ডেস্ক রিপোর্টার,২০ জানুয়ারি।।
                 দরজায় কড়া নাড়ছে ২৪- র লোকসভা নির্বাচন। নির্বাচন মনের অর্থের বাজার। এই বাজার ধরার জন্য বরাবর মুখিয়ে থাকে রাজ্যের নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা। এই চিত্র বারবার প্রতিফলিত হয়েছে। এবারের আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের আগেও একই চিত্র ফুটে উঠছে রাজ্যের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মধ্যে। ধারাবাহিক ভাবে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন এনএলএফটির বিশ্বমোহন গোষ্ঠী ও পরিমল দেববর্মা গোষ্ঠীর জঙ্গিদের মধ্যে চলছে মূল স্রোতে আসার প্রতিযোগিতা। নিঃসন্দেহে এটা রাজ্যের জন্য মঙ্গল দায়ক। কিন্তু বৈরীরা আত্মসমর্পনের জন্য এই সময়টাকেই কেন বেছে নিয়েছে? স্বাভাবিক ভাবেই এই প্রশ্ন চাগার দিচ্ছে জনমনে।

।।দুই জঙ্গি নেতা বিশ্বমোহন ও পরিমল ।।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, শেষ বছরের নভেম্বর মাস থেকে এখন পর্যন্ত ধাপে ধাপে বিশ্ব মোহন ও পরিমল গোষ্ঠীর প্রায় ২৩ জন বৈরী আত্মসমর্পণ ও গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ,গোয়েন্দা ও বিএসএফের কাছে এরা বিভিন্ন সময়ে হাজির হয়ে ফিরে এসেছে স্বাভাবিক জীবনে। আবার কখনো নিরাপত্তা বাহিনী বৈরীদের গ্রেফতারও করেছে।তাদের মধ্যে দুইজন বিশ্বমোহন গোষ্ঠীর কোর কমিটির সদস্য।একজন উৎপল দেববর্মা, অপরজন শচীন দেববর্মা। উভয়কেই নাকি গ্রেফতার করা হয়েছে। দাবী পুলিশ প্রশাসনের। তবে তাদের গ্রেফতারের বিষয় নিয়েও বেধেছিলো রহস্যের দানা। বাদবাকীদের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে সাত জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকীরা করেছে আত্মসমর্পণ।


অবাক করার মতো ঘটনা বৈরীরা আত্মসমর্পণ করলেও জমা করে নি অস্ত্র। শুধু মাত্র ব্যতিক্রম ছিলো গত ১৬ জানুয়ারি রাজ্য পুলিশের ক্রাইম ব্রাঞ্চের আত্মসমর্পনের ঘটনা। এক্ষেত্রে পাঁচ জঙ্গি আত্মসমর্পনের সময় আগ্নেয়াস্ত্র জমা করেছিলো। তাও আবার এই সমস্ত আগ্নেয়াস্ত্র পুরানো। তবে সচল। এই ঘটনা ব্যতীত অন্যান্য ক্ষেত্রে জঙ্গিরা অস্ত্র জমা করে নি। খালি হাতেই তারা সীমান্ত ডিঙিয়ে চলে এসেছিল এপারে। এবং পুলিশ- গোয়েন্দা – বিএসএফের কাছে করেছে আত্মসমর্পণ।

।সাধারন অস্ত্রসহ গোয়েন্দার কাছে আত্মসমর্পণকারী জঙ্গি।

ভোটের মুখে জঙ্গিদের এই গতি প্রক্রিয়া প্রমাণ করে বাংলাদেশের  ঘাঁটিতে এখনো প্রচুর অস্ত্র মজুদ রয়েছে। রক্ত পিপাসু বৈরীরা তাদের পুনর্বাসন প্রকল্পের সুবিধা পেতে ভোটের প্রাক লগ্নে আত্মসমর্পণ করছে। নয়তো বা গোপন সমঝোতার মাধ্যমে পুলিশ – নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে গ্রেফতারের নাটক মঞ্চস্থ করছে। এখনো জঙ্গি ঘাঁটিতে থাকা জাঁদরেল বৈরীরা আছে নিজেদের আস্তানাতেই। এবং নিরাপদে, নির্ভয়ে! বহাল তবিয়তে। দশকের পর দশক ধরে এরা ইন্টারপোলের ধরা ছোঁয়ার বাইরে। অথচ তাদের নামে রাজ্য স্বরাষ্ট্র দপ্তর ইন্টারপোলের কাছে “রেড কর্নার” জারি করে রেখেছে। শুধু মাত্র দ্বিতীয় ও তৃতীয় সারির বৈরীরা ফিরে আসছে স্বাভাবিক জীবনে। প্রথম সারির বৈরীরা বরাবর পুলিশ – নিরাপত্তা বাহিনী – ইন্টারপোলের রাডারের বাইরে থাকে।


সীমান্ত সূত্রের খবর, ২৪- র নির্বাচনের  আগে আরো কিছু জঙ্গি ওপারে অস্ত্র রেখে ফিরে আসবে এপারে এবং করবে আত্মসমর্পণ। কেউ কেউ পুলিশের গোপন সমঝোতা করে গ্রেফতারের নাটক মঞ্চস্থ করবে।তাদের প্রত্যেকের উদ্দেশ্য পুনর্বাসন প্রকল্পের সুবিধা ভোগ করা। পুনর্বাসনের সুবিধা হাতিয়ে নিয়ে এরাই পুনরায় জঙ্গল মহলে বৈরীদের স্লিপার সেলের এজেন্ট হিসেবে কাজ করে থাকে। অর্থাৎ স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসে সরকারী সুবিধা ভোগ করার পর, পুনরায় মিশে যাচ্ছে জঙ্গিপনার মূল স্রোতে।

।। নাটক মঞ্চস্থ করে গ্রেফতার হওয়া দুই জঙ্গি শচীন – উৎপল।।

এই কারণে নির্মূল হচ্ছে না সন্ত্রাসবাদীরা। হয়তো বা তাদের নখ – দন্ত কিছুটা দুর্বল হচ্ছে। সুযোগ পেলেই এরা চেস্টা করে নিজেদের শক্তির জানান দিতে। ভোটের মুখে সম্পুর্ণ ব্লু প্রিন্ট করেই বৈরীরা বাতাসে উড়তে থাকা “রুপি”র চক চকে নোট ধরতেই লোক দেখানো আত্মসমর্পন ও গ্রেফতারের ছলনা করে থাকে। নির্বাচনের বাজারে ত্রিপুরাকে  “সন্ত্রাস” মুক্ত দেখাতে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার মেনে নেয় রক্ত খেকো উগ্রবাদীদের নানান আবদারও।

।।এখনোও বৈরী ঘাঁটিতে মজুত প্রচুর অস্ত্র।।

তাই ঝোপ বুঝে কোপ দিতে পরোয়া করে না নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্টের সদস্যরা। পর্দার অন্তরালে রাজনীতির সঙ্গে রক্তচোষা ভ্যাম্পিয়ারদের (বৈরী) এই সম্পর্ক অনন্ত কাল ধরেই চলে আসছে। তবে এটা বিলক্ষণ বুঝতে পেরেছেন সাধারণ মানুষও।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *