দীর্ঘ ১৭ বছর পর লন্ডন থেকে বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করে গণসংবর্ধনা মঞ্চে এসে তারেক রহমান বলেন আই হ্যাভ আ প্ল্যান’।প্রায় ১৬ মিনিট বক্তব্য দেন তিনি । বিমানবন্দর থেকে বাসে করে রওনা হয়ে তিন ঘণ্টার বেশি সময় ধরে নেতা-কর্মীদের হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানাতে জানাতে পূর্বাচলে জুলাই ৩৬ এক্সপ্রেসওয়ে সড়কে স্থাপিত সংবর্ধনা মঞ্চে ওঠেন খালেদা জিয়ার পুত্র।

                             #সমীরণ রায় #

                               ____________

ঢাকা, ২৬ ডিসেম্বর।।
    বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বললেন, ‘আই হ্যাভ আ প্ল্যান।’ তবে তাঁর সেই পরিকল্পনা খোলাসা না করলেও তিনি বলেছেন, দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তনের জন্য যদি সেই প্ল্যান (পরিকল্পনা) বাস্তবায়ন করতে হয়, তাহলে প্রত্যেক মানুষের সহযোগিতা লাগবে। একই সঙ্গে যেকোনো মূল্যে দেশের শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার প্রত্যয় জানান তিনি। তিনি যেকোনো উসকানির মুখে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দেড় বছরের মাথায় ‘মব’ আক্রমণসহ অপরাধমূলক নানা কর্মকাণ্ডে দেশের মানুষের মধ্যে যখন অনিশ্চয়তা, উদ্বেগ দেখা দিয়েছে এমন সময় দেশে ফিরে এই প্রত্যয় জানালেন তারেক রহমান। 
বৃহস্পতিবার  বিকেলে দীর্ঘ ১৭ বছর পর লন্ডন থেকে বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করে গণসংবর্ধনা মঞ্চে তিনি এ কথা বলেন। প্রায় ১৬ মিনিট বক্তব্য দেন তারেক রহমান। বিমানবন্দর থেকে বাসে করে রওনা হয়ে তিন ঘণ্টার বেশি সময় ধরে নেতা-কর্মীদের হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানাতে জানাতে পূর্বাচলে জুলাই ৩৬ এক্সপ্রেসওয়ে সড়কে স্থাপিত সংবর্ধনা মঞ্চে আসেন তিনি। বেলা ১১টা ৩৯ মিনিটে তাকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বিজি-২০২ ফ্লাইটটি ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দরে অবতরণ করে। পরে শাহজালাল বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে তারেক রহমানকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। এ সময় বিমানবন্দর থেকে গণসংবর্ধনা মঞ্চ পর্যন্ত লাখো মানুষের ঢল নামে নেতাকে এক নজর দেখতে। বিমানবন্দরে সব আনুষ্ঠানিকতা ও দলের নেতা-কর্মীদের শুভেচ্ছায় সিক্ত তারেক রহমান পূর্বাচলের ৩০০ ফুট সড়কে তাকে সংবর্ধনা দিতে নির্মিত মঞ্চের উদ্দেশে বাসে করে রওনা করেন দুপুর সাড়ে ১২টার পর। বিমানবন্দর থেকে প্রায় সাত কিলোমিটার দূরত্বে নির্মিত ওই মঞ্চে তিনি এসে পৌঁছান বেলা ৩টা ৫০ মিনিটে।সংবর্ধনা অনুষ্ঠান শেষে বাংলাদেশ সময় বিকেল ৫টা ৫৫ মিনিটে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে গুরুতর অসুস্থ মমতাময়ী মায়ের কাছে যান তিনি। দীর্ঘ সময় পর দেশের মাটিতে মাকে কাছে পেয়ে তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।তারেক রহমান তার বক্তব্যে বলেন, আমরা দেশের শান্তি চাই। মার্টিন লুথার কিং-নাম তো শুনেছেন না আপনারা? তার একটি বিখ্যাত ডায়ালগ আছে, আই হ্যাভ আ ড্রিম। এই বাংলাদেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে আপনাদের সকলের সামনে আমি বলতে চাই, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের একজন সদস্য হিসাবে আপনাদের সামনে আমি বলতে চাই, আই হ্যাভ আ প্ল্যান, পিপল অব মাই কান্ট্রি, ফর মাই কান্ট্রি। এই পরিকল্পনা দেশের মানুষের স্বার্থে।’
পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সবার সহযোগিতা চেয়ে তারেক রহমান বলেন, ‘দেশের উন্নয়নের জন্য, দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তনের জন্য যদি সেই প্ল্যান, সেই কার্যক্রম, সেই পরিকল্পনাকে বাস্তবায়ন করতে হয়, প্রিয় ভাইবোনেরা এই জনসমুদ্রে যত মানুষ উপস্থিত আছেন, এই সারা বাংলাদেশে গণতন্ত্রের শক্তি যত মানুষ উপস্থিত আছেন, প্রত্যেকটি মানুষের সহযোগিতা আমার লাগবে। আপনারা যদি আমাদের পাশে থাকেন, আপনারা যদি আমাদেরকে সহযোগিতা করেন ইনশা আল্লাহ আমরা “আই হ্যাভ আ প্ল্যান” বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হব।’
মানুষ যেন নিরাপদে থাকতে পারে, সেই প্রত্যাশা ব্যক্ত করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা যে ধর্মের মানুষ হই, আমরা যে শ্রেণির মানুষ হই, আমরা যে রাজনৈতিক দলের সদস্য হই অথবা একজন নির্দলীয় ব্যক্তি হই, আমাদেরকে নিশ্চিত করতে হবে-যেকোনো মূল্যে আমাদের এই দেশের শান্তিশৃঙ্খলাকে ধরে রাখতে হবে। যেকোনো মূল্যে যেকোনো বিশৃঙ্খলাকে পরিত্যাগ করতে হবে। যেকোনো মূল্যে আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যাতে মানুষ নিরাপদ থাকতে পারে। শিশু হোক, নারী হোক, পুরুষ হোক-যেকোনো বয়স, যেকোনো শ্রেণি, যেকোনো পেশা, যেকোনো ধর্মের মানুষ যেন নিরাপদ থাকে এই হোক আমাদের চাওয়া।’
তারেক রহমান বলেন, ‘আসুন, আমরা সকলে মিলে প্রতিজ্ঞা করি যে ইনশা আল্লাহ আগামী দিনে দেশ পরিচালনার দায়িত্বে যারা আসবে আমরা সকলে নবী করিম সাল্লাল্লাহু সাল্লামের ন্যায়পরায়ণতা, সেই ন্যায়পরায়ণতার আলোকে আমরা দেশ পরিচালনার সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।’
বক্তব্য শেষ করার পর যখন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী (এ্যানি) অনুষ্ঠান শেষ করার ঘোষণা দিচ্ছিলেন, তখন আবারও মাইকের সামনে এসে তারেক রহমান বলেন, ‘মনে রাখবেন, উই হ্যাভ আ প্ল্যান। উই হ্যাভ আ প্ল্যান ফর দ্য পিপল, ফর দ্য কান্ট্রি। ইনশা আল্লাহ, আমরা সেই প্ল্যান বাস্তবায়ন করব।’
এদিকে, ১৭ বছর পর বাংলাদেশের মাটিতে তারেকের সঙ্গে ফিরল পরিবারের আদরের ‘জেবু’ও। বৃহস্পতিবার বেলা ১২টা নাগাদ বিএনপির তরফে জেবুর দেশে ফেরার কথা জানানো হয়েছে। সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে ছবিও। ক্যাপশনে লেখা রয়েছে, ‘দেশে ফিরেছে জেবু’! বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা ৩৯ মিনিটে (স্থানীয় সময় অনুযায়ী) লন্ডন থেকে সিলেট হয়ে ঢাকার হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরে অবতরণ করে তারেকদের বিমানটি। তারেকের সঙ্গে একই উড়ানে দেশে ফেরেন স্ত্রী জুবাইদা এবং কন্যা জাইমা। এর পর পরই সুদূর লন্ডন থেকে দেশে ফিরেছে তাদের পোষ্য জেবুও।অতীতে পোষ্যর সঙ্গে একাধিক ছবি সমাজমাধ্যমে ভাগ করে নিয়েছেন খালেদা-পুত্র। সেই থেকেই চর্চায় এসেছে জেবু। সাইবেরিয়ান প্রজাতির এই বিড়ালের বয়স এখন সাত বছর। উজ্জ্বল হলদেটে কমলা রঙা ঘন লোমে ঢাকা, শান্ত স্বভাবের এই বিড়ালকে এর আগে বিভিন্ন সময়ে নানা ছবি–ভিডিয়োয় তারেকের আশপাশে দেখা গিয়েছে। জেবু আদতে জাইমার পোষ্য হলেও পরিবারের সকলের সঙ্গেই দিব্যি বনিবনা রয়েছে তার। জেবু-প্রসঙ্গে সংবাদমাধ্যমে তারেক বলেছিলেন, ‘‘বিড়ালটি আমার মেয়ের বিড়াল। ও এখন অবশ্য সবারই হয়ে গিয়েছে। আমরা সবাই ওকে আদর করি।’’ এ হেন জেবুকে বাংলাদেশে আনার জন্য কম কাঠখড় পোড়াতে হয়নি। রীতিমতো আইনি প্রক্রিয়া মেনে যাবতীয় অনুমোদনপত্র জোগাড় করতে হয়েছে তারেকের পরিবারকে। বানাতে হয়েছে পাসপোর্টও।১৭ বছর আগে, ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ছেড়ে লন্ডনে পাড়ি দিয়েছিলেন তারেক। এত দিন ব্রিটেনেই স্ত্রী-কন্যাকে নিয়ে স্বেচ্ছানির্বাসনে ছিলেন তিনি। বৃহস্পতিবার দেশে ফিরেছে তাদের পরিবার। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন হওয়ার কথা।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *