ডেস্ক রিপোর্টার, ৩নভেম্বর।
              শীঘ্রই এনএলএফটিতে অবসান   হতে পারে বিশ্বমোহনের যুগ।বিশ্বমোহন রাজ্যের নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন এনএলএফটির চেয়ারম্যান।২৪- র আগেই সমাপ্ত হবে আত্মসমর্পণ পর্ব।বিশ্বমোহনের আত্মসমর্পন নিয়ে গুঞ্জন চলছে স্বরাষ্ট্র দপ্তরে।
      ১৯৮৯ সালে রাজ্যের মাটিতে জন্ম নিয়েছিল নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট অফ ত্রিপুরা । যায় সংক্ষিপ্ত নাম এনএলএফটি। নেতা বিশ্বমোহন দেববর্মা। মূলত খ্রিস্টান ধর্মের ব্যাপটিস্ট সম্প্রদায়ের সমর্থন নিয়েই হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছিলেন বিশ্বমোহন। রাজ্যের বুকে বহু সাধারণ মানুষের রক্ত ঝরিয়েছে বিশ্বমোহন। বাঙালিদের করেছে গনহত্যা। তার উদ্দেশ্য ছিলো স্বাধীন ত্রিপুরা গঠনের। স্বাধীন ত্রিপুরার স্বপ্ন ফেরী করে বিশ্বমোহন জনজাতি যুবকদের পরিচালিত করেছিলো বিপথে। এবং বাঙালি সম্প্রদায়ের মানুষের বিরুদ্ধে বিষ বপন করেছিলো জনজাতিদের মনে। রাজ্য স্বরাষ্ট্র দপ্তরের মোস্ট ওয়ান্টেড অপরাধীদের তালিকার প্রথম নাম বিশ্বমোহন। রাজ্য সরকার তার মাথার দাম ধার্য্য করেছে ১০লক্ষ টাকা। কল্যাণপুরের সুমন্ত পাড়া থেকে উঠে আসা জঙ্গি নেতা বিশ্বমোহন এক সময় ছিলেন ত্রাস। পুলিশ প্রশাসন থেকে সাধারণ মানুষ বিশ্বমোহনের অস্ত্রের ঝঙ্কারে ভয়ে জর ভরত হয়ে থাকতো। ধীরে ধীরে কালের বিবর্তনে বিশ্বমোহনের এনএলএফটির শক্তি ক্ষয় হয়ে যায়। বিশ্বমোহনের এনএলএফটি এখন অতীতের ছায়া।তাদের বিষাক্ত নখ দন্তের বিষও ফুরিয়ে গিয়েছে।
গোয়েন্দার তথ্য অনুযায়ী, ২৪- র আগেই আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারেন এনএলএফটির চেয়্যারম্যান বিশ্বমোহন দেববর্মা। জঙ্গি নেতা বিশ্বমোহনের আত্মসমর্পন নিয়ে গুঞ্জন চলছে স্বরাষ্ট্র দপ্তরের শীর্ষ স্তরেও। জোর আলোচনা চলছে দিল্লিতেও।কারণ বিশ্বমোহন দেববর্মা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের উপস্থিতিতে  দিল্লিতে আত্মসমর্পণ করবেন বলে শর্ত দিয়েছেন। তিনি ত্রিপুরায় আত্মসমর্পন করবেন না। অর্থাৎ লাইম লাইটে আসার জন্য দেশের রাজধানীতে বসে বিশ্বমোহন অস্ত্র বিরতি ঘোষণা করে স্বাভাবিক জীবনে আসতে চাইছেন।
     সম্প্রতি তিপ্রামথার নেতা প্রদ্যুৎ কিশোর দেববর্মন এনএলএফটিকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন,  বন্দুক কিছু হবে না। জঙ্গি জীবন ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে এসে তিপ্রাসাদের স্বার্থে কাজ করার জন্য।
    রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলছেন, প্রদ্যুৎ কিশোরের এই বক্তব্য ছিল যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ।কারণ প্রদ্যুৎ চাইছেন বিশ্বমোহনকে আত্মসমর্পণ করিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার থেকে কিছু দাবি আদায় করতে।তারমধ্যে প্রথম দাবী, তিপ্রাসাদের জন্য বিধানসভার আসন সংখ্যা বাড়ানো। দেশের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর সঙ্গে প্রায় একই রকম চুক্তি করেই আত্মসমর্পণ করেছিলেন টিএনভির সুপ্রিমো বিজয় রাংখল। বিজয় রাংখলের অস্ত্র বিরতির ঘোষণার মধ্য দিয়ে রাজ্য বিধানসভায় দুইটি উপজাতি সংরক্ষিত আসন উপহার পেয়েছিল জনজাতিরা।বিজয় রাংখল বর্তমানের রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল তিপ্রামথার সভাপতি।  জঙ্গি নেতা বিশ্বমোহন ও তার দল এনএলএফটি  সদস্যদের প্রদ্যুৎ কিশোরের বন্দুক ছাড়ার বার্তার পর পরই তৈরি হয় নতুন ক্লাইম্যাক্স। তীব্র হয় বিশ্বমোহন দেববর্মার আত্মসমর্পণের  গুঞ্জন।
গোয়েন্দার তথ্য বলছে, ইতিমধ্যে অদৃশ্যে থাকা মধ্যস্থতাকারীর মাধ্যমে বিশ্বমোহনের সঙ্গে আলোচনা চলছে। গোটা বিষয়টি তদারকি চলছে  দিল্লি থেকে। বিশ্ব মোহনের পক্ষ থেকেও বেশ কিছু শর্ত আরোপ করা হয়েছে। সমস্ত দৃষ্টি কোন থেকেই
মধ্যস্থতাকারী আলোচনা জারি রাখছেন এনএলএফটির সুপ্রিমোর সঙ্গে। তবে আত্মসমর্পণ প্রক্রিয়া এখনো চূড়ান্ত হয় নি। সবটাই আছে আলোচনার পর্যায়ে।
         এনএলএফটির চেয়ারম্যান বিশ্বমোহনের আত্মসমর্পন সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে ওয়াকিবহাল রাজ্য পুলিশের প্রথম সারির অফিসাররা। কিন্তু বিষয়টি চূড়ান্ত না হওয়াতে তারা আনুষ্ঠানিক ভাবে মুখ খুলছেন না। প্রাথমিক ভাবে তারা অত্যন্ত সন্তর্পনে কাজটি শেষ করতে চাইছে।
  গোয়েন্দার তথ্য অনুযায়ী, ওপার সীমান্তের খবর, বিশ্বমোহন আত্মসমর্পনের বিষয়ে এক পা এগুলে, দুই পা পিছিয়ে যাচ্ছেন। কারণ দলের অন্যান্য জঙ্গি নেতারা চাইছেন না বিশ্বমোহন আত্মসমর্পন করোক। তা নিয়ে বাংলাদেশে বিশ্বমোহনের সংসারে জ্বলছে আগুন। তাছাড়া বিশ্বমোহন বাংলাদেশে বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে কোটি কোটি টাকা লগ্নিও করেছেন।এই পরিস্থিতিতে বিশ্বমোহন কি আক্ষরিক অর্থে আত্মসমর্পনের পথে হাঁটবেন? না, কি থেকে যাবেন জঙ্গি জীবনকে আখরে ধরেই? এই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে প্রশাসনিক স্তরে। ২৪-র আগে যদি বিশ্বমোহনকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা যায়, তাহলে এটা নিঃসন্দেহে কেন্দ্র ও  রাজ্যের বিজেপি সরকারের জন্য হবে রাজনৈতিক মাস্টার স্ট্রোক।বলছেন রাজনীতিকরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *