রাজধানী ঢাকার সিরডাপ মিলনায়তনে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ আয়োজিত ‘সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার বর্তমান বাস্তবতা ও প্রত্যাশা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।

                          ।।*সমীরণ রায়* ।।
                       __________________

ঢাকা, ২৮ ডিসেম্বর।।
            গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর ২৬৭৩টি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। চলতি বছরের প্রথম ১১ মাসে ৯০ সংখ্যালঘু নাগরিক হত্যা ও রহস্যজনক মৃত্যুর শিকার হয়েছেন। এই সময়ে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ এনে দেশের বিভিন্ন স্থানে ৭৩টি সহিংস ঘটনা ঘটানো হয়েছে। এ ধরনের ঘটনায় চলতি ডিসেম্বর মাসেই দিপু চন্দ্র দাসসহ ৫ জন নিহত হয়েছেন।
শনিবার রাজধানী ঢাকার সিরডাপ মিলনায়তনে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ আয়োজিত ‘সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার বর্তমান বাস্তবতা ও প্রত্যাশা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি নির্মল রোজারিওর সভাপতিত্বে বৈঠকে সংখ্যালঘুদের অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহারে সুনির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতি তুলে ধরার এবং তা বাস্তবায়নে কর্মপরিকল্পনা প্রকাশের দাবি জানানো হয়। আলোচনায় অংশ নিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, শুধু ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ করা হয়, তা নয়। এখানে এমন একটা ফোর্স কাজ করে, যার পেছনে মূল শক্তি হলো রাজনৈতিক। তাদের লক্ষ্য দলবাজি, দখলবাজি ও কতৃত্ব প্রতিষ্ঠা। দীর্ঘ দিন ধরে রাজনৈতিক কলুষতায় রাষ্ট্রকে সংখ্যালঘু বিরোধী চর্চার ধারক হিসেবে রূপান্তর করা হয়েছে এবং নির্যাতন-নিপীড়ন অব্যাহত রয়েছে।

বাংলাদেশের জাতীয় মানবাধিকার কমিশন সংখ্যালঘু ও জাতিগত নিপীড়নের ঘটনায় ‘যথাযথ ভূমিকা নিতে পারছে না’।

তিনি আরো বলেন, গণভোটের প্রস্তাবনায় ধর্মীয় সংখ্যালঘু এবং নারীদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা হয়নি। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন সংখ্যালঘু ও জাতিগত নিপীড়নের ঘটনায় ‘যথাযথ ভূমিকা নিতে পারছে না’। তাই এ লক্ষ্যে এখন ‘ডাইভারসিটি কমিশন’ গঠন করতে হবে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকার সুরক্ষায় বৈষম্য নিরোধ আইনের খসড়াকে অধ্যাদেশে পরিণত করার আহ্বান জানান তিনি।
ধর্মভিত্তিক বিভাজনের রাজনীতি দেশের সামাজিক কাঠামোকে ক্রমশ দুর্বল করবে বলে মন্তব্য করেন অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে এ ধর্মভিত্তিক রাজনীতি আরো জটিল পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে। ধর্মভিত্তিক বিভাজনের রাজনীতি বৈশ্বিক অবস্থানের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সম্পর্ককেও দুর্বল করে দেবে। এটা শেষ বিচারে যে দেশের সার্বভৌমত্বকেই দুর্বল করবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন প্রতিবেশী ভারতকে যে ধরনের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে দেখে, একইরকম রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বাংলাদেশের নাগরিক ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের দেখা যাবে না। ভারতবর্ষে বর্তমানে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রতি যে আচরণগুলো হয়েছে, তা আমার দেশের সংখ্যালঘু যে জীবনমানের ক্ষেত্রে অনেক ক্ষেত্রে বিপত্তি সৃষ্টি করছে। এ ঘটনাগুলো সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীকে উৎসাহ জোগায়। ভারতবর্ষে কী হচ্ছে, তার দায়দায়িত্ব বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের নয়।


বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উত্থাপন করেন ঐক্য পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মনিন্দ্র কুমার নাথ। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায় দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার শিকার হচ্ছেন। সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষ, কিশোর-কিশোরীরা অতীতের ন্যায় হত্যা, নারী নির্যাতন-ধর্ষণ-গণধর্ষণ, উপাসনালয়ে হামলা-ভাঙচুর-লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ, জোরপূর্বক বাড়িঘর-জমি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান দখল, শারীরিক নির্যাতন ও জোরপূর্বক কর্মস্থল থেকে পদত্যাগ করানো, ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পালনে বাধা, অপহরণ, জোরপূর্বক চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধের শিকার হচ্ছে। চলমান বিচারহীনতার সংস্কৃতি দুর্বৃত্তদের উৎসাহিত করছে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *