ডেস্ক রিপোর্টার,৪এপ্রিল।।
        রাজ্যের জনজাতি ভিত্তিক রাজনৈতিক দল অতীতের টিইউজেএস থেকে হালের তিপ্রামথা। প্রয়াত জনজাতি নেতা শ্যামা চরণ ত্রিপুরা থেকে প্রয়াত এন সি দেববর্মা।  প্রত্যেকেই রাজ্যের জনজাতিদের উন্নয়নের এজেন্ডাকে সামনে রেখে রাজনীতির মঞ্চ সাজিয়েছিলেন। ব্যতিক্রম নন, প্রদ্যুৎ কিশোর।তিনিও জনজাতিদের স্বার্থ রক্ষার্থে চাইছেন সাংবিধানিক সমাধান। খুব শীঘ্রই তিপ্রামথার নেতা প্রদ্যুৎ কিশোরের দাবিকে সম্মান জানিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার সাংবিধানিক সমাধানের জন্য নিয়োগ করতে চলছে ইন্টারলোকেটর।

বিজ্ঞাপন

রাজ্যের জনজাতি সম্প্রদায়ের মানুষ আজও পাহাড়ে নিদারুন কষ্টে দিন কাটাচ্ছে।আজকের ডিজিটাল ভারতেও  রাজ্যের জনজাতিদের এক মাত্র জলের উৎস কাচা কুয়োর জল,বৃষ্টির জল। তারা নদী বা ছড়ার দূষিত জল দিয়ে তেষ্টা মেটায়। প্রতি বছর আক্রান্ত হয় বিভিন্ন জল বাহিত রোগে। পাহাড়ে অধিকাংশ জনজাতি আজও রাত্রি যাপন করে টং ঘরে।জুম চাষ তাদের এক মাত্র অর্থ উপার্জনের পথ। তাদের পরিধান যোগ্য বস্ত্র নেই ভালো করে। আর শিক্ষা অথৈ জলে।


ইতিহাসের তথ্য অনুযায়ী, ত্রিপুরার রাজাদের রাজত্ব কাল শুরু হয়েছিল আনুমানিক চতুর্দশ শতাব্দী থেকে। প্রথম রাজা ছিলেন মহা মাণিক্য । তার শাসন কাল ছিলো আনুমানিক ১৪০০–১৪৩১ পর্যন্ত। ত্রিপুরার রাজাদের ইতিহাসও দীর্ঘ।তাদের রাজত্বে চতুর্দশ শতাব্দী থেকে পঞ্চ দশ শতাব্দীতে ত্রিপুরা রাজ্য উত্তর ও পশ্চিমে ব্রহ্মপুত্র নদ ও দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। এছাড়া সেই সময়ে ত্রিপুরা রাজ্যের মধ্যেই ছিলো পূর্ব বঙ্গ  ও বার্মার কিছু অঞ্চল। ১৪০০ থেকে ১৯৪৭ পর্যন্ত ত্রিপুরাতে মোট ৪৮ জন রাজা রাজত্ব করেছিলেন।শেষ রাজা ছিলেন বীর বীরবিক্রম কিশোর মানিক্য।

*  তিপ্রা রাজাদের দীর্ঘ শাসন কালে রাজ্যের
জনজাতিদের ভাগ্য বদলাতে পারে নি।

*  ভারতের সঙ্গে ত্রিপুরার অন্তর্ভুক্তিতেও
বদলায় নি জনজাতিদের ভাগ্য।

*জনজাতিদের বৃহৎ অংশ আর্থ ও
সামাজিক ভাবে আজও পিছিয়ে ।

*তাহলে কাদের উন্নয়ন হয়েছে?

* শুধু মাত্র উন্নয়ন হয়েছে বিত্তশালী জনজাতিদের।



প্রশ্ন উঠছে,রাজ্যের জনজাতিদের অনুন্নয়নের জন্য কারা দায়ী? রাজন্য শাসন থেকে শুরু করে ভারত ভুক্তির পরও কেন জনজাতিদের বৃহৎ অংশের আক্ষরিক অর্থে কোন উন্নয়ন হয়নি? তারা কেন আজও বসবাস করছে টং ঘরে? কেনই বা তারা কুয়োর জল বা ছড়ার জল ,বৃষ্টির জল দিয়ে তেষ্টা মেটাচ্ছে। এখনো কেন বড় অংশের জনজাতিরা বেরিয়ে আসতে পারেনি জুম চাষ থেকে? এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারবেন কি জনজাতি নেতৃত্ব।

বিজ্ঞাপন

   না। তবে রাজ্যের জনজাতি নেতৃত্ব অবশ্যই বলবেন, তার জন্য নিশ্চিতভাবে দায়ী বাঙালিরা। আসলে নিজেদের মধ্যে থাকা ভোগ বিলাসী জনজাতি লোকজনকে অন্তরালে রাখতেই সুপরিকল্পিত ভাবে কয়েক দশক ধরে জনজাতি নেতৃত্ব ঢিল ছুড়ছে বাঙালি সম্প্রদায়ের দিকে।কারণ তাহলেই সাধারণ  জনজাতি সম্প্রদায়ের লোকজনকে সামনে রেখে তিপ্রাসাদের শিক্ষিত সমাজ তাদের রাজনৈতিক ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারবে নিশ্চিন্তে।


রাজ্যের বাঙালি সমাজের প্রশ্ন, বাঙালি সম্প্রদায়ের মানুষ তো বলেনি তিপ্রাসারা কুয়োর জল,বৃষ্টির জল বা ছড়ার জল খেয়ে তেষ্টা মেটাক। বাঙালি তো বলেনি,জনজাতিরা টং ঘরে থাকুক।  জনজাতিদের জুম চাষ থেকে বেরিয়ে আসতে তো বারণ করেনি বাঙালিরা। তাহলে রাজ্যের জনজাতিদের অনুন্নয়নের জন্য কেন নিরীহ – শান্তি প্রিয় বাঙালিদের দায়ী করা হবে বারবার?

বিজ্ঞাপন

রাজ্যের জনজাতি ভিত্তিক রাজনৈতিক দল টিইউজেএস  থেকে  আইএনপিটি – এনসিটি – তিপ্রাহা –  টিপিএফ – আইপিএফটি এবং হালের তিপ্রামথা।প্রতিটি রাজনৈতিক দলের উত্থানের পেছনে মূল এজেন্ডা বাঙালি বিদ্বেষ। কাউর এজেন্ডা ছিলো স্বাধীন রাজ্য, কাউর দাবি পৃথক রাজ্য।কেউ চেয়েছিল তিপ্রাল্যান্ড।আবার কেউ এক ধাপ এগিয়ে গ্রেটার তিপ্রাল্যান্ড। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, বিভিন্ন সময়ে গজিয়ে উঠা সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলের নেতারা জাতিবিদ্বেষকে উস্কে দিয়ে শুধুমাত্র নিজের এবং নিজের পরিবারের উন্নয়ন করেছেন । নিজেরা সমৃদ্ধ হয়েছেন অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে। বসবাস করছেন অট্টালিকা সমেত সরকারি আবাসে।কখনো আবার শহরের বুকে তৈরি করছেন স্বপ্নের নীড়। থাকছেন শীত তাপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে। চাপছেন দামী গাড়িতে। আর গলায় ধরছেন বাঙালি বিদ্বেষের স্লোগান। প্রয়োজনে বাঙালির রক্তে রাঙ্গায়িত করছে নিজেদের হাতকেও।


তাতে অবশ্যই সাধারণ জনজাতিদের  কোন উন্নয়ন হয়নি । তারা আজকের ডিজিটালের যুগেও এক বস্ত্র পরিধান করে দুমুঠো  অন্নের সন্ধানে প্রতি দিন আকাশে আধো আধো সূর্যের আলো উকি দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই প্রবেশ করে গহন অরণ্যে। বনের লাকড়ি, ফল, সবজি বিক্রি করে পড়ন্ত বিকেলে কেজি খানেক চাল, শ- দুইশ দল কিনে  ঘরে ফিরেন। রাতে বিনা নুনেই সন্তান সন্তিদের মুখে তুলে দেন দুমোঠু অন্ন। আর অন্ন জোগাড় করতে না পারলে, বিকল্প হিসেবে বনের আলু খেয়ে উদর পূর্তি করে থাকে। এটার নামই কি জনজাতি উন্নয়ন?  শ্যামা চরণ থেকে বিজয় রাঙ্খল, এনসি থেকে মেবার – অনিমেষ দেববর্মা, প্রদ্যুৎ কিশোর সহ তাদের নেতৃত্বের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক শ্রীবৃদ্ধি ঘটেছে।  কিন্তু সাধারণ জনজাতিদের সমস্যা আজও আছে সেই তিমিরেই।


রাজ্যের বর্তমান বিরোধী দল তিপ্রামথার দাবী মেনে কেন্দ্রীয় সরকার সাংবিধানিক সমাধানের পথে হাঁটবে। এটা পরিষ্কার। নিয়োগ হবে ইন্টারলোকেটর । আক্ষরিক অর্থে কেন্দ্রীয় সরকারের এই সাংবিধানিক সমাধান কি পাহাড়ের চূড়ায় জন্তু,জানোয়ারের ভয়ে টং ঘরে  বসবাসকারী জুমিয়াদের ভাগ্যের পরিবর্তন আনতে পারবে?


তারা কি ছাদ  দেওয়া পাকা ঘরে নিশ্চিন্তে রাত্রিযাপন করার সুযোগ পাবে? নাকি চতুর্দশ শতক থেকে শুরু করে, আজ পর্যন্ত যে হালে আছে রাজ্যের সাধারণ জনজাতিরা,সেই হালেই কি থাকবে? এই প্রশ্ন তুলছে খোদ রাজ্যের বঞ্চিত জনজাতি অংশের মানুষ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *