ডেস্ক রিপোর্টার,৪জুন।।
      মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়েছে অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচনের গননা। এদিনই বেলা ১২টার মধ্যেই স্পষ্ট হয়ে যাবে আগামী পাঁচ বছরের জন্য দেশের মসনদে বসছে কোন রাজনৈতিক দল? এবং কে হচ্ছেন দেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী? দেশের রাজধানী থেকে প্রতিটি প্রদেশের অলি – গলিতে এই কোটি টাকার প্রশ্ন নিয়ে চলছে চার্চ। সট্টার বাজারেও ঘুরছে একই প্রশ্ন।এবং উড়ছে টাকা। অধির আগ্রহে আছে গোটা দেশের মানুষ।
            দেশের শাসক ভারতীয় জনতা পার্টি তাদের প্রত্যাবর্তন নিয়ে আত্মবিশ্বাসী। কারণ খোদ নরেন্দ্র মোদী নিজেই গ্যারান্টি। এটাই ছিল তাদের নির্বাচনী স্লোগান। ভাজপার নেতৃত্বের পাখির চোখ “৪০০” – তে। অন্যদিকে ইণ্ডিয়া জোটও আত্মবিশ্বাসী। জোটের মূল চালিকা শক্তি কংগ্রেস নেতৃত্ব বলেছিলেন, দেশের মানুষ এবার নিশ্চিত পরিবর্তন করবে।ফুরিয়ে  আসছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দিন। রাজনীতিকরা বিভিন্ন মঞ্চ থেকে একজনকে অপরজন কটাক্ষ করবেন এটাই স্বাভাবিক।

।।জওহর লাল নেহেরু।।

দেশীয় রাজনীতির একাল – সেকালের প্রধানমন্ত্রীর কুরসির ইতিহাস ঘাটলে এবং পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে ট্রেন্ডের দিকে নজর দিলে উঠে আসা তথ্য ভারতীয় জনতা পার্টি বা নরেন্দ্র মোদীর জন্য সুখকর নয়,বলেই মনে করছেন রাজনীতিকরা। তবে সব সময় ইতিহাস তার ধারাবাহিকতা মেনে চলে না। পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ভেঙ্গে চুরমার করে দেয় ইতিহাসের পাতায় থাকা অতীত দিনের সমস্ত রেকর্ড। গড়ে নেয় নতুন নজির। নরেন্দ্র মোদীর হাত ধরে দেশীয় রাজনীতিতে যে আবারও সৃষ্টি হতে পারে নতুন ইতিহাস। এক নতুন অধ্যায়। তখন গর্বে ফুলে উঠবে দেশ – জাতি ও সর্বোপরি ভারতীয় জনতা পার্টির কর্মী – সমর্থকরা।

    নরেন্দ্র মোদী কি তৃতীয় বাবের মতো প্রধানমন্ত্রী হবেন? জাতীয় নির্বাচনে কংগ্রেসের পর কোনো রাজনৈতিক দল হিসেবে বিজেপি কি জয়ের হ্যাটট্রিক করতে পারবে? যদি বিজেপি বা এনডিএ ক্ষমতায় আসে তাহলে কি নরেন্দ্র মোদী- ই হবেন প্রধানমন্ত্রী? নাকি দেশীয় রাজনীতির হিন্দুর পোস্টার বয় যোগী আদিত্যনাথ বসবেন প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে? এই মুহূর্তে রাজনীতির আকাশে – বাতাসে নানান প্রশ্ন ভাসছে।

।।নরেন্দ্র মোদী।।

দেশের প্রধানমন্ত্রীদের ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, এক মাত্র জওহর লাল নেহেরু ব্যতীত কোনো প্রধানমন্ত্রী তার চেয়ার ধরে রাখার ক্ষেত্রে হ্যাট্রিক করতে পারেন নি। টানা দুই দফা প্রধানমন্ত্রীর চেয়ার শোভা বর্ধন করতে পেরেছিলেন  ইন্দিরা গান্ধী, মনমোহন সিং। এবং হালের নরেন্দ্র মোদী।
ইন্দিরা, মনমোহন সিংয়ের ললাটে ছিলো না “হ্যাট্রিক”।  এই ধারাবাহিকতা দেখলে নিশ্চিত ভাবে ভারতীয় জনতা পার্টি ও মোদীর অনুগামীদের বুকে চাপ বাড়বে। কিন্তু  জওহর লাল নেহেরুকে মোদী যে স্পর্শ করতে পারবে না?  এটাও হলফ করে বলা যায় না।

দেশীয় রাজনীতির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, কোন প্রধানমন্ত্রী কত দিন ছিলেন দায়িত্বে?


১.জওহর লাল নেহেরু
_____________________

দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহর লাল নেহেরু ১৯৫২,১৯৫৭ ও ১৯৬২ পর পর তিনটি লোকসভা নির্বাচনে জাতীয় কংগ্রেসের টিকিটে  জয়ী হয়েছিলেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৪৭- র ১৫ আগস্ট থেকে ১৯৫২ পর্যন্ত  ষষ্ঠ জর্জের – অন্তর্বর্তীকালীন সরকারেরও প্রধানমন্ত্রী ছিলেন জওহর লাল নেহেরু। তিনি ১৯৬৪ সালের ২রা মে পর্যন্ত ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। মোট ১৬ বছর প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে ছিলেন জওহর লাল নেহেরু।

২.গুলজারী লাল নন্দা
___________________

         দেশের দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী গুলজারী লাল নন্দা। তিনি মাত্র ১৩দিনের জন্য প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। তার সময় কাল ছিলো ১৯৬৪- র  ২৭ মে থেকে ৯জুন পর্যন্ত। তিনিও ছিলেন জাতীয় কংগ্রেসের।

৩. লাল বাহাদুর শাস্ত্রী
___________________

         দেশের তৃতীয় প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রী।তিনি দায়িত্বে ছিলেন ১বছর ২১৬ দিন। ১৯৬৪- ৯ জুন থেকে ১৯৬৬- র ১লা জানুয়ারি পর্যন্ত তিনি প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে ছিলেন। লাল বাহাদুর শাস্ত্রীও
ছিলেন জাতীয় কংগ্রেসের।

৪. গুলজারি লাল নন্দা
_______________________
                 রাশিয়াতে তাসখন্দ চুক্তি করতে গিয়ে রহস্য জনক ভাবে মৃত্যু হয়েছিলো দেশের তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর।তখন জরুরী কালীন অবস্থায় কংগ্রেস পুনরায় গুলজারি লাল নন্দাকে স্টপ গ্যাপ প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়েছিলো।তখনও তিনি ১৩দিনের জন্য ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। দ্বিতীয় দফায় তিনি ১৯৬৬- র ১১জানুয়ারি থেকে ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে ছিলেন।


৫. ইন্দিরা গান্ধী
________________
           কংগ্রেস নেত্রী ইন্দিরা গান্ধী টানা ১১ বছর ৫৯ দিন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। ৬৬- র ২৪ জানুয়ারি থেকে ৭৭- র ২৪ মার্চ। টান দুইটি লোকসভা নির্বাচনে ইন্দিরা গান্ধী জয়ী হয়ে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন।

৬. মুরাজি দেশাই
_________________
              ইন্দিরা গান্ধীর পর জনতা পার্টির নেতা মুরাজী দেশাই বসেছিলেন প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে। তিনি ২৪- মার্চ ৭৭ থেকে ৭৯- র ২৮ জুন পর্যন্ত মোট ২বছর ১২৬ দিন প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ত্ব সামলেছেন।

৭. চরণ সিং
______________
              মুরাজী দেশাইয়ের পর দেশ পায় আরোও এক নতুন প্রধানমন্ত্রীকে। নাম চরণ সিং।তিনি জনতা পার্টি সেক্যুলার – র নেতা। চরণ সিং ১৯৭৯- র ২৮ জুন থেকে ১৯৮০- র ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত মোট ১৭০দিন প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ত্ব সামলেছেন।

৮. ইন্দিরা গান্ধী
_______________
                    ১৪জানুয়ারী , ১৯৮০তে পুনরায় দেশের ক্ষমতায় আসে কংগ্রেস। প্রধানমন্ত্রী হন ইন্দিরা গান্ধী। এটা ছিল ইন্দিরার তৃতীয় দফা। তবে টানা ছিলো না। জরুরী অবস্থার কারণে ইন্দিরার কংগ্রেসকে ক্ষমতা হারাতে হয়েছিলো।মানুষ ভরসা রেখেছিলো জনতা পার্টির উপর। কিন্তু ৮০- তেই দেশের ব্যাটন হাতে নিয়ে নেন ইন্দিরা গান্ধী। তৃতীয়া দফায় ইন্দিরা গান্ধী চার বছর ২৯১দিন প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় ১৯৮৪- র ৩১অক্টোবর ইন্দিরা গান্ধীকে হত্যা করে খোদ তার দেহরক্ষীরা।


৯. রাজীব গান্ধী
_________________
            ইন্দিরা গান্ধীর মৃত্যুর পর দেশের প্রধানমন্ত্রী হন তার ছেলে রাজীব গান্ধী। তিনি ৮৪- র ৩১ অক্টোবর থেকে ৮৯- র ২রা ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন। মতো পাঁচ বছর ৩২দিন।  কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস রাজীব গান্ধীকে বোমা বিস্ফোরণ করে হত্যা করে শ্রীলঙ্কার জঙ্গি সংগঠন এলটিটি।

১০. বিশ্বনাথ প্রতাপ সিং
_____________________”
              রাজীব গান্ধীর মৃত্যুর পর দেশের প্রধানমন্ত্রী হন জনতা দলের নেতা বিশ্বনাথ প্রতাপ সিং। তিনি ৩৪৩দিন প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন। ২রা ডিসেম্বর ১৯৮৯ থেকে ১০ নভেম্বর ১৯৯০ পর্যন্ত।


১১. চন্দ্র শেখর
________________
                  বিশ্বনাথ প্রতাপ সিং এক বছরও প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে স্থায়ী হন নি। তার পরে প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসেন চন্দ্র শেখর। তিনি ছিলেন সমাজবাদী জনতা পার্টি রাষ্ট্রীয় দলের নেতা। মাত্র ২২৩ দিন প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন তিনি।১৯৯০- র১০ নভেম্বর থেকে ৯১- র ২১জুন পর্যন্ত।

১২. পিভি নরসীমা রাও

___________________
                 ফের দেশের ক্ষমতার মসনদে আসে কংগ্রেস। প্রধানমন্ত্রী হন নরসীমা রাও। তিনি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন ৪বছর ৩৩০দিন।১৯৯১- র ২১জুন থেকে ৯৬- র ১৬ মে পর্যন্ত।

১৩. অটল বিহারী বাজপেয়ী:
_______________________

ভারতীয় জনতা পার্টির নেতা অটল বিহারী বাজপেয়ী প্রথম ১৬ দিনের জন্য প্রধানমন্ত্রী হন। ৯৬- র ১৬ মে থেকে জুন পর্যন্ত।


১৪. এইচ ডি দেব গৌড়া:
______________________
              জনতা দল ইউনাইটেডের পক্ষ থেকে এইচ ডি দেব গৌড়াকে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি ১জুন ১৯৯৬ থেকে ২১এপ্রিল ১৯৯৭- পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। মোট ৩২৪দিন।

১৫. ইন্দ্র কুমার গুজরাল
________________________
                জনতা দল ইউনাইটেড এক বছরের মধ্যেই মুখ পরিবর্তন করে।দেব গৌড়ার পরিবর্তে প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসিয়ে দেয় ইন্দ্র কুমার গুঁজরালকে।তিনি মতো ৩৩২দিন দায়িত্বে ছিলেন।

১৬. অটল বিহারী বাজপেয়ী
______’____________________
              ৯৮- র ১৯ মার্চ ফের প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসেন অটল বিহারী বাজপেয়ী।তিনি দ্বিতীয় দফায় ছয় বছর ৬৪দিন প্রধান মন্ত্রীর চেয়ারে ছিলেন।


১৭. মনমোহন সিং
___________________
              ২০০৪- র ২২মে প্রথম ইউপিএ সরকারের প্রধানমন্ত্রী হন মনমোহন সিং। তিনি টান দুই দফায় প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।১৪- র ২৬ মে পর্যন্ত। মোট ১০ বছর চার দিন।

১৮. নরেন্দ্র মোদী
_______________
                 ২০১৪- র মে থেকে এখনো দেশের প্রধানমন্ত্রীর চেয়ার নরেন্দ্র মোদীর কব্জায়। টানা দুই টাম খতম।এখন তৃতীয় দফায় মোদী কি প্রধানমন্ত্রীর চেয়ার ধরে রাখতে পারবেন? তিনি কি  দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহর লাল নেহেরুর সঙ্গে একই ক্লাবের সদস্য হবেন? নাকি ইন্দিরা – মনমোহনদের মতো থেমে যেতে হবে দুই দফায় প্রধানমন্ত্রিত্ব করেই।
               
    *খবর লেখা পর্যন্ত পর্যন্ত গোটা দেশে ৫০৬টি আসনে গণনা শুরু হয়েছে।তারমধ্যে এনডিএ এগিয়ে ৩০৩টি আসনে। ইণ্ডিয়া জোট ১৫২টি আসনে।এবং অন্যান্যরা ৫১টি আসনে এগিয়ে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *