*ঢাকা থেকে হরলাল রায় সাগর*
             ______________________________


            পদ্মাসেতুর (ঢাকা-ভাঙ্গা) এক্সপ্রেসওয়েতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রেলিং ভেঙ্গে যাত্রীবাহী বাস খাদে পড়ে ২০ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ২৫ জন। নিহতদের মধ্যে বাসটির চালক ও সুপারভাইজারও রয়েছেন। মাদারীপুরে শিবচরের কুতুবপুর এলাকায় আজ রোববার সকাল সাড়ে ৭ টার দিকে এমাদ পরিবহনের একটি বাস এই দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। ফায়ার সার্ভিসের দাবি, চাকা ফেটে নিয়ন্ত্রণ হারায় বাসটি। এ দুর্ঘটনার জন্য বাসচালকের বেপরোয়া গতিকে দায়ী বলছে পুলিশ।
এদিকে নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২৫ হাজার টাকা নগদ সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। এছাড়াও আহতদের দেওয়া হয়েছে ৫ হাজার টাকা করে। বাস দুর্ঘটনার সঠিক কারণ জানার জন্য মাদারীপুর জেলা প্রশাসনর ৪ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটিকে দুই কর্ম দিবসের মধ্যে বিস্তারিত প্রতিবেদন দিতে বরা হয়েছে।
মাদারীপুর জেলার পুলিশ সুপার মাসুদ আলম বলেন, বাসচালকের বেপরোয়া গতিই এ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। দুর্ঘটনাকবলিত বাসটি সরাতে ঘটনাস্থলে কাজ করেছে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ। এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


শিবচর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু নাঈম মো. মোফাজ্জেল হক মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কুতুবপুর এলাকায় পদ্মা সেতুর এক্সপ্রেসওয়েতে ঢাকাগামী এমাদ পরিবহনের যাত্রীবাহী বাস খাদে পড়ে অন্তত ২০ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। আহত হয়েছেন অন্তত ২৫ জন। ঘটনাস্থলেই মারা যান ১৭ জন। পরে হাসপাতালে আরও ৩ জনের মৃত্যুর খবর জানা যায়। নিহত ২০ জনের মধ্যে ১৭ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। বাকি ৩ জনের পরিচয় সন্ধ্যায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।
নিহতরা হলেন-ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার হিতোডাঙ্গা গ্রামের সৈয়দ মুরাদ আলীর ছেলে মো. ইসমাইল(৩৮), গোপালগঞ্জের গপিনাথপুর গ্রামের হেদায়েত মিয়া বাহার (৪২), নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার কালনা গ্রামের বকু সিকদারের ছেলে ফরহাদ সিকদার (৩০), গোপালগঞ্জের পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক অনাদী রঞ্জন মন্ডল (৪২), গোপালগঞ্জ সদরের বনগাঁও এলাকার সামছুল শেখের ছেলে মোস্তাক শেখ (৩০), গোপালগঞ্জ সদরের ছুটকা গ্রামের নশর আলী শেখের ছেলে সজিব শেখ (২৬), গোপালগঞ্জ সরদরের পাঁচুরিয়া গ্রামের মাসুদ মিয়ার মেয়ে সুইটি আক্তার (২২), গোপালগঞ্জর টুঙ্গিপাড়ার নিলফা গ্রামের কাঞ্চন শেখের ছেলে কবির শেখ, গোপালগঞ্জ সদরের আবু হেনা মস্তফার মেয়ে আফসানা মিমি (২০), গোপালগঞ্জ মুকসুদপুরের আদমপুরের আমজাদ আলী খানের ছেলে মাসুদ খান (৩২), খুলনার সোনাডাঙার শেখ আহমেদ আলী খানের ছেলে শেখ আব্দুল্লাহ আল মামুন (৪২), খুলনার চিত্তরঞ্জন মন্ডলের ছেলে চিন্ময় প্রসন্ন মন্ডল, খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার পরিমল সাধুর ছেলে মহাদেব কুমার সাধু, খুলনার টুটপাড়ার শাজাহান মোল্লার ছেলে আশরাফুল আলম লিংকন, সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার সখীপুর গ্রামের আমজেদ আলী সরদারের ছেলে রাশেদ সরদার, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবার অনন্তপুর গ্রামের আলী আকবরের ছেলে জাহিদ ও গোপালগঞ্জ সদরের পুরান মানিকদি গ্রামের ইমাদ বাসের সুপারভাইজার মিনহাজ বিশ্বাস (২২)।
স্থানীয় লোকজন জানায়, খুলনা থেকে ছেড়ে আসা এমাদ পরিবহনের একটি বাস সকালে শিবচরের কুতুবপুর এলাকায় ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রেলিং ভেঙে খাদে পড়ে যায়। এ সময় বাসটি দুমড়েমুচড়ে যায়। ঘটনাস্থলেই ১৪জন নিহত হন। শিবচরে হাসপাতালে নেওয়ার পথে আরও ৪ জনের মৃত্যু হয়। এ ছাড়া ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর আরও দুই জনের মৃত্যু হয়।


এমাদ পরিবহনের রয়্যাল মোড়ের কাউন্টার মাস্টার শরীফ তাকে বলেন, ভোরে খুলনা থেকে ইমাদ পরিবহনের বাসটি নয়জন যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। দুর্ঘটনার পর খুলনার ছয়জনের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়েছে, বাকি তিনজনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি। তিনি আরও বলেন, যাত্রী তালিকা থেকে দেখলাম ৪০ জন যাত্রীর মধ্যে নয়জন খুলনার যাত্রী। রয়্যালের মোড় থেকে প্রথমে চারজন, পরে সোনাডাঙ্গা থেকে পাঁচজন যাত্রী ওঠেন। বেশিরভাগ যাত্রী উঠে গোপালগঞ্জের।
শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজিবুল ইসলাম জানান, নিহতদের পরিচয় নিশ্চিত করে স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২৫ হাজার টাকা নগদ সহায়তা এবং আহতদের বিনামূল্যে চিকিৎসাসহ ৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে।
শিবচর ফায়ার সার্ভিসের লিডার হারুণ অর রশিদ জানান, এমাদ পরিবহণের বাসটি সামনের বাম পাশের চাকা বিস্ফোরিত হয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। দ্রুত গতির হওয়ায় এক্সপ্রেসওয়ের রেলিং ভেঙে নিচে পড়ে যায়। দুমড়ে-মুচড়ে যায় বাস। চালক দ্বিখণ্ডিত হয়ে ঘটনাস্থলে মারা যান। হাসপাতালে মারা যান সুপারভাইজার। বাস দুঘর্টনায় মোট ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে।
মাদারীপুর জেলা প্রশাসক রহিমা খাতুন বলেন, দুর্ঘটনার বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) পল্লব কুমার হাজরাকে প্রধান করে ৪ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটিতে জেলা পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিসসহ বিভিন্ন বিভাগের প্রতিনিধিরা থাকবেন। আগামী দুই কর্ম দিবসের মধ্যে তদন্ত কমিটিকে দুর্ঘটনার মূল কারণ বিস্তারিত অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *