“জনজাতিদের দেওয়া সাম্প্রদায়িক আগুনে ঝলসে গিয়েছে গো – মাতাদের শরীর। গোয়াল ঘরে গলায় দড়ি লাগানো অবস্থায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে ছটফট করতে করতে প্রাণ গিয়েছে গো-মাতাদের। তারপরও দুষ্কৃতিদের বিরুদ্ধে কোন গর্জন নেই মেরুদণ্ডহীন হিন্দু ও হিন্দুবাদী সংগঠনের কাপুরুষদের। যারা হিন্দু হিন্দুত্ববাদ ও গো-মাতার ছবি সামনে রেখে নিজেদের উদরপূর্তি ও পকেট পুর্তি করে চলছে। সংশ্লিষ্ট সংগঠনের বীরপুঙ্গব নেতারা আজ কোথায় ? জানতে চাইছে এই রাজ্যের সনাতনী লোকজন।”


“সনাতনী”  টার্ম কার্ড নিয়েই ভারতীয় জনতা পার্টি তার রাজনীতির ব্যাপ্তি ঘটিয়েছে গোটা দেশে।

ডেস্ক রিপোর্টার, ২৬ জুলাই।।
       গন্ডাছড়া স্কুলের শরণার্থী ক্যাম্পে দাঁড়িয়ে কোয়েল মল্লিক নামে একজন বাঙালি গৃহবধূ চোখে এক রাশ আতঙ্কের ছাপ নিয়ে বলেছেন,    “গত ১২ জুলাই জনজাতি সম্প্রদায়ের দুষ্কৃতীরা কিভাবে বাঙালিদের বাড়িঘরে হামলার পাশাপাশি গো-মাতাদের নিধন করেছে। একটি দুটি নয়, অন্তত ১৫টি গো – মাতাকে হত্যা করেছে হামলাকারীরা। আর একটি গো – মাতাকে কেটে টুকরো টুকরো করেছে। ”  ব্যাস, গন্ডাছড়াতে বাঙালি মহল্লায় দুষ্কৃতিদের নৃশংসতার চিত্র ফুটে উঠেছে শরণার্থী ক্যাম্পে আশ্রিতা অসহায় এই গৃহবধুর কন্ঠে।
 


সনাতন ধর্মে সাত রকম মাতার উল্লেখ করা হয়েছে। তাদের মধ্যে গো – মাতা একজন।বিষ্ণুপুরাণে “গরু” হিন্দুধর্মের একটি বিশেষ অবস্থান দখল করে আছে । বলা হয়ে থাকে,  ভগবান বিষ্ণুর বাহন গােমাতা, অর্থাৎ গাভী। অন্যদিকে শিবের বাহন বৃষ অর্থাৎ ষাঁড়। হিন্দু শাস্ত্রীয় মতে, দুগ্ধবতী গাভীকেই মাতা মনে করা হয়। তাই বলা হয়ে থাকে, ‘মাতারঃ সর্বভ,তানং গাবঃ সর্বসূখপ্রদাঃ’।ব্রহ্মপুরাণে বলা হয়েছে গরুকে প্রদক্ষিণ করলে সপ্তদীপা পৃথিবীতে ভ্রমণের ফল হয় । তাই সনাতন ধর্মে গরুকে মাতার সম্মান দেওয়া হয়েছে।


হিন্দু ও হিন্দুত্ববাদ এই দেশ ও রাজ্যের শাসক দল ভারতীয় জনতা পার্টির মূল এজেন্ডা। ভারতীয় জনতা পার্টির মা অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ এবং তাদের ভাতৃ-প্রতিম সংগঠন বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, বজরং দল, হিন্দু জাগরণ মঞ্চ সহ আরো বহু সংগঠন কাজ করছে হিন্দু ধর্মের প্রচার ও প্রসারের জন্য। আরএসএস,  বিজেপি সহ সংশ্লিষ্ট সংগঠন গুলির  কাছে সনাতনীরাই প্রাধান্য পেয়ে থাকে এবং “সনাতনী”  টার্ম কার্ড নিয়েই ভারতীয় জনতা পার্টি তার রাজনীতির ব্যাপ্তি ঘটিয়েছে গোটা দেশে। তাই কোথাও গোমাতার সঙ্গে অবিচার হলে সরব হয় আরএসএস, বিজেপি, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ,বজরং দল, হিন্দু জাগরণ মঞ্চের মতো সংগঠন গুলি। দেশ ও রাজ্যে এই রকম বহু দৃষ্টান্ত রয়েছে।

।বিজ্ঞাপন।

সনাতন ধর্মে সাত রকম মাতার উল্লেখ করা হয়েছে। তাদের মধ্যে গো – মাতা একজন।বিষ্ণুপুরাণে “গরু” হিন্দুধর্মের একটি বিশেষ অবস্থান দখল করে আছে।


রাজ্যের শাসন ক্ষমতায় বিজেপি। শহর থেকে সমতল,  গ্রাম থেকে পাহাড় বিচরণ করছেন আরএসএস নেতৃত্ব। বসে নেই বিশ্ব হিন্দু পরিষদের তাবড়  নেতারাও। মাঠে আছে বজরং দল। মাথা চারা দিয়েছে হিন্দু জাগরণ মঞ্চও। তারা প্রত্যেকেই সক্রিয়ভাবে কাজ করছে রাজ্যে। এবং জড়িয়ে আছে রাজনীতির সঙ্গে। সনাতনীদের স্বার্থ রক্ষা জন্য সর্বক্ষণ কাল ঘাম ছুটছে সংশ্লিষ্ট সংগঠন গুলির নেতাদের। তারা গো – মাতাদের নিয়ে ব্যবসাও করে বিভিন্ন এনজিও – র নাম করে।অথচ গন্ডাছড়াতে নৃশংস ভাবে একের পর এক গো-মাতার নিধন হলেও নিশ্চুপ ভেকদারী হিন্দুবাদী সংগঠন গুলি। ১৫টি গো – মাতার মৃত্যু- র পরও  হিন্দু ও হিন্দুত্ববাদের সাইনবোর্ড ধরে রাখা এজেন্টরা লজ্জা পাচ্ছেন এই সংক্রান্ত বিষয়ে প্রতিবাদ করতে।

গন্ডাছড়ায় সাম্প্রদায়িক আগুনে গোমাতার নিধন (ছবি – নিজস্ব)

গোটা রাজ্যে এখন বিজেপির লোকজনের অভাব নেই। কিলবিল করছে আরএসএসের স্বয়ংসেবকরা। বিশ্ব হিন্দু পরিষদ আছে স্ব-মহিমায়। বাজারে টিকে থাকতে স্বঘোষিত হিন্দু জাগরণ মঞ্চের নেতারাও করছে লম্পজম্ফ। অথচ গন্ডাছড়াতে বেঘোরে প্রাণ দেওয়া গো-মাতাদের জন্য প্রাণ কাঁদে নি।

।।বিজ্ঞাপন।।

আরো খবর পড়ুন

https://janatarmashal.com/tripura-news-gandachhar-attack-script-was-written-in-the-refugee-camp/

ব্রহ্মপুরাণে বলা হয়েছে গরুকে প্রদক্ষিণ করলে সপ্তদীপা পৃথিবীতে ভ্রমণের ফল হয় । তাই সনাতন ধর্মে গরুকে মাতার সম্মান দেওয়া হয়েছে।

জনজাতিদের দেওয়া সাম্প্রদায়িক আগুনে ঝলসে গিয়েছে গো – মাতাদের শরীর। গোয়াল ঘরে গলায় দড়ি লাগানো অবস্থায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে ছটফট করতে করতে প্রাণ গিয়েছে গো-মাতাদের। তারপরও দুষ্কৃতিদের বিরুদ্ধে কোন গর্জন নেই মেরুদণ্ডহীন হিন্দু ও হিন্দুবাদী সংগঠনের কাপুরুষদের। যারা হিন্দু হিন্দুত্ববাদ ও গো-মাতার ছবি সামনে রেখে নিজেদের উদরপূর্তি ও পকেট পুর্তি করে চলছে। সংশ্লিষ্ট সংগঠনের বীরপুঙ্গব নেতারা আজ কোথায় ? জানতে চাইছে এই রাজ্যের সনাতনী লোকজন।


২০১৮- র নির্বাচনের প্রাক লগ্নে প্রদেশ বিজেপির তৎকালীন নেতা সুনীল দেওধর গরু পাচার আটকাতে সক্রিয় হয়ে উঠেছিলেন। বিজেপির নেতারাও পালা করে গো – মাতার পূজা অর্চনায় মনোনিবেশ করেছিলেন। সঙ্গে তো আছেই আরএসএস ,বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, বজরং দল, হিন্দু জাগরণ মঞ্চ ও দূর্গাবাহিনী। গন্ডাছড়ার ঘটনার পর তারা কি চোখে পট্টি পড়ে রেখেছেন?নাকি হামলাকারী জনজাতি সম্প্রদায়ের উগ্র লোকজনের ভয়ে  প্রবেশ করেছেন গর্তে?

আরো খবর পড়ুন

https://x.com/janatarmashal24/status/1814656604832473572?t=gJ3bTKV1AL72GBLI7_n1Mw&s=19

২০২৩ সালে কেন্দ্রীয় প্রাণী কল্যাণ পর্ষদ গোমাতা আলিঙ্গন দিবস (Cow Hug Day)পালনের নির্দেশ জারি করেছে। তাও আবার প্রতিবছর ১৪ ফেব্রুয়ারি অর্থাৎ ভ্যালেন্টাইনস ডে’তে। সারাদেশে বিজেপি নেতৃত্ব সহ আরএসএস , বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, বজরং দলের নেতারা  গো- মাতাকে আলিঙ্গন করে  ঢাউশ ঢাউশ ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হিন্দু ও হিন্দুত্ববাদের চাঙ্গা ব্যবসা চালিয়েছিলেন ।ব্যতিক্রম ছিল না বিজেপি শাসিত ত্রিপুরাতেও।


অবশ্যই পরবর্তী সময়ে চাপের মুখে কেন্দ্রীয় প্রাণী কল্যাণ পর্ষদ তাদের জারি করা এই নির্দেশ প্রত্যাহার করে নিয়েছিল । বিভিন্ন সময়ে আরএসএস নেতৃত্ব গরুকে “রাষ্ট্র মাতা”  মর্যাদা দেওয়ার দাবি করেছিল। গো-মাতাকে বিশ্ব মাতার স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য সোচ্চার হয়েছিল আরএসএস ও বিশ্ব হিন্দু পরিষদ।

।।বিজ্ঞাপন।।

এগুলি কি সংশ্লিষ্ট আরএসএস ও ভিএইচপি’ র লোক দেখানো কার্যকলাপ ছিলো? যদি তা নাই- ই হয়,  তাহলে তারা কেন গন্ডাছড়ার অগ্নিকুণ্ডে ঝলসে যাওয়া  গো- মাতাদের নৃশংস খুনের ঘটনার পরও ছুটে যায় নি অকু স্থলে?


কেন গো – মাতাদের খুনিদের বিচার চেয়ে থানায় দায়ের করে নি মামলা? এই কোটি টাকার প্রশ্নের উত্তর কি দিতে পারবে হিন্দু ও হিন্দুত্ববাদের ভেকধারী নেতৃত্ব? উত্তরের অপেক্ষায় রইলো “জনতার মশাল”।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনি কি মিস করেছেন