ডেস্ক রিপোর্টার, ১১মার্চ।।
                অপরাধীরা জাত পাতের ঊর্ধ্বে। তাদের একটাই গোত্র “অপরাধী”। তারপরও জনজাতি সম্প্রদায়ের লোকজন কোনো অপরাধ সংঘটিত করলে, তা দেখা হয় ক্ষমার চোখে। এটা অবশ্যই অনৈতিক। জাতি – জনজাতি উভয় অংশের সমাজদ্রোহীদের ক্ষেত্রে পুলিশকে নিরপেক্ষ হওয়া উচিত। কিন্তু সাম্প্রতিক কালের কয়েকটি ঘটনায় পুলিশ নিজের নামের ক্ষেত্রে সুবিচার করতে পারে নি।

।।বীর লাল নোয়াতিয়া।।

১.গর্জি কাণ্ড:
               সম্প্রতি গর্জি প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের চিকিৎসক সপ্তদ্বীপ দাসকে মারধর করেছিলো তিপ্রামথার নেতা বীর লাল নোয়াতিয়া। ২৩- র বিধানসভা নির্বাচনে বীরলাল ছিলো মাতা বাড়ি কেন্দ্রের তিপ্রামথার প্রার্থী। কর্তব্যরত চিকিত্সকে মারধরের পর থানায় দায়ের করা হিয়েছিল মামলা। কিন্তু পুলিশ তার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী কোনও ব্যবস্থা নেয় নি। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানাও ডেকে পাঠায় নি। এই ঘটনা নিঃসন্দেহে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে।

।।হেমন্ত রিয়াং।।

২. মনটাং ভ্যালি কাণ্ড:
                  তেলিয়ামুড়ার মনটাং ভ্যালিতে কাঠ পাচারের সময় বন দপ্তর গ্রেফতার করেছিল হেমন্ত রিয়াং নামে এক পাচারকারীকে। এই ঘটনা কেন্দ্র করে অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছিল গোটা মনটাং।রাস্তায় নেমে গিয়েছিল গ্রামবাসীরা।একজন পাচারকারীকে বাঁচাতে।মহিলারা বিবস্ত্র হয়ে হামলে পড়েছিল পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর উপর।এরপরও বন দপ্তর কাঠ পাচারকারী হেমন্তকে নিয়ে এসেছিল লক আপে। কিন্তু এখানেও রেহাই নেই। গ্রামবাসীরা পাচারকারী হেমন্ত কে বাঁচাতে ঢুকে পড়েছিল বন দপ্তরের লকআপে। তাকে লকআপ থেকে হিন্দি সিনেমার গায়দায় ছিনতাই করে নিয়ে গিয়েছিল জনজাতি সম্প্রদায়ের উত্তেজিত প্রমিলা বাহিনী। তাও আবার পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সামনেই। লক আপ থেকে  বের করে তার  গলায় দিয়েছিলো ফুলের মালা। যেনো যুদ্ধ জয় করে আসা কোনো সৈনিক। কিন্তু দুর্ভাগ্যের হলেও সত্যি হেমন্ত তার অপরাধের জন্য কোনো শাস্তি পেলো না। বরং হেমন্ত রিয়াংয়ের বোন তৎকালীন তেলিয়ামুড়ার এসডিএফও সাবির কান্তি দাসের বিরুদ্ধে মোঙ্গিয়াকামী থানায় মামলা দায়ের করেছিলো। আর এই কারণেই মহকুমা বন আধিকারিক সাবির কান্তিকে বদলি করে দিয়েছিল প্রশাসন। অথচ গুরুতর অপরাধ করেও আইনের চোখে পাড় পেয়ে গিয়েছিলো বন দস্যু হেমন্ত রিয়াং।


৩.কলই পাড়া কাণ্ড:
                  রাতের আধারে কলইপাড়াতে দুষ্কৃতীরা হামলা চালিয়ে ছিলো। করেছিলো বাড়িঘরে ভাঙচুর। রাস্তায় লিখেছিলো “গো ব্যাক ওয়ান্স”। এই ধরনের ঘটনা কারা সংঘঠিত করতে পারে? এটা সহজেই অনুমেয়। কিন্তু ঘটনার কুশীলবদের আজ পর্যন্ত খোঁজে বের করতে পারে নি পুলিশ। অথচ এই ঘটনা কে বা কারা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল করেছে, তাদের সনাক্ত করতে ব্যস্ত পুলিশ। মূল ঘটনা এখন ক্লোজ চ্যাপ্টারে পরিণত হয়েছে। এটা পুলিশের চরম ব্যর্থতা। একই সঙ্গে পর্দার আড়াল করে দিয়েছে অপরাধীদের।


৪. পশ্চিম ডলুছড়া কান্ড:
                  ধলাই জেলার কমলপুর মহকুমার সালেমার প্রত্যন্ত গ্রাম পশ্চিম ডলুছড়া। এই গ্রামে জনজাতি সম্প্রদায়ের লোকজন বল পূর্বক বাঙালির জমি দখল করেছে। টাক্কাল দিয়ে আক্রমণ করেছে। আক্রান্ত লোকজন থানায় মামলা দায়ের করেছে। জেলা শাসককে জানিয়েছে ঘটনা। তারপরও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় নি।বরং গ্রামের প্রতিবাদী মানুষ অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক মানিক নাথের বাড়িতে ষড়যন্ত্র করে দুইটি গাদা বন্দুক রেখে গিয়েছিল জনজাতি অংশের মানুষ।পুলিশ মানিক নাথের দুই ছেলেকে আটক করেছিলো।পরবর্তী সময়ে পুলিশ তদন্ত করে পুরো ঘটনা উন্মোচন করে।এবং পুলিশের কাছে ষড়যন্ত্র – র বিষয়টি প্রকট হয়।এলাকার বাঙালি অংশের লোকজন জনজাতি দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে নাম,ঠিকানা দিয়ে সালেমা থানায় মামলা দায়ের করেছিল।তারপরও পুলিশের কোনো হেলদোল নেই। দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে নরম মনোভাব পুষণ করেছিলো পুলিশ। কার স্বার্থে? প্রশ্ন উঠছে জনমনে।


রাজ্য পুলিশের জনজাতি তোষণের বহু নিদর্শন রয়েছে। দৃষ্টান্তের শেষ নেই। বাম জামানা থেকে রাম জামানা। সর্ব ক্ষেত্রেই  পুলিশের মনোভাব এক। তারা জনজাতি সম্প্রদায়ের অপরাধীদের আগলে রেখে দিতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে।


অথচ শাস্তির যুপ কাষ্ঠে ঠেলে দেয় অনুপজাতি অংশের লোকজনকে। যুগ যুগ ধরেই রাজ্য পুলিশের এক চোখে ঘী, আর অন্য চোখে তেল,এই নীতি চলে আসছে। আগামী দিনেও বহাল থাকবে।বলছেন ক্ষুব্ধ ও ভূক্তভোগী অংশের বাঙালিরা।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *