বিশেষ প্রতিনিধি,২৬অক্টোবর।।
সাংবাদিকদের প্রশ্ন বাণে যখন রাজনৈতিক নেতারা বিদ্ধ হন, ব্যর্থ হন সদুত্তর দিতে তখন চোখে-মুখে এমন একটা ভাব থাকে প্রশ্ন উত্থাপনকারী সাংবাদিক যেন তার বিরোধী শিবিরের দূত। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে তাকে সঙ্গে সঙ্গেই এই তকমা দেওয়াটার চেষ্টা করে থাকেন অধিকাংশ রাজনীতিকরা।
রাজ্যের রাজনৈতিক নেতারা অবশ্যই এই গন্ডির বাইরে নয়।আর সুবল ভৌমিকের মতো ছয়বার দল পাল্টানো রাজনীতির ব্যাপারীর হৃদস্পন্দন তো সব সময় বেড়ে থাকে। কারণ রাজ্য রাজনীতিতে সুবলের কীর্তির অধিক সুনাম রয়েছে।রাজধানীতে এই সমস্ত ঘটনা ওপেন সিক্রেট।হামেশায় শুনা যায় লোকমুখে।
রাজনৈতিক নেতা সুবল ভৌমিক বিভিন্ন দল পরিক্রমা করে এখন তিনি তৃণমূল কংগ্রেসে। রাজনৈতিক বাণিজ্য টিকিয়ে রাখার জন্য সুবলের হাতিয়ার এখন ঘাসফুল শিবির।তিনি রাজ্য তৃণমূলের কনভেনার।গত ২১ অক্টোবর শহরের একটি হোটেলে তৃণমূল কংগ্রেসে সাংবাদিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।এই সাংবাদিক সম্মেলনে আমন্ত্রিত ছিলো “জনতার মশাল”। যথারীতি “জনতার মশাল”র প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিক বৈঠকে। প্রশ্ন-উত্তর পর্বের সময় “জনতার মশাল”র প্রতিনিধি তৃণমূল নেত্রী সুস্মিতা দেবের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করেছিলেন,” রাজধানীর দুই থানা এলাকায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদ যাত্রার উপর প্রশাসন নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলো।এই দুই থানার এরিয়ার বাইরে কেন তৃণমূল পদ যাত্রার আয়োজন করে নি?”
সুস্মিতা দেব প্রশ্ন শুনে ব্যাটন ছেড়ে দেন সুবল ভৌমিকে। তৃণমূল কনভেনার সুবলের উত্তর, ” প্রশাসন আমাদের তাড়িয়ে দিলে কি চলে যাবো।যদি বলে “নো ম্যানস ল্যান্ড’-এ যেতে তাহলে কি যাবো?”
পাঠকরা আপনারা বিচার করুন প্রশ্নের সঙ্গে সুবল ভৌমিকের এই উত্তর কতটা যুক্তি সঙ্গত। প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারেননি সুবল। আর সুবল ভৌমিকের কাছ থেকে নতুন তথ্য পাওয়া গেল রাজনৈতিক দলগুলো “নো ম্যানস ল্যান্ডে”ও মিছিল,মিটিং করে থাকে।আসলে এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গেলে সুবলের ঝোলা থেকে বেড়াল বেরিয়ে আসবে।প্রকাশ্যে আসবে সুবলের নেতৃত্বে দলের সাংগঠনিক দুর্বলতা। কারণ আগরতলাতে অভিষেকের পদ যাত্রা বানচাল হওয়ার পর আমবাসাতে করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিলো।কিন্তু সুবল স্পস্ট ভাবে জানিয়ে দেন,”সেখানে পদযাত্রা করতে পারবেনা,কারণ তার লোকবল নেই।”সুবলের এই কথা শুনে অনেকটা আশা হত হয়েছিলেন বঙ্গ নেতৃত্ব।খবর তৃণমূল অন্দরের। এই জন্যই “জনতার মশাল”র প্রতিনিধির প্রশ্নে গাত্রদাহন শুরু হয়ে গিয়েছিলো ছয় বার দল পাল্টানো তৃণমূল নেতা সুবলের।
সুবল প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে না পেরে বিড়বিড় করতে করতে সুস্মিতা দেবের কানে পড়ে কিছু একটা বলেছেন। তারপর সুস্মিতা দেব যা বললেন, তার উপপাদ্য দাঁড়ায় বিজেপি সরকারের প্রশাসনিক ভয়ে পিঁছু হটেছে তৃণমূল। অর্থাৎ প্রশ্নের সঠিক উত্তর না দিতে পেরে এড়িয়ে গেলেন প্রদেশ তৃণমূলের দুই মুখ সুবল-সুস্মিতা।
সুবল ভৌমিক তার শরীরী ভাষা এমন করলেন, যেন প্রশ্ন কর্তা সাংবাদিক ভিন্ন গ্রহ থেকে এসেছেন। বাস্তব অর্থে সুবল ভৌমিকের মতো নেতাদের কাছে অনেক প্রশ্নের উত্তর থাকবেনা।সুবল ভৌমিক নিজেই জমির দাদালি থেকে শুরু করে চিটফান্ড ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। বিজেপি,সিপিআইএম নেতৃত্ব এই ধরণের অভিযোগ তুলে সরব হয়েছে বহুবার। সুবলের এই কর্মকান্ড সম্পর্কে ওয়াকিবহাল সাধারণ মানুষ।সম্প্রতি বিজেপির বিধায়ক অরুণ চন্দ্র ভৌমিক প্রশ্ন তুলেছিলেন, সুবল ভৌমিকের এত সম্পত্তি কোথায় থেকে এসেছে? তিনি সুবলকে জমির দাদাল বলেও কটাক্ষ করেন।
ছয় বার দল পাল্টানো সুবল ভৌমিক যে নিজের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য রাজনীতি করেন তা বুঝতে অসুবিধা হয়নি আমজনতার।হঠাৎ করে গেঞ্জি-হাফপ্যান্ট পরিধান করে আরএসএস’র ডেরায়, আবার কিছুদিন পর মাথায় গান্ধীর টুপি,এখন আবার হাতে ঘাসফুল।আসলে সুবল কখনো কংগ্রেস, কখনো গ্রামীণ কংগ্রেস, আবার কখনো বিজেপিকে সামনে রেখে নিজের ব্যবসার বিস্তার করেছেন।অভিযোগ রাজনীতিকদের। তৃণমূলের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে বা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ভালবেসে সুবল তৃণমূল করছে তা নয়।শুধু কিছু উপার্জনের লক্ষ্যে রাজনীতির আবর্তে বসে আছে। বলছেন রাজনৈতিক অঙ্গনের লোকজন।
সুবল ভৌমিকের বিরুদ্ধে আরো বহু বিস্ফোরক তথ্য রয়েছে “জনতার মশাল”র হাতে।সেগুলি উপযুক্ত সময়ে জনসম্মুখে নিয়ে আসা হবে।তখন সুবলের জন্যই কালিমালিপ্ত হবে তৃণমূল কংগ্রেসকেও।তাই সাধু সাবধান। “জনতার মশাল” কাউকে পরোয়া করে না। ক্ষমতা রাখে কবর থেকে নির্যাস তুলে আনার।লড়াই করে সামনে দাঁড়িয়ে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *