তারেক রহমানকে বরণ করতে দলের পক্ষ থেকে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোড মোড় থেকে পূর্বাচলমুখী সড়কের উত্তর অংশে দক্ষিণমুখী করে বাঁশ ও কাঠ দিয়ে তৈরি হচ্ছে ৪৮ ফুট বাই ৩৬ ফুটের বিশাল মঞ্চ।
#সমীরণ রায়#
_______________
ঢাকা, ২৫ ডিসেম্বর।।
দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে অবশেষে আজ বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আজ বাংলাদেশ সময় দুপুর ১১টা ৫৫ মিনিটে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবে তাকে বহনকারী বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট।
তারেক রহমানের দেশে প্রত্যাবর্তনের তারিখ নির্দিষ্ট হওয়ার পর থেকেই সারা দেশের বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। তাদের নেতাকে বরণ করতে দুইদিন আগেই সারা দেশ থেকে ঢাকায় আসা শুরু করেছেন নেতাকর্মীরা।
বুধবারও বিভিন্ন রুটের যানবাহনে ঢাকামুখী নেতাকর্মীদের ভিড় বাড়ছে। সড়ক, রেল ও নৌপথে একই চিত্র। নেতাকর্মীদের যাতায়াতের জন্য দলের পক্ষ থেকে ১০টি রুটে বিশেষ ট্রেন বুকিং দেওয়া হয়েছে।
তারেক রহমানকে বরণ করতে দলের পক্ষ থেকে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোড মোড় থেকে পূর্বাচলমুখী সড়কের উত্তর অংশে দক্ষিণমুখী করে বাঁশ ও কাঠ দিয়ে তৈরি হচ্ছে ৪৮ ফুট বাই ৩৬ ফুটের বিশাল মঞ্চ। বুধবারই মঞ্চের মূল কাঠামো তৈরির কাজ শেষ হয়ে গেছে।
আর বিমানবন্দর থেকে ৩০০ ফিট ও কাঞ্চন ব্রিজ পর্যন্ত থাকবে ৯০০ মাইক। এ উপলক্ষে সারা দেশেই নান্দনিক তোরণ, ব্যানার-ফেস্টুন করা হয়েছে। সংবর্ধনাস্থলের আশপাশে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। নেতাকে বরণের মাহেন্দ্রক্ষণের অপেক্ষা করছেন তার অনুসারীরা। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা আশা করছেন সংবর্ধনা অনুষ্ঠান বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
সারা দেশের, মহানগর, জেলা ও উপজেলা শাখাসহ তৃণমূল পর্যায় থেকেই আসছেন নেতাকর্মীরা। অনুষ্ঠানে বিএনপির শীর্ষ নেতারা ছাড়াও যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দলের নেতাকর্মীদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান বলেন, ‘দেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনই রাজপথ থেকে সফল হয়েছে। ১৯৭১ সালে জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। আর ৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া। ঠিক ২৪-এর ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে লন্ডন থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তারেক রহমান। অর্থাৎ দেশের পক্ষে প্রতিটি আন্দোলনেই নেতৃত্বের আসনে ছিল জিয়া পরিবার। সেই পরিবারের যোগ্য উত্তরসূরি ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবন শেষ করে দেশের মাটিতে আসছেন। সেটা তো আমাদের নেতাকর্মীদের আবেগের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তাই তাকে বরণ করতে আমাদের সর্বস্তরের জনশক্তি ও সাধারণ মানুষের মধ্যে উচ্ছ্বাসের কমতি নেই। সর্বোচ্চ সম্মান ও ভালোবাসায় নেতাকে বরণ করতে আমরা উন্মুখ। সে অনুযায়ী ৩০০ ফুট এলাকাসহ সারা দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্পটকে সাজানো হয়েছে বর্ণিল সাজে।
তারেক রহমানের সংবর্ধনায় যোগ দিতে দুই দিন আগে থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নেতাকর্মীরা ঢাকায় আসা শুরু করেছেন। অনেকে আবাসিক হোটেলে অবস্থান নিয়েছেন। বুধবার সকাল থেকেই গাবতলী ও সায়দাবাদসহ বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ডে ভিড় দেখা গেছে। এছাড়াও রেল ও নৌপথেও একই চিত্র। অনেকে ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে এসেছেন।
১০ রুটে বিশেষ ট্রেন: বিএনপির আবেদনের ভিত্তিতে ১০ জোড়া বিশেষ ট্রেনের অনুমোদন দিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে রয়েছে কক্সবাজার থেকে ঢাকা, জামালপুর-ময়মনসিংহ-ঢাকা, টাঙ্গাইল-ঢাকা, ভৈরববাজার-নরসিংদী-ঢাকা, গাজীপুরের জয়দেবপুর-ঢাকা সেনানিবাস, পঞ্চগড়-ঢাকা, খুলনা-ঢাকা, পাবনার চাটমোহর-ঢাকা সেনানিবাস, রাজশাহী-ঢাকা এবং যশোর-ঢাকা। কর্মসূচি শেষে প্রতিটি ট্রেন বিএনপির নেতাকর্মীদের নিয়ে ঢাকায় এসে আবার নির্ধারিত গন্তব্যে ফিরে যাবে। বিশেষ ট্রেন এবং অতিরিক্ত কোচে দলীয় নেতাকর্মীদের যাতায়াতের ক্ষেত্রে শর্ত হিসেবে ‘নির্বাচনি আচরণ বিধিমালা-২০২৫’ প্রতিপালন করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
উৎসবের আমেজ: দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে বরণ করে নিতে সারা দেশেই উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। তবে নেতাকর্মীদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে পূর্বাচল এলাকা। অনুষ্ঠানের একদিন আগেই আশপাশে অবস্থান নিয়েছেন অসংখ্য নেতাকর্মী। অনেকের হাতেই বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান, চেয়ারপারসন খালেদা ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ জিয়া পরিবারের ছবি শোভা পাচ্ছে। ব্যাপকভাবে বিক্রি হচ্ছে দলীয় পতাকা। নেতাকে বরণের মাহেন্দ্রক্ষণের অপেক্ষা করছেন তার অনুসারীরা।
তারেক রহমানের কর্মসূচি: বুধবার রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তারেক রহমানের তিন দিনের কর্মসূচির কথা জানান দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। বিএনপির এই নেতা বলেন, আগামীকাল দুপুরে বিমানবন্দরে নামার পর দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা তারেক রহমানকে স্বাগত জানাবেন। এরপর তিনি জুলাই এক্সপ্রেসওয়ে তথা ৩০০ ফিট রাস্তায় সংবর্ধনাস্থলে যাবেন। সেখানে অপেক্ষায় থাকা নেতা-কর্মীদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে দেশবাসীর উদ্দেশ্য বক্তব্য দেবেন তিনি। এরপর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে দেখতে এভারকেয়ার হাসপাতালে যাবেন। সেখান থেকে বিমানবন্দর সড়ক হয়ে কাকলির মোড় হয়ে গুলশান ২ নম্বরে বাসভবনে চলে আসবেন। সেদিন আর অন্য কোনো অনুষ্ঠান হবে না। ২৬ ডিসেম্বর শুক্রবার জুমার নামাজের পর তারেক রহমান বাসভবন থেকে প্রথমে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারত করবেন। সেখান থেকে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন। এরপর ২৭ ডিসেম্বর শনিবারও দুটি কর্মসূচি রয়েছে। ওই দিন জাতীয় পরিচয়পত্রের কাজ করবেন তিনি। এ জন্য তারেক রহমান সশরীরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন অফিসে যাবেন কি না, সেটা পরে জানানো হবে। ওই দিনই ভোটার হতে সব কাজগুলো করবেন। এরপরে শহীদ ওসমান হাদির কবর জিয়ারত করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যাবেন। শহীদ ওসমান হাদির কবর জিয়ারত শেষে সেখান থেকে রাজধানীর শ্যামলীতে পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিদের দেখতে যাবেন তারেক রহমান। এরপর আরেকটি অনুষ্ঠান হবে সেটার বিস্তারিত পরে জানানো হবে বলে জানান তিনি।
এদিকে, বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরার ক্ষেত্রে সরকার প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেন, ‘আমরা তারেক রহমানের বাংলাদেশে ফেরাকে স্বাগত জানাই। তার জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে দলের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ রয়েছে। সরকার তার নিরাপত্তা ব্যবস্থার বিষয়টি বিএনপির সঙ্গে পরামর্শ করছে এবং তাদের চাহিদা অনুযায়ী ব্যবস্থা নিচ্ছে। আমাদের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে যাতে পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়।

