ডেস্ক রিপোর্টার,২৪ফেব্রুয়ারি।।
“ভৌগোলিক সীমারেখা কখনও পারস্পরিক হৃদ্যতায় অন্তরায় হতে পারে না। বাংলাদেশের সাথে ত্রিপুরার জলপথ, রেলপথ সহ যোগাযোগের নয়া দিগন্ত উন্মোচনের মাধ্যমে আর্থিক এবং বাণিজ্যিক সমৃদ্ধির বিশাল সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।” বুধবার দ্বিতীয় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসব, আগরতলা শীর্ষক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব। রাজধানীর একটি তারকা হোটেলে এই চলচ্চিত্র উৎসবের সূচনা হয়। অনুষ্ঠানে ত্রিপুরা ও বাংলাদেশের প্রতিনিধিগণ পারস্পরিক স্মারক উপহার বিনিময় করেন। কোভিড পরিস্থিতি বিবেচনা করে এদিন শুধুমাত্রই চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে। চলতি বছরের এপ্রিল বা মে মাসে কোভিড পরিস্থিতি বিবেচনা করে চলচ্চিত্র প্রদর্শনী করা হবে। জানিয়েছে উদ্যোক্তারা।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রতিবেশি বাংলাদেশের সাথে ত্রিপুরার এক সুদীর্ঘ আত্মিক সম্পর্ক রয়েছে। সাংস্কৃতিক এবং বাণিজ্যিক ক্ষেত্রেও ক্রমশ তা প্রতিফলিত হচ্ছে। চলচ্চিত্র ক্ষেত্রে চিত্রায়ন উপযোগী ত্রিপুরার সম্ভাবনাময় দিকগুলিকে কাজে লাগাতে চলচ্চিত্র নির্মাতাদের এগিয়ে আসার আহ্বান রাখেন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে উত্তর পূর্বাঞ্চলের বাণিজ্যিক হাব হিসেবে উঠে আসছে ত্রিপুরা। মৈত্রী সেতু, আখাউড়া হয়ে আন্তর্জাতিক রেলপথ, স্পেশাল ইকোনমিক জোন সহ বিভিন্ন সুযোগকে কাজে লাগিয়ে পণ্য আমদানি রপ্তানিতে একদিকে যেমন দূরত্ব কমবে তেমনি লাঘব হবে পরিবহণ খরচ। চিটাগাঙ বন্দর ও হলদিয়া বন্দর দুইয়ের ক্ষেত্রেই দূরত্ব অনেকাংশে কমবে। এইক্ষেত্রে বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী রাজ্য হিসেবে ত্রিপুরা যেমন উত্তর পূর্বাঞ্চলের বাণিজ্যিক করিডোর হিসেবে এর সুফল পাবে তেমনি বাংলাদেশও লাভবান হবে।
মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, আগামী ২৫ বছরে সরকার রাজ্যকে ঠিক কোন দিশায় নিয়ে যেতে চাইছে ‘লক্ষ্য ২০৪৭’ শীর্ষক দিক নির্দেশিকা ইতিমধ্যেই প্রকাশিত হয়েছে। এর ফলশ্রুতিতে ভাবী প্রজন্ম যেমন ভবিষ্যৎ জীবিকা নির্ভর শিক্ষা গ্রহণ ও নিজেকে তৈরি করার সুযোগ পাবে তার পাশাপাশি ত্রিপুরার শিল্প সম্ভাবনাময় দিকগুলিতে শিল্পপতিরাও বিনিয়োগের সঠিক রূপরেখা পাবেন। ত্রিপুরায় তৈরি হওয়া বিনিয়োগ অনুকূল শিল্প পরিমন্ডলকে কাজে লাগিয়ে শিল্প কারখানা স্থাপন সহ বাণিজ্যিক অগ্রগতিতে এগিয়ে বাংলাদেশের শিল্পপতিদের আহ্বান রাখেন।
মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, দুইদেশের প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিক প্রচেষ্টায় ক্রমেই সুদীর্ঘ আত্মিক সম্পর্ক দুই রাষ্ট্রের বিকাশেই উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছে। বর্তমান বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাফল্যের নজির স্থাপন করছে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত বাংলাদেশের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাসান মহম্মদ বলেন,” ১৯৭১’র মুক্তিযুদ্ধে ভারত যেভাবে বাংলাদেশের মুক্তিকামী মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলো তা কখনও ভোলার নয়। বাস্তবিক আপ্যায়নের পাশাপাশি মনের দুয়ারও খুলে দিয়েছিলেন এই অঞ্চলের মানুষ। ত্রিপুরা এবং বাংলাদেশের ভাষা, খাদ্য, পোশাক এবং সাংস্কৃতিক সাদৃশ্য দুই অঞ্চলের নৈকট্যকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এই চলচ্চিত্র উৎসব সুদীর্ঘ এই সম্পর্ককে আরও মজবুত করবে। ত্রিপুরা সহ উত্তর পূর্বাঞ্চলের বিষয়ে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেবের ঐকান্তিক প্রচেষ্টারও ভূয়সী প্রশংসা করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী।তিনি বলেন, শিল্প ও সংস্কৃতির আদান প্রদান ও তার বিকাশে গুচ্ছ পরিকল্পনা নিয়েছে রাজ্য সরকার। সত্যজিৎ রায় ফিল্ম ইনস্টিটিউটের সাথে মিলে রাজ্যে একটি চলচ্চিত্র প্রতিষ্ঠান করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। শুধুমাত্র সংস্কৃতিকে নয় বাংলাদের সঙ্গে ক্রীড়াক্ষেত্রেও সুদূরপ্রসারী উদ্যোগের উপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, এই চলচ্চিত্র উৎসবকে কি করে শহরকেন্দ্রিক না রেখে ত্রিপুরার জেলা এবং মহকুমাস্তর পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া যায় সে লক্ষ্যেও রাজ্য সরকার চিন্তা ভাবনা করছে। মনোবার্তার প্রকাশক চলচ্চিত্র সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধির পাশাপাশি রোজগার সৃষ্টিরও এক অন্যতম মাধ্যম। এরফলে চলচ্চিত্র জগতের সঙ্গে যুক্ত কলাকুশলীরাও কাজের সুযোগ পাবেন। আগামীদিনে ত্রিপুরা এবং বাংলাদেশ ক্রীড়া, সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে হাতে হাত ধরে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি। অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ সদস্য জনাব সাইমুম সরওয়ার কমল, সংসদ সদস্য মমতাজ বেগম সহ বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পী, ব্যবসায়ী প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *