ডেস্ক রিপোর্টার, ১১সেপ্টেম্বর।।
জমি সংক্রান্ত ইস্যু কেন্দ্র করে দুই জাতি গোষ্ঠীর সংঘর্ষে তপ্ত কিল্লা থানার রাইয়াবাড়ি। দুষ্কৃতিদের আক্রমণে রক্তাক্ত হয়েছেন ১০ জন। প্রকাশ্যে দিবালোকে জনজাতি গোষ্ঠীর লোকজন ধারালো অস্ত্র নিয়ে সংঘবদ্ধ ভাবে রাইয়াবাড়িতে বসবাসকারী সংখ্যালঘুদের উপর অতর্কিত আক্রমণ করে। দুষ্কৃতিদের আক্রমনের ভয়ে গ্রামের মানুষ এলপাথারি দৌড়ে কোন রকমে প্রাণ রক্ষা করে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসে কিল্লা থানার পুলিশ। কিন্তু পুলিশের সামনেই দুষ্কৃতীরা তাদের হামলা চালিয়ে যায়।
অথচ পুলিশ ছিল নিশ্চুপ। অভিযোগ গ্রামবাসীদের। পুলিশের এই ভূমিকার প্রতিবাদে উত্তেজিত গ্রামবাসীরা কিল্লা থানার ওসির গাড়ি পুড়িয়ে দেয়। তাও আবার পুলিশের সামনেই। রবিবার দুপুরের এই ঘটনার পর থেকেই থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে রাইয়া বাড়িতে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ রাখতে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত নিরাপত্তা বাহিনী। গোটা অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে পুলিশ, টিএসআর ও সিআরপিএফ। সঙ্গে সাদা পোশাকের পুলিশ। আক্রান্তদের পক্ষ থেকে কিল্লা থানায় দায়ের করা হয়েছে মামলা। আহত গ্রামবাসীদের চিকিৎসা চলছে গোমতীর জেলা হাসপাতাল ।সব মিলিয়ে বাগমা বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক তথা রাজ্যের উপজাতি কল্যাণ দপ্তরের মন্ত্রী রামপদ জমাতিয়ার গড়ে এখন বেরিয়ে আসছে বুদবুদে সাম্প্রদায়িক বিষ বাষ্প। তবে পরিস্থিতির লাগাম টানতে তৎপর প্রসাশন। নজর রাখা হচ্ছে গোটা ঘটনার দিকে।
খবর অনুযায়ী, দীর্ঘদিন ধরেই রাইয়াবাড়ি সংলগ্ন এলাকায় জনজাতি এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে জায়গা সংক্রান্ত বিবাদ চলছিল। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে কয়েক দফায় জমি নিয়ে ঝামেলা হয়েছিলো উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে।সমস্যা উকি দিলেই পুলিশ প্রশাসনের হস্তক্ষেপে বিক্ষোভ প্রশমিত হতো সাময়িক ভাবে। তবে কখনো চূড়ান্ত সমাধান সূত্র বের হয়নি। রবিবার দুপুরে ফের একই ইস্যুতে অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠে কিল্লার রাইয়া বাড়ি। সংখ্যালঘু গ্রামবাসীদের বক্তব্য, এদিন দুপুরে আচমকা জনজাতি অংশের লোকজন ধারালো অস্ত্রশস্ত্র, গুলটি হাতে নিয়ে গ্রামে প্রবেশ করে। গ্রামবাসীরা কিছু বুঝে উঠার আগেই জনজাতিরা গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে ঢুকে অতর্কিতে হামলা চালায়। নারী – পুরুষ, শিশু, বৃদ্ধ কেউকে ছাড় দেয়নি। গণহারে দুষ্কৃতীরা ধারালো অস্ত্রের আঘাতে রক্তাক্ত করে গ্রামবাসীদের। ঘটনাস্থলে দুষ্কৃতীদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে গ্রামবাসীরা রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।
অসহায় গ্রামবাসীরা সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি জানায় কিল্লা থানাতে। জরুরী তলবে অকুস্থলে ছুটে আসে পুলিশ। কিন্তু পুলিশের সামনেই হামলা চালায় দুষ্কৃতীরা। কিন্তু পুলিশ ছিলো ঠোঁট জগন্নাথ। অভিযোগ গ্রামবাসীদের। খবর পেয়ে আশপাশ অঞ্চলের মানুষ ছুটে আসে। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। পুলিশের এই নিষ্ক্রিয়তার কারণে চটে যায় গ্রামবাসীরা। উত্তেজিত গ্রামবাসীরা ঘটনাস্থলে থাকা পুলিশের একটি জিপ গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। তখন পরিস্থিতি আরো উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। যদিও পুলিশ উত্তেজিত গ্রামবাসীকে বুঝিয়ে সুজিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে। খবর পেয়ে ঘটনস্থলে ছুটে যান গোমতী জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদীপ পাল, রাধাকিশোরপুর থানার ওসি বাবুল দাস সহ বিশাল পুলিশ ও টিএসআর বাহিনী।
রাইয়াবাড়িতে বসবাসকারী সংখ্যালঘু অংশে মানুষের বক্তব্য, বহু বছর ধরেই তারা এই এলাকাতে বসবাস করছে। জায়গাটি ফরেস্ট রিজার্ভের অন্তর্গত। এই অঞ্চলটিকে কেন্দ্র করে তারা কৃষি কাজ শুরু করে। এবং কৃষি থেকে উপার্জিত অর্থ দিয়ে সংসার প্রতিপালন করে।
গ্রামবাসীদের কথায়,গত কয়েকমাস আগে আচমকা পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের জনজাতিরা রাইয়া বাড়ি অঞ্চলটি তাদের বলে দাবি করে। চেষ্টা করে যবর দখলের। এই নিয়েই শুরু হয় বিপত্তি। জনজাতিদের এই দাবি মানতে নারাজ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজন। এরপর থেকেই দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে শুরু হয় ঠান্ডা লড়াই। শেষ পর্যন্ত এই ইস্যু কেন্দ্র করে রক্তাক্ত হয় রাইয়াবাড়ি।
জনজাতি অংশের লোকজনের বক্তব্য, রাইয়াবাড়ি অঞ্চলটি তাদের।কারণ তাদের কাছে রয়েছে এই অঞ্চলের পাট্টা। স্বাভাবিক ভাবেই জমিটিতে অন্য কাউকে বসবাস করতে দেওয়া হবে না।