ্য পরিলক্ষিত হচ্ছে ইদানীং। রাতের আঁধারে গৃহস্থরা হাতে লাঠি, রড ও টর্চ লাইট নিয়ে বেরিয়ে পড়ছেন রাস্তায়। রাতভর চক্কর কাটছেন এলাকায় এলাকায়। সম্প্রতি রাজধানী আগরতলা সহ রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় নিশিকুটুম্বরা হাত ছাফাই করছে নিয়মিত ভাবে। গৃহস্থের বাড়িঘর সহ ব্যবসায়ীদের দোকানপাট সব কিছুতেই হাত দিচ্ছে নিশিকুটুম্বের দল। মানুষকে করছে সর্বস্বান্ত। সাধারণ কুড়ে ঘর থেকে শুরু করে অট্টালিকাসম প্রাসাদেও নির্দ্বিধায় প্রবেশ করছে চোরচক্রের পাণ্ডারা। প্রতিটি ঘটনার পর সর্বস্বান্ত মানুষ তাদের অসহায়ত্ব প্রকাশ করে নিরাপত্তার স্বার্থে দ্বারস্থ হচ্ছে পুলিশের। পুলিশ নিয়ম মাফিক ঘটনাস্থলগুলিতে এসে সরেজমিনে পরিদর্শন করছে। এবং রুজু করছে মামলা। পুলিশ কুকুর থেকে শুরু করে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদেরও জরুরি তলবে নিয়ে আসা হচ্ছে অকুস্থলগুলোতে। কিন্তু সবশেষে পুলিশ প্রসব করছে অশ্বডিম্ব (!)। অর্থাৎ চুরি যাওয়া মূল্যবান জিনিস উদ্ধার ও চোরচক্রের পাণ্ডাদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে পুলিশের সাফল্য ভগ্নাংশেও হিসাব করা যায় না। স্বাভাবিক ভাবেই ছয়হীন পুলিশের উপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছে সাধারণ মানুষ। নিশিকুটুম্বের দল পুলিশকেও নিস্তার দেয়নি। রাজ্য পুলিশের গর্ভগৃহ (পড়তে হবে পুলিশের সদর দফতর) হাত দিয়েছে। নিরাপত্তার বেষ্টনির মধ্যেই পুলিশের সদর দফতর থেকে রাতের আঁধারে লিগ্যাল সেলের মূল্যবান ফাইল চুরি করে নিয়ে যায় তস্কর বাহিনী। ঘটনার সময় পুলিশ কিছুই করতে পারেনি। পরবর্তী সময় রাজধানীর পুলিশ সিসি ক্যামেরার ছবি দেখে চোর চক্রের পান্ডাদের শনাক্ত করে এবং তাদের করে গ্রেফতারও। উদ্ধার করা হয় চুরি যাওয়া মূল্যবান ফাইল। চোরের আস্ফালনে খোদ পুলিশই যখন নাস্তানুরূপ, তখন সাধারণ মানুষের কি অবস্থা হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। তবে মানুষ চোরের ভয়ে সিটিয়ে না গিয়ে রাস্তায় নেমে যায়। পুলিশের উপর অনাস্থা প্রকাশ করে নিজেদের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিজেরাই হাতে তুলে নেয়। রাজধানীর সিংহভাগ পাড়াতেই মানুষ ছোট ছোট গ্রুপ তৈরি করে নিয়েছে। পালাবদল করে প্রতি রাতেই নগরবাসীরা নগরকে সুরক্ষিত রাখতে বেরিয়ে পড়ে রাস্তায়। একেবারেই তারা সজ্জিত থাকে চৌকিদারের আদলে। হাতে থাকে লম্বা টর্চ লাইট। লোহার রড, লাঠি ও কাঠের তক্তা। রীতিমতো তস্কর বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে নগরবাসী রাতের আগরতলাকে সুরক্ষিত রাখার কাজে ব্রতী হয়েছেন। এই দৃশ্য রাজধানীর সর্বাংশে। চৌকিদারদের ন্যায় রাস্তায় থাকা কারেন্টের লোহার পিলারগুলিতে (ঘন্টির আদলে) শব্দ করে মানুষকে জাগ্রত রাখে। কোনো কোনো জায়গায় এলাকার চৌকিদাররা ‘জাগতে রহো এই আওয়াজও তুলে রাতের তিলোত্তমায়। অর্থাৎ নগরবাসীকে নিশ্চিন্তে রাত্রিযাপন করার পাশাপাশি তাদেরকে সতর্ক করার সমস্ত কাজই করছে হালের চৌকিদাররা। এলাকার মধ্যে কোনো অপরিচিত মানুষ ঘোরাফেরা করলেই গোয়েন্দার ন্যায় তার উপর তক্কে তক্কে নজর রাখেন তারা। কখনো রাস্তায় আটকিয়ে করেন জিজ্ঞাসাবাদ। তবে অবশ্যই পথচলতি মানুষের কোনো সমস্যার সৃষ্টি করেন না নগরের এই চৌকিদার বাহিনী। শুধু আগরতলা নয়। জেলা ও মহকুমাগুলিতেও চোরের দাপট। সংশ্লিষ্ট অঞ্চলেও মানুষ রাজ্য পুলিশের উপর আস্থা হারিয়ে নিজেরাই নিজেদের সম্পত্তি সুরক্ষিত রাখতে চৌকিদারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। জেলা ও মহকুমার বিভিন্ন জায়গায় রাতের আঁধারে মানুষ পালা বদল করে ডিউটি দিচ্ছে। নিজেদের ঘর সম্পত্তিকে রক্ষা করতে সাধারণ মানুষের কাছে আর কোনো বিকল্প নেই। এই কারণেই রাজ্যের রাষ্ট্রপতি কালার্স পদক প্রাপ্ত পুলিশের উপর বীতশ্রদ্ধ হয়ে চোর দমনে রাতের আঁধারে রাস্তাঘাট দখল নিচ্ছে সাধারণ মানুষ। কারণ তাদের কাছে আর কোনো বিকল্প রাস্তা খোলা নেই। দেরিতে হলেও সম্বিৎ ফিরেছে রাজ্য আরক্ষা প্রশাসনের। বিশেষ ভাবে পশ্চিম জেলায়। আরক্ষা দফতর বাধ্য হয়েছে পশ্চিম জেলার পুলিশ সুপার পরিবর্তন করতে। বর্তমানে জেলার পুলিশ সুপারের দায়িত্ব নিয়েছেন একসময়ের গোয়েন্দা এসপি শংকর দেবনাথ। সবে মাত্র তিনি দায়িত্ব নিয়েছেন। আরো কিছুদিন অতিক্রান্ত হলে বোঝা যাবে এসপি শংকর দেবনাথের নেতৃত্বে রাজধানীর অপরাধ চক্রের লাগাম টানতে পুলিশ কতটা সফল হয়। নগরের মানুষের বক্তব্য অনুযায়ী, হালের রাজ্য পুলিশ রাতের আগরতলায় ‘সিসি ক্যামেরা’র উপর নির্ভরশীল হয়ে যায়। রাজধানীতে পুলিশের গতিবিধি অনেকটাই কম থাকে। পুলিশের ধারণা, কোনো অপরাধ সংঘটিত হলে গোপন ক্যামেরার সাহায্য নিয়ে তারা অপরাধ চক্রের চাইদের গ্রেফতার করবে। এই কারণেই রাজধানীতে বিট পুলিশ থেকে শুরু করে থানা পুলিশের টহলের সংখ্যা অনেকটাই কমে গিয়েছে। তবে বেশ কিছু জায়গাতে পুলিশ নাকা পয়েন্ট তৈরি করেছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় এই সমস্ত নাকা পয়েন্ট ভেদ করেই তস্কর বাহিনীর পান্ডারা প্রতিনিয়ত হাত সাফাই করছে। পুলিশ তাদের কেশাগ্র স্পর্শ করতে পারছেনা। অথচ সাধারণ মানুষ চোর চক্রের পাণ্ডাদের আটক করে তুলে দিচ্ছে পুলিশের হাতে। অবাক করার মতো ঘটনা, আমজনতা তস্কর বাহিনীর নিরাপদ আশ্রয়স্থল খুঁজে পেলেও পুলিশ তাদের টিকির নাগাল পায়নি। তবে এটাও বাস্তব এই সমস্ত বিষয়ে সাধারণ মানুষের উচিত পুলিশকে সাহায্য করা। রাজধানীর বেশ কয়েকটি ঘটনার ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে ভিডিও ফুটেজ থেকে নিশিকুটুম্বদের শনাক্ত করে পুলিশের হাতে তাদের ছবি তুলে দিলেও পুলিশ চক্রের পান্ডাদের জালে তুলতে পারেনি। স্বাভাবিক কারণেই থাকি উর্দির উপর আস্থা হারিয়ে নিজেরাই চলে যান চোরচক্রের পান্ডাদের আশ্রয়স্থলে। এটা অবশ্যই পুলিশের জন্য। লজ্জাক্ষর। সাধারণ মানুষের প্রশ্ন কবে নাগাদ হুঁশ ফিরবে রাজ্যের আরক্ষা কর্মীদের।