ডেস্ক রিপোর্টার, ২৯আগস্ট।।
          গুরু ছিলেন ১০ বছরের মুখ্যমন্ত্রী। শিষ্য ছিলেন ২০ বছরের মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্য রাজনীতিতে একজন মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে এটা শিষ্যের রেকর্ড। আগামী দিনে অন্য কোনো মুখ্যমন্ত্রী এই রেকর্ড ভাঙতে পারবেন কিনা সেটা সময়েই বলবে। তবে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে গুরু থেকে পারফরমেন্স ভালো হলেও নেতা হিসাবে গুরুকে টপকাতে পারেন নি শিষ্য। আর পারবেনও না। সময় ফুরিয়ে গিয়েছে।
         এখানে গুরু কমিউনিস্ট নেতা তথা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী নৃপেণ চক্রবর্ত্তী। শিষ্যও সিপিআইএমের পলিটব্যুরোর সদস্য তথা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার। রাজ্যের দুই কেন্দ্রের উপ নির্বাচনের প্রাকলগ্নে গুরু নৃপেণ চক্রবর্ত্তী ও শিষ্য মানিক সরকারের নেতৃত্ব নিয়ে চুল চেরা বিশ্লেষণ করছেন রাজনীতিকরা।


রাজ্যের কমিউনিস্ট রাজনীতির দুই পুরোধা ব্যক্তিত্ব নৃপেণ চক্রবর্ত্তী ও মানিক সরকার। নৃপেণ চক্রবর্ত্তীর ভাব শিষ্য ছিলেন মানিক সরকার। তাদের দুই জনের এই সম্পর্ক রাজ্য রাজনীতির সঙ্গে জড়িত কাউর অজানা নেই। রাজনীতির অঙ্গনের রাডারের বাইরের লোকজনও তাদের সম্পর্কের কথা জানেন।
  নৃপেণ চক্রবর্ত্তী টানা দশ বছরের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন।


১৯৭৮ থেকে ১৯৮৮ পর্যন্ত। তাছাড়া রাজ্যে কমিউনিস্টদের বীজ বপনের অন্যতম কারিগর ছিলেন তিনি। আজও নৃপেণ চক্রবর্ত্তী একজন জননেতা হিসাবেই বেচে আছেন রাজ্যের মানুষের মনি কঠোরে। এটা দলমত নির্বিশেষে।


নৃপেণ চক্রবর্ত্তী তার সময়ে একজন বিরোধী দল নেতা হিসাবে বিধানসভার বাইরে – ভিতরে দাগ কেটেছেন। নানান সময়ে নাস্তানাবুদ করেছেন তদানীন্তন শাসক দলগুলিকে। বিরোধী দলনেতা নৃপেণ চক্রবর্ত্তীর আন্দোলনে আন্দোলিত হয়েছিলো রাজ্যের মানুষ। তার নেতৃত্বে ৮৮তে ক্ষমতা হারানোর পরও, ৯৩- এ তিনি ফের দলকে ক্ষমতায় এনে দিয়েছিলেন। ৯৩- র নির্বাচনে নিজেও জয়ী হয়েছিলেন। তার রাজনৈতিক ক্ষিপ্রতা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিলেন বিরোধী দলের তাবড় নেতৃত্ব।


মানিক সরকার তার গুরুর দ্বিগুণ সময় সামলে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব। তখন রাজ্যে ছিলো বামেদের সুবর্ণ দিন।কিন্তু ক্ষমতা হারানো পর মানিক নিষ্প্রভ হয়ে যান।তিনি নিজেকে একজন বিরোধী দলনেতা হিসাবে তুলে ধরতে ব্যর্থ।বলছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। তাদের বক্তব্য, ২০১৮ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত মানিক সরকার ছিলেন রাজ্যের বিরোধী দল নেতা। এই সময়ে মানিক সরকার বিধানসভার বাইরে – ভিতরে ছিলেন নিষ্প্রভ। রাজ্য বিধানসভায় বিরোধী দলনেতার আসনে  মানিক সরকারের মতো কুড়ি বছরের একজন মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, তা বুঝতেই পারেন নি প্রথম বিজেপি লিড সরকারের দণ্ডমুণ্ডের কর্তারা। কারণ মানিক সরকার বিধানসভার বাইরে ও ভিতরে নিজেকে বারবার গুটিয়ে রেখেছিলেন। কেন? এটা অবশ্যই বলতে পারবেন মানিক নিজেই।


২৩- র ভোটে মানিক সরকার ভোটেই লড়াই করেন নি। একজন তাত্ত্বিক নেতা হিসাবে জিতেন্দ্র চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন কমিউনিস্ট নেতারা মানিক সরকারের বক্তব্যকে খুব একটা আমল দেননি। ভোট পরবর্তী পরিস্থিতিতে  তার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে খোদ মানিক সরকারের বক্তব্য থেকেই। কারণ তিপ্রামথার নেতা প্রদ্যুৎ কিশোরের কথার উপর বাম নেতৃত্বের বিশ্বাস করার বিষয় নিয়ে তিনি প্রকাশ্যে মন্তব্য করেছেন। তা থেকে প্রমাণিত মানিকের কথাকে গুরুত্ব দেন নি জিতেন্দ্র চৌধুরীরা।


অন্য দিকে ১৯৯৩ – র নির্বাচনে বৃদ্ধ বয়সেও নৃপেণ চক্রবর্ত্তী ছিলেন রাজ্য কম্যুনিস্টের শেষ কথা। যদিও দলকে ক্ষমতায় আনার পর নৃপেণ চক্রবর্ত্তী মুখ্যমন্ত্রী হতে পারেন নি।  এই নিয়ে তার আক্ষেপ ছিলো মৃত্যুর আগের দিন পর্যন্ত। রাজ্যে এই মুহুর্তে চলছে দুই বিধানসভা কেন্দ্রের উপ নির্বাচন। ধনপুর কেন্দ্র থেকে টানা ২৫বছর জয়ী হয়েছিলেন মানিক সরকার। অথচ এই উপ-নির্বাচনে ধনপুরে মানিককে খুঁজে পাওয়া কষ্টকর। তিনি একেবারেই নিষ্প্রভ। একজন প্রাজ্ঞ নেতা হিসাবে তার কোনো ঝাঁঝ নেই বললেই চলে, বলে মনে করছেন রাজনীতিকরা। বাস্তব অর্থে দলকে খাদের কিনারা থেকে তোলে আনার জন্য নৃপেণ চক্রবর্ত্তীর মধ্যে যে ক্ষিপ্রতা ছিলো, তার ছিটে ফোঁটাও বামেদের মানিক দাদার মধ্যে।বলছেন খোদ বাম – কর্মী সমর্থকরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *