ডেস্ক রিপোর্টার, ২৯ আগস্ট।।
  “মোদের গরব, মোদের আশা, আ মরি বাংলা ভাষাতোমার কোলে, তোমার বোলে, কতই শান্তি ভালবাসা!”
     বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ এমন এক ভারতের স্বপ্ন দেখেছিলেন যেখানে সব ভাষার সম্মান থাকবে। রবীন্দ্র নাথের সঙ্গে ত্রিপুরার নাড়ির টানের কথা নতুন করে বলার কিছু নেই। কিন্তু এই ত্রিপুরাতেই সন্মানহানী ঘটছে বাংলা ভাষার। বিদেশী হরফকে বুকে জড়িয়ে রাখা ককবরক ভাষাভাষীর লোকজনের বড় অংশের কাছেও বাংলা ভাষা আজ সমাদৃত নয়। তাই তারা বিদেশী হরফ গ্রহন করার দাবীতে পাহাড় – সমতলে দিয়েছে আন্দোলনের ডাক। অন্তরালে কার মাথা কাজ করছে? এটাও পরিষ্কার।


গত ২২ ও ২৩ আগস্ট  আমবাসাতে ধলাই জেলা ভিত্তিক “কিশোরী উৎকর্ষ মঞ্চ” নামে একটি অনুষ্ঠান হয়। এই অনুষ্ঠানের আয়োজক ছিলো ধলাই জেলার সমগ্র শিক্ষার প্রজেক্ট কোডিনেটর অফিস। অবাক করার মতো বিষয়, এই অনুষ্ঠানের অংশ গ্রহণকারী প্রতিনিধিদের স্বাগত জানানোর জন্য অনুষ্ঠানস্থলের মূল ফটকে থাকা পোস্টারে স্থান পেয়েছিল শুধু ককবরক ও ইংরেজি ভাষা। ফটকের পোস্টারে  ককবরক ভাষায় লেখা ছিলো “ফাইকাহাম” আর ইংরেজি ভাষায় ছিলো ” ওয়েলকাম”। বাংলা ভাষার নাম গন্ধও ছিলো। কেন? অথচ রাজ্যের সংখ্যা গরিষ্ঠ মানুষের ভাষা বাংলা।


রাজ্যের অন্যতম প্রধান সরকারী ভাষাও বাংলা। তারপরও কার অঙ্গুলি নির্দেশে বাংলা ভাষাকে ব্রাত্য করে সরকারী অনুষ্ঠানে, স্থান দেওয়া হলো ককবরক ও ইংরেজি ভাষাকে। শুধু কি তাই, কেন্দ্রিয় বিশ্ব বিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের নামও হিন্দিতে লেখা রয়েছে। ছি: ছি:। বাংলা ভাষাকে পা দিয়ে পিষে মেরে ফেলার জন্য রাজ্যের ও বহিঃ রাজ্যের এক শ্রেণীর ধান্দাবাজ  এখন উঠে পরে লেগেছে। কিন্তু রহস্য জনক ভাবে নিশ্চুপ রাজ্য সরকার। ও সরকারের দণ্ড মুণ্ডের কর্তারা।


এখন রাজ্যে আনুষ্ঠানিক ভাবে বাংলা হরফেই লেখা হয় ককবরক। কিন্তু এই মুহূর্তে জনজাতি সম্প্রদায়ের লোকজন বিদেশী রোমান হরফকে বুকে আগলে নিতে চাইছে।ইতিমধ্যে জনজাতিদের বড় অংশ রোমান হরফেই লিখছে ককবরক। এই রোমান হরফ চালুর দাবিতে সরব জনজাতি নেতৃত্ব। অভিযোগ, রোমান হরফ চালুর দাবিকে সামনে রেখে পাহাড় – সমতলে এক ঘোর অন্ধকার ঘনিয়ে আনার কাজ শুরু করে দিয়েছেন জনজাতি সম্প্রদায়ের দণ্ডমুণ্ডের কর্তারা। এটা অবশ্যই রাজ্যের জন্য মঙ্গলদায়ক নয়।


ভাষাবিদরা বলছেন, দীর্ঘ দিন ধরেই এই রাজ্যে বাঙালি ও বাংলা ভাষার ভাবাবেগ নিয়ে লুকোচুরি খেলা চলছে। ক্ষনে ক্ষনে বাঙালি ও বাংলা ভাষার আভিজাত্যে আঘাত করতে চাইছে কুচক্রিরা। কিন্তু সম্পূর্ণাংশে সাহস করে উঠতে পারছে না।কারণ কুচক্রিরা ভালো করেই জানে শান্তি প্রিয় বাঙালিদের মজ্জায় মজ্জায় বইছে আন্দোলনের রক্ত। আন্দোলন বাঙালির ঐতিহ্য। বাঙালিরা পাল্টা আন্দোলন শুরু করলে কোন জায়গাতে পৌঁছতে পারে পরিস্থিতি?


রাজনীতিকরা বলছেন, রাজ্যের দুই  বিধানসভা কেন্দ্রের উপভোটের প্রাক লগ্নে ককবরক ভাষায় রোমান হরফ প্রচলনের দাবিতে ১২ঘণ্টার বনধ ডাকার পেছনে অন্তর নিহিত উদ্দেশ্য কি? এটা অবশ্যই, সবাই ভালো করেই জানেন। মূল উদ্দেশ্য শাসক দল বিজেপিকে চাপে রাখা। এবং বাঙালিদের বার্তা দেওয়া, জনজাতিরা আর বাংলা ভাষা পছন্দ করছে না। এটা আসলে জনজাতি সম্প্রদায়ের কায়েমী স্বার্থবাদী নেতাদের অভিসন্ধি। আর কিছুই নয়। সঙ্গে এই রাজ্যের কংগ্রেস, সিপিআইএম ও বিজেপির ক্ষমতা লোভী, দল বদলু, ঠগবাজ নেতাদের কালো মস্তিষ্কও কাজ করছে বলেই মনে করছেন বাঙালি সমাজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *