।সাংবাদিক বৈঠকে বরাকের বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃত্ব।

শিলচর ডেস্ক,১৮ ডিসেম্বর।।
       “সরকারি চাকরিতে ১০০ শতাংশ পদেই ইতিমধ্যে অসমিয়াদের নিয়োগ করা হয়েছে।” সম্প্রতি আসাম চুক্তির ৬ক ধারা সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে একথা অকপটে স্বীকার করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা।
আসামের মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যের  প্রতিবাদে সরব হয়েছে বরাক ভ্যালির ইউনিয়ন টেরিটরি ডিমান্ড কমিটি,শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি মেমোরিয়াল ট্রাস্ট, মাতৃভাষা সুরক্ষা সমিতি,বরাক ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট। সবকটি সংগঠন এক জোটে বরাক পৃথকীকরণের দাবিকে পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে আগামী দিনে বৃহত্তর আন্দোলনে যাওয়ার হুঙ্কার দিয়েছে।
রবিবার সম্মিলিত ভাবে সংশ্লিষ্ট সংগঠন গুলির নেতৃত্ব সংবাদিক বৈঠক করেছেন শিলচরে। সাংবাদিক বৈঠকে শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি মেমোরিয়াল ট্রাস্টের সভাপতি হারান দে  জানিয়েছেন,
শিলচর মেডিক্যাল কলেজে ৪০টি স্নাতকোত্তর আসন বরাদ্দ করার ব্যাপারে তাঁদের উদ্যোগের পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় সরকার অনুমোদন দিলেও এই প্রক্রিয়াকে রাজ্য সরকার আটকে রেখেছে। আটকে রেখেছে শিলচরে একটি সৈনিক বিদ্যালয় স্থাপনের প্রস্তাবকেও। এছাড়া সরকারি নিয়োগে বরাকের প্রার্থীদের চূড়ান্ত বঞ্চনা করা হচ্ছে। তিনি বলেন এই সরকারের আমলে সমস্ত ক্ষেত্রে বঞ্চিত হচ্ছেন বরাক বাসী। তাই বরাক ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট বা ইউনিয়ন টেরিটরি ডিমান্ড কমিটি যে পৃথকীকরণের ডাক দিয়েছেন তাতে তাঁর সংগঠন পূর্ণ সমর্থন জানাচ্ছে।


ইউনিয়ন টেরিটরি ডিমান্ড কমিটির সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত পরিতোষ পালচৌধুরীর পুত্র বিপ্লব পাল চৌধুরী বরাক পৃথকীকরণের দাবিতে তাঁর প্রয়াত পিতার দীর্ঘ আন্দোলনের ইতিহাস সংক্ষেপে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বর্তমান আসাম সরকারের আমলে বরাকের অবস্থার আগের থেকেও  তুলনামূলক ভাবে অবনতি হয়েছে। তাতেই এখন সবার দেয়ালে পিঠ ঠেকেছে। তাই পৃথকীকরণ ছাড়া আর বিকল্প নেই। বিপ্লব পাল চৌধুরী বলেন, যদিও তাঁরা ইউনিয়ন টেরিটরি দাবি করছেন, বিডিএফ পৃথক রাজ্যের দাবি জানাচ্ছে। আপাত তা নিয়ে কোনও বিরোধ কিছু নেই। কেন্দ্রীয় সরকার এই ব্যাপারে যাই সিদ্ধান্ত নেবেন তারা এটাই মেনে নেবেন। মূল লক্ষ্য, বরাকবাসীর আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার নিশ্চিত করা।
বরাক ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের মুখ্য আহ্বায়ক প্রদীপ দত্ত রায় সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, সরকারি চাকরির ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রীর সাম্প্রতিক বক্তব্য দুর্ভাগ্যজনক। প্রদীপ দত্ত রায়ের বক্তব্য, এই রাজ্যে কারা অসমিয়া সেই সংজ্ঞাই এখন অব্দি নির্ধারণ করতে পারেনি সরকার। তিনি বলেন,আসাম একটি বহুভাষিক রাজ্য। এখানে বোড়ো,ডিমাসা,কোচ রাজবংশীরা রয়েছেন। এদের জন্য পৃথক উন্নয়ন পরিষদ রয়েছে। বরাকে বাংলাভাষী ৮৫ শতাংশ। এই রাজ্যে রয়েছেন ৫০০ টি চা বাগানের শ্রমিকরা, রয়েছেন মনিপুরি,কুকি,হমার সহ বিভিন্ন ভাষিক গোষ্ঠী। সরকারি চাকরিতে সবার সমঅধিকার সংবিধান প্রদত্ত অধিকার। তাই একটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এই ধরনের অসাংবিধানিক বক্তব্য রাখতে পারেন না এবং তারা এই ধরনের প্রচেষ্টা কোন অবস্থায় মেনে নেবেন না। তিনি বলেন যদি মুখ্যমন্ত্রী তাঁর এই বক্তব্য প্রত্যাহার না করেন তবে আগামীতে তাঁরা সমগ্র বরাক জুড়ে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলবেন।


বিশিষ্ট অধ্যাপক তথা সমাজকর্মী নিরঞ্জন দত্তের কথায়, যেহেতু কারা প্রকৃত অসমিয়া সেই সংজ্ঞাই এখনো নির্ধারিত হয়নি, তাই মুখ্যমন্ত্রীর এই ধরনের বক্তব্য অসাংবিধানিক ও দুর্ভাগ্যজনক। তিনি বলেন সরকারি চাকরিতে রাজ্যের সবগোষ্ঠীর সমঅধিকার নিশ্চিত করা যে কোন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। তাই তিনি অবিলম্বে মুখ্যমন্ত্রীকে তাঁর এই বক্তব্যের ব্যাপারে স্পষ্টীকরণ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। অন্যথায় ,আগামী প্রজন্মের স্বার্থে  এই ধরনের পক্ষপাতিত্বের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে আইনি পদক্ষেপ এবং গনতান্ত্রিক আন্দোলন গড়ে তোলা ছাড়া কোন বিকল্প নেই বলে এদিন মন্তব্য করেন তিনি।
বরাক ডেমোক্রেটিক ইউথ ফ্রন্টের মুখ্য আহ্বায়ক কল্পার্ণব গুপ্তের বক্তব্য,মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্য তথা আগামী নিয়োগ পরীক্ষার কেন্দ্র করিমগঞ্জ ও হাইলাকান্দি জেলায় না দেবার প্রতিবাদে আগামীকাল ১৮ ডিসেম্বর তাঁদের সংগঠনের পক্ষ থেকে বদরপুরের ধলেশ্বর চৌমাথায় বেলা এগারোটায় তাঁরা গনধর্ণায় বসবেন । এই কর্মসূচিতে যোগদানের জন্য তিনি এদিন বরাকের সমস্ত চাকরি প্রার্থী যুবক যুবতীদের আহ্বান জানান।

ইউটিডিসির অপর সদস্য ডঃ কস্তুরী হোমচৌধুরী এদিন ছাত্রজীবনে গৌহাটিতে উগ্র জাতীয়তাবাদীদের দ্বারা হুমকি এবং নিগ্রহের ঘটনা তুলে ধরে বলেন যে প্রয়াত পরিতোষ পালচৌধুরী বারবার বলতেন যে বরাক বাসী বুঝতে পারছেন না যে এরকম চললে হয়তো ভবিষ্যতে এই রাজ্য ছেড়ে ছিন্নমূল বাঙালিদের আবার পালাতে হবে। তিনি বলেন দূর্ভাগ্য বশতঃ তার সেই আশঙ্কা যে অমূলক ছিলনা তা আজ প্রমানিত হচ্ছে। আজ সমস্ত ক্ষেত্রে এই উপত্যকাবাসীকে দাবিয়ে রাখার আয়োজন চলছে। তাই পৃথকীকরণ ছাড়া আর কোন বিকল্প নেই।


মাতৃভাষা সুরক্ষা সমিতির সভাপতি সুনীল রায় এদিন আসাম নিয়োগ বিধি ১৯৭৫ এর একটি আইনের প্রসঙ্গ অবতারণা করে বলেন যে এই আইন আসাম বিধানসভায় গৃহীত হয়ে আছে এবং এতে প্রতি জেলার তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর পদে স্থানীয় প্রার্থীদের নিয়োগ দেবার স্পষ্ট সুপারিশ রয়েছে। তিনি বলেন যে বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী বরাক উপত্যকার স্থানীয় এইসব পদ স্থানীয় প্রার্থীদের জন্য সংরক্ষিত করার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু পরে তাকে এই ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি যে বলেছেন এতে আইনি অসুবিধা রয়েছে তা যে সম্পুর্ন অসার এবং মিথ্যা তা আসাম সরকারের এই আইনি নথি থেকে প্রমানিত। তাই অনুন্নয়নের শিকার ও অবহেলিত এই উপত্যাকার তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর সমস্ত পদে স্থানীয় প্রার্থীদের নিযুক্তির দাবিতে সরব হতে এদিন তিনি সবাইকে আহ্বান জানিয়েছেন।
এদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে এদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জয়দীপ ভট্টাচার্য,হৃষীকেশ দে, নবারুণ দে চৌধুরী,হারাধন দত্ত প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *