বৈঠকে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষনার আগেই জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোটের দাবি জানায় জামায়াতে ইসলামী। আর বর্তমান সরকারের আমলে এখনই সনদের আইনি ভিত্তি চায় এনসিপি। তবে এতে আপত্তি জানিয়ে জাতীয় নির্বাচনের দিন গণভোটের পক্ষে মত দিয়েছে বিএনপিসহ বাংলাদেশের কয়েকটি দল।

                    *ঢাকা থেকে সমীরণ রায়*
              __________________________

গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ওই বছরের ৮ আগস্ট মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়। এরপর অন্তর্বর্তী সরকারের কর্মকাণ্ড ও আওয়ামী লীগ সরকার উ’ৎখাতের কর্মকাণ্ডকে বৈধতা দিতে কয়েকটি কমিশন গঠন করা হয়। এরই মধ্যে জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশন গঠন করা হয়। এ কমিশন রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে প্রণীত ‘জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫’ বাস্তবায়নে গণভোটের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হলেও ভোট কিভাবে এবং কখন হবে তা নিয়ে সমঝোতায় পৌছাতে পারেনি। রোববার বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশন বৈঠকে করে। তবে এ বৈঠকে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষনার আগেই জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোটের দাবি জানায় জামায়াতে ইসলামী। আর বর্তমান সরকারের আমলে এখনই সনদের আইনি ভিত্তি চায় এনসিপি। তবে এতে আপত্তি জানিয়ে জাতীয় নির্বাচনের দিন গণভোটের পক্ষে মত দিয়েছে বিএনপিসহ বাংলাদেশের কয়েকটি দল। ফলে দীর্ঘ আলোচনায় সনদ বাস্তবায়নে গণভোট কিভাবে হবে, সেই প্রশ্নে দলগুলো কাছাকাছি আসলেও ঐকমত্যে পৌছাতে পারেনি। এই অবস্থায় সনদ বাস্তবায়নের একাধিক বিকল্প প্রস্তাবসহ মূল সনদ সরকারকে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। রোববার সকালে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে সভাপতির বক্তব্যে জুলাই সনদ প্রণয়নের অগ্রগতি নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন কমিশনের সভাপতি ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বেশকিছু নির্দেশনাও দিয়েছেন বলে জানা গেছে। এরপর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে কমিশনের পক্ষ থেকে বিশেষজ্ঞ মতামতের ভিত্তিতে প্রণীত বাস্তবায়ন পদ্ধতির খসড়া তুলে ধরা হয়। কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের সভাপতিত্বে ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় সংলাপে উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার ও ড. মো. আইয়ুব মিয়া।সংলাপ শেষে অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানান, আলোচনায় জুলাই সনদ বাস্তবায়নের বিষয়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একধরণের ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। জনগণের সম্মতি অর্জনের জন্য গণভোটের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়েছে। দলীয় অবস্থান থেকে সরে এসে রাজনৈতিক দলগুলো একটি জায়গায় আসার জন্য সচেষ্ট হয়েছে। আগামী ৮ অক্টোবর আবারো বৈঠক হবে। ১৫ অক্টোবরের আগে এই প্রক্রিয়া শেষ করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। বৈঠক শেষে বিএনপির  স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, ১০৬ অনুচ্ছেদের আওতায় বিচার বিভাগের পরামর্শ নেওয়ার দাবি থেকে সরে এসেছে বিএনপি। তারা এখন জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫ নামে অধ্যাদেশ জারি এবং তারপরে গণভোটের পক্ষে। জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য জনগণের রায় নিতে সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণের দিনে আলাদা ব্যালটে গণভোটের কথা বলেছে বিএনপি। ওই ভোটে যদি জনগণ রায় দেয়, তাহলে সেটা বাস্তবায়ন করতে পরবর্তী সংসদ বাধ্য থাকবে। তবে বিএনপির এই প্রস্তাবের সঙ্গে দ্বিমত পোষন করে জুলাই সনদ বাস্তবায়নে আইনি ভিত্তি জন্য জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে গণভোটের দাবি জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ সাংবাদিকদের বলেন, জনগণ গণভোটে অভ্যস্ত না। তারা মনে করেন এটা যাতে জাতীয় নির্বাচনকে কোন ধরনের সমস্যা করা ছাড়া, নভেম্বর অথবা ডিসেম্বর গণভোট করতে পারেন। তফসিলের আগেও করতে পারেন। গণভোটের পর ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হতে কোন বাধা থাকবে না। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বৈঠকের পর সাংবাদিকদের বলেন, এখনই জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিতে হবে। কারণ পরবর্তী সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে তা বাদ দিতে পারে। তাই জনগণের অভিপ্রায় অনুযায়ী এ সরকারকেই বিষয়টি সমাধান করতে হবে। প্রসঙ্গত, আগামী ফেব্রুয়ারী মাসের প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে উৎসব মুখর করতে যথাযথ সম্ভব দ্রুত জুলাই সদন স্বাক্ষরের কাজ শেষ করতে চায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। কমিশনের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ইতোমধ্যে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল স্বাক্ষরের জন্য প্রতিনিধির নাম পাঠিয়েছে। কিন্তু আলোচনা আটকে আছে, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া নিয়ে। বাস্তবায়নের সুপারিশ চূড়ান্ত না করে স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যেতে পারছে না কমিশন। গত ১২ ফেব্রুয়ারি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে সাত সদস্যবিশিষ্ট জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয় এবং ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যক্রম শুরু করে কমিশন।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *