আগরতলা, ৩জুলাই।।
         জিবিপি হাসপাতালে সার্বিক স্বাস্থ্য পরিষেবায় যুগান্তকারী পরিবর্তন ঘটেছে। আর এর সুফল লাভ করছে রাজ্যবাসী। আগরতলা গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড জিবিপি হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের একের পর এক নানা জটিল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে মানুষের আস্থা যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে বর্তমানে হাসপাতালের পরিষেবা সম্পর্কে মানুষের মধ্যে একটা ইতিবাচক ধারণা তৈরী হয়েছে। আগরতলা গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড জিবিপি হাসপাতালে গত দেড় বছর আগে নিউরোলজি বিভাগে ১০ শয্যা বিশিষ্ট পুরুষদের অন্তর্বিভাগ এবং ১০ শয্যা বিশিষ্ট মহিলাদের অন্তর্বিভাগ চালু হয়েছে। নিউরোলজি বিভাগে বিভিন্ন ধরনের স্নায়ু রোগ সম্পর্কিত পরীক্ষার ব্যবস্থার পাশাপাশি এখানে নার্ভ কন্ডাকশন ভেলোসিটি টেস্ট, ইএমজি টেস্ট, মায়াস্থেনিয়া গ্রেভিস রোগের সনাক্তকরণে রিপিটিভ নার্ভস্টিমুলেশন (আরএনএসটি) টেস্ট, অপটিক্যাল নার্ভের জন্য ভিস্যুয়াল ইভোকড পোটেনশিয়াল (ভিইপি) টেস্ট, এসএএইচ সনাক্ত হলে ব্রেইনের ডিজিট্যাল সাবট্র্যাকসন এনজিওগ্রাফি অর্থাৎ ডিএসএ টেস্ট ইত্যাদি করা হচ্ছে। বর্তমানে জিবিপি হাসপাতালে আয়ুষ্মান ভারত প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনা ও মুখ্যমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনার মাধ্যমে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিনামূল্যে রোগীদের চিকিৎসা করা হচ্ছে।
         নিউরোলজি বিভাগে রোগীদের সঙ্গে, ওয়ার্ডের প্রতিটি সদস্যকে সঙ্গে নিয়ে জাতীয় চিকিৎসক দিবস উদযাপন করা হল বুধবার। ছিলেন অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর ডাঃ আবির লাল নাথসহ চিকিৎসক ও চিকিৎসাকর্মীরা। রোগীদের মুখে হাসি ফোটানোই ছিল মূল উদ্দেশ্য। ওয়ার্ডে রোগীদের নিয়ে কেক কাটা হয়। কেক কাটা, ও আন্তরিক কথোপকথনের মাধ্যমে চিকিৎসক ও চিকিৎসাকর্মীরা এবং রোগীরা সবাই একে অপরকে আরও কাছে পেলেন এই চিকিৎসক দিবসে। নির্মিত হল এক অভূতপূর্ব আবেগঘন মুহূর্ত।

বর্তমানে জিবিপি হাসপাতালে নিউরোলজি বিভাগে সব নিউরোলজিক্যাল টেস্ট ইইজি, এনসিভি, ইএমজি, এমআরআই, সিটি স্ক্যন, ব্রেন অ্যাঞ্জিওগ্রাফি রক্ত পরীক্ষা বিনামূল্যে করা হয়। বিভিন্ন দামী ঔষধ ও চিকিৎসা পদ্ধতি যেমন, IVIG, Adalimumab, Rituximab, Botox, Digital subtraction angiography of brain. Coiling stenting of brain artery এবং আরও অনেককিছুই একদম বিনামূল্যে করা হয়। লক্ষ্য শুধু টাকার অভাবে যেন কেউ চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত না হন।

নিউরোলজি বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর ডাঃ আবির লাল নাথ সম্প্রতি ওয়ার্ডে রাউন্ডে বেড়িয়ে নিউরোলজি ওয়ার্ডের সুবিধা নিয়ে রোগীদের আত্মীয় পরিজনদের সাথে কথা বলেন। রোগীরা ওয়ার্ডের উপলব্ধ পরিষেবায় সন্তোষ প্রকাশ করেন। মাঝবয়সী ভদ্রলোককে তিনি অভিজ্ঞতার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি হেসে উত্তর দেন, “এখনো স্বপ্ন মনে হচ্ছে, ভাবতেই পারছি না আমি জিবিপি হাসপাতালে এসি ওয়ার্ডে ভর্তি।” তিনি ভদ্রলোককে বুঝিয়ে বললেন, এই এসি, এই বিছানা, এই ওয়ার্ড-সবকিছু রাজ্যের মানুষের জন্য উপলব্ধ করতে নিরন্তর উদ্যোগ নিতে হয়েছে।

সেদিন ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা রোগীদের মধ্যে একজন ক্রনিক ইনফ্ল্যামেটরি ডিমাইলিনেটিং পলিনিউরোপ্যাথি (সিআইডিপি) রোগী ছিলেন যাঁকে ৫ লাখ টাকার আইভিআইজি দেওয়া হয়েছে। একজন মহিলা যিনি ১০ বছর ধরে ব্যথায় কষ্ট পাচ্ছিলেন, তাঁকে ১ লাখ টাকার এডালিমুম্যভইনজেকশন দেওয়া হয়েছে, তাঁর ব্যথা অনেকটাই কমেছে। আরেকজন রোগী ছিলেন যিনি চোখে দেখতে পাচ্ছিলেন না, তাঁকে রিটুক্সিম্যান্ড দেওয়ার পর তিনি এখন দেখতে পারছেন, এই ইনজেকশনের দামও ১ লাখ টাকা। এই সমস্ত চিকিৎসা হয়েছে বিপিএল কার্ড, আয়ুষ্মান ভারত প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনা ও মুখ্যমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনার মাধ্যমে একেবারে বিনামূল্যে।

৩৬ বছর বয়সী এক তরুণী, যিনি গত কয়েক মাস ধরে বাম চোখে দৃষ্টিহীনতা ও দ্বৈত দৃষ্টির সমস্যায় ভুগছিলেন। এই সমস্যা এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে, তাঁর প্রতিদিনের কাজকর্মে বড় অসুবিধা সৃষ্টি হচ্ছিল। নিউরোলজি বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর ডাঃ আবির লাল নাথ তাঁর ভিজ্যুয়াল ইভোকড পটেনশিয়াল (ভিইপি) পরীক্ষা করান এবং রিপোর্টে জানা গেলো তাঁর বাম চোখে অক্ষাংশিক ক্ষতি যা, অপটিক নিউরাইটিসের স্পষ্ট লক্ষণ। এই চিকিৎসার খরচ সাধারণ মানুষের জন্য অপ্রতিরোধ্য হতে পারে, সেখানে তাঁকে বিপিএল-এর অধীনে ভর্তি করে এক লাখ টাকার রিটুক্সিমাব চিকিৎসা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে প্রদান করা হয়। অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর ডাঃ আবির লাল নাথের ভাষায় চিকিৎসার পর, সেই তরুণী একদম আগের মতো স্পষ্ট দৃষ্টি ফিরে পেলেন এবং তাঁর মুখে যে হাসি ফুটে উঠল, তা গভীরভাবে ছুঁয়ে গেল। তাঁর চোখে ছিল সেই অনুভূতি, যেন জীবন আবার তার সমস্ত রঙ ফিরে পেয়েছে। তাঁর সেই হাসি, সেই মিষ্টি দৃষ্টিভঙ্গি আমাকে আরও শক্তি দেয় মানুষের জন্য কাজ করতে। জীবন যখন অন্ধকারের মধ্যে হারিয়ে যায়, তখন আশা ও সহানুভূতির আলোর মতো এক মুহূর্ত আসে এটি ছিল এক অনন্য ও অমূল্য অভিজ্ঞতা। ছবি হয়তো ঝাপসা হতে পারে, কিন্তু তাঁর দৃষ্টি আর কখনোই ঝাপসা হবে না এটাই আমার সার্থকতা, তাঁর হাসির মধ্যে জীবনের সেই উজ্জ্বলতা দেখলাম।

জনগণকে পরিষেবা প্রদানের স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতেই প্রফেসর ডাঃ আবির লাল নাথ সহ একঝাঁক তরুণ চিকিৎসক দায়বদ্ধতা সহকারে মানবিকতার দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে এগিয়ে চলছেন। স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে এক প্রেস রিলিজে এই সংবাদ জানানো হয়েছে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *