ডেস্ক রিপোর্টার,আগরতলা।।
“বাবা, ও বাবা আমাকে উল্টো রথ দেখতে নিয়ে যাবে।?” পুত্রের ডাকে সাড়া দিয়ে বাবা বললেন হ্যাঁ, যাবো। পিতা – পুত্রের এই আলাপ চারিতা বুধবার সকালে।
বিকেল উল্টো রথকে একটু স্পর্শ করতে হবে। টান দিতে হবে রথের দড়িতে।তাই ঘরে পিতা – পুত্রের ব্যস্ততা।দ্রুত সম্পন্ন হবে হবে ঘরের জমানো কাজ।
ব্যাস, রথ দেখার স্পৃহায় পিতা – পুত্র দ্রুত কাজ সেরে নিলেন ঘরের। সাহায্য করেছেন মাও।বিকেলে সময় মতো পিতা – পুত্র রথ দেখার জন্য হাতে হাত ধরে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। তারা আর ফিরে আসেনি বাড়িতে। পিতা-পুত্র উভয়কেই জগন্নাথ নিয়ে যান না ফেরার দেশে।
এই হৃদয় বিদারক ঘটনার কুমারঘাট ইয়ংস্টার ক্লাব এলাকার দাস বাড়িতে।এই বাড়ির ছেলে রূপক দাস।বয়স ৪০। রূপকের একমাত্র পুত্র সন্তান রোহন। তার বয়স নয়। পুত্র রোহন তার বাবার কাছে বায়না ধরেছিল উলটো রথ দেখার জন্য। বাবা রূপক ছেলের আবদার ফেলতে পারেন নি। আর পারবেনই বা কিভাবে? জগন্নাথের রথ বছরে আসে একবার। আর রথের রসি স্পর্শ করলে জীবনে আসে পূর্ণতা।
একমাত্র পুত্র সন্তান রোহনের আবদার ও আধ্যাত্মিক বিষয় মাথায় রেখে রূপক দাস ছেলেকে নিয়ে উলটো রথের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যান বাড়ি থেকে। তখনও পরিবারের লোকজন জানেন না রূপক ও রোহন আর পাঁচটা দিনের মতো বাড়িতে ফিরে আসবেন না।
অন্যান্য পূর্নার্থীদের মতো পুত্র রোহনের হাত ধরে বাবা রূপক রথের পিছু নেন। কখনো রথ আবার কখনো রথের রসি স্পর্শ করেন পিতা – পুত্র। আবার রথের মিছিলে লুট দেওয়া তিলাই – বাতাসা – কলা কুড়িয়ে নেন রূপক ও রোহন।কারণ এইগুলি তো জগন্নাথের প্রসাদ। উদ্দেশ্য বাড়িতে এসে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বন্টন করবে প্রসাদ।
বিকেল নাগাদ ইসকনের রথ উত্তর পাবিয়া ছড়ার দিকে রওয়ানা হয়। স্থানীয় গীতাঞ্জলী অডিটরিয়ামের সামনে আসতেই জাতীয় সড়কের উপর ভেসে থাকা বিদ্যুৎ পরিবাহী তারের সঙ্গে রথের চূড়ার সঙ্গে স্পর্শ হয়। দেখতে দেখতে কয়েক মিনিটেই সব শেষ। বিদ্যুতের ছোবলে জীবন্ত ঝলসে যায় ছয়টি তাজা প্রাণ। আহত হন ১৬জন। মৃতদের মধ্যেই আছেন কুমারঘাটের ইয়ংস্টার ক্লাব এলাকার দাস বাড়ির ছেলে রূপক ও তার একমাত্র পুত্র সন্তান রোহন।
পিতা – পুত্রের মর্মান্তিক মৃত্যুতে এলাকার আকাশ -বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। মুখের ভাষা হারিয়ে ফেলেছে পরিবারের লোকজন। তারা সম্পূর্ন ভাবে বাক রুদ্ধ। শোকার্ত পরিবারটিকে শান্তনা দেওয়া ভাষা নেই আশপাশের লোকজনের। রূপক ও তার পুত্র সন্তান পরিবারে রেখে গেলেন বহু স্মৃতি। বাপ – বেটা হাতে হাত ধরে বেরিয়েছিল বাড়ি থেকে। আবার হাতে হাত ধরে তারা চিরতরে চলে গিয়েছেন জগন্নাথের বাড়িতে। রূপক – রোহন আর কোনো দিন আসবেন না কুমারঘাটের ইয়ংস্টার ক্লাব এলাকার দাস বাড়িতে।