লালকেল্লায় স্বাধীনতা সংগ্রামী শচীন্দ্র লাল সিংয়ের ছবি।

ডেস্ক রিপোর্টার, ২০আগষ্ট।।
         রাজ্যের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী শচীন্দ্র লাল সিং।তিনি ছিলেন একজন ‘জননেতা’। কিন্তু দীর্ঘ বাম জামানায় নৃপেন চক্রবর্তী, দশরথ দেববর্মার মতো কমিউনিস্ট ‘জননেতা’দের ফ্লেভারে পর্দার অন্তরালে চলে যান কংগ্রেস ঘরানা থেকে উঠে আসা “জননেতা” শচীন্দ্র লাল সিং। তবে তাঁর জন্য সিপিআইএম যতোটা না দায়ী, তার চেয়ে বেশি দায়ী ত্রিপুরা কংগ্রেস। রাজ্যের কংগ্রেস নেতৃত্ব তাদের লিজেন্ড নেতা তথা স্বাধীনতা সংগ্রামী এবং প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী শচীন্দ্র লাল সিং’কে কখনো লাইম লাইটে আনে নি। কখনো ঘটা করে জন্ম বার্ষিকী বা মৃত্যু বার্ষিকী পালন করা হয় নি।অভিযোগ শচীন্দ্র লালের অনুগামীদের।
রাজ্য রাজনীতির পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে হঠাৎ করেই কদর বেড়ে গেলো প্রয়াত কংগ্রেস নেতা তথা স্বাধীনতা সংগ্রামী এবং প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শচীন্দ্র লাল সিংয়ের।আগরতলা থেকে দেশের রাজধানী দিল্লি স্মরণ করলো করলো শচীন্দ্র লাল সিংকে। রাজনীতির বিশারদরা বলছেন, এই মুহূর্তে প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শচীন্দ্র লাল সিং কংগ্রেস – বিজেপি’ উভয় রাজনৈতিক দলের “বর্ম” হয়ে উঠেছে।এর আঁচড় লাগবে রাজ্য রাজনীতিতেও।


৭আগষ্ট, ১৯০৭ শচীন্দ্র লাল সিংয়ের জন্ম। এবং মৃত্যু ২০০০ সালে ৮ ডিসেম্বর। শচীন্দ্র লাল সিংয়ের মৃত্যুর পর তাঁর জন্ম বার্ষিকী ও মৃত্যু বার্ষিকী পালন করা হলেও কোনো এক অজ্ঞাত কারণে তাতে খুব বেশি প্রাণ ছিলো না। কংগ্রেস ভবন ছাড়া বিক্ষিপ্ত ভাবে কোথায়ও কোথায়ও পালন করা হতো। দাবি প্রবীন কংগ্রেসীদের।
দীর্ঘ দিন কংগ্রেস নেতৃত্ব শচীন্দ্র লাল সিংকে কংগ্রেস ভবনে সীমাবদ্ধ রাখলেও সুদীপ জামানায়(দ্বিতীয় ইনিংসে) ফের লাইম লাইটে চলে আসেন তিনি। চলতি বছরের ৭আগষ্ট প্রদেশ কংগ্রেস শচীন্দ্র লাল সিংয়ের নামে মঞ্চ তৈরি করেছিলো। এবং কংগ্রেস ভবনের সামনে এই মঞ্চে হয়েছে কংগ্রেসের যোগদান। কংগ্রেস ভবন সহ গোটা রাজ্যে কংগ্রেস পালন করেছিলো শচীন্দ্র লাল সিংয়ের জন্ম দিন।
রাজনীতিকরা বলছেন, প্রায়ত শচীন সিংকে সন্মান জানানোর পাশাপাশি কংগ্রেস নেতৃত্ব এক আবেগ তৈরি করার প্রয়াস করেছে।এবং শচীন্দ্র লাল সিংয়ের মতো কংগ্রেসের লিজেন্ড নেতার আদর্শ মানুষের মধ্যে পৌঁছে দেওয়ার চেস্টা করেছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব।
রাজ্য কংগ্রেসের এই চমকের পর শচীন্দ্র লাল সিংকে নিয়ে বড় ট্রাম কার্ড খেলেছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। গোটা দেশের বাছাই করা স্বাধীনতা সংগ্রামীদের সঙ্গে স্থান পেয়েছেন রাজ্যের প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শচীন্দ্র লাল সিং।

কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকার দেশের ৭৬তম স্বাধীনতা দিবসে দিল্লির “লাল কেল্লার” সামনে বীর স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ছবি লাগিয়ে ইংরেজের বিরুদ্ধে তাদের লড়াইয়ের ইতিহাস তুলে ধরেছে।তাদের মধ্যে একজন শচীন্দ্র লাল সিং। এদিন ত্রিপুরা থেকে আর কোনো স্বাধীনতা সংগ্রামীর ছবি লাল কেল্লায় ছিলো না।কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে রাজ্যের জন্য বড় পাওনা বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।
রাজনীতিকরা বলছেন, এই রাজ্যে কমিউনিস্ট নেতা তথা প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী নৃপেন চক্রবর্তী, দশরথ দেববর্মার মতো কংগ্রেস নেতা শচীন্দ্র লাল সিংয়েরও জাতি – জনজাতি উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে জনপ্রিয়তা রয়েছে। সিপিআইএম প্রচারের মাধ্যমে তাদের দুই নেতাকে বর্তমান প্রজন্মের কাছেও যে ভাবে লিজেন্ড হিসাবে তুলে ধরেছে, কংগ্রেস তা পারেনি। শচীন্দ্র লাল সিং ও সুকুময় সেনগুপ্ত রাজ্যের প্রথম ও দ্বিতীয় মুখ্যমন্ত্রী। এবং দুইজনেই “জননেতা”। দুর্ভাগ্যের বিষয় বর্তমান প্রজন্মের কাছে কংগ্রেস তাদের এই দুই নেতার লড়াইয়ের ইতিহাস নিয়ে যেতে পারে নি।
রাজনীতিকদের বক্তব্য, প্রদেশ কংগ্রেস প্রয়াত শচীন্দ্র লাল সিংকে সামনে আনতেই, পাল্টা চাল দিয়েছে বিজেপি। একেবারে কেন্দ্রীয় ভাবেই “লাল কেল্লায়”।তাও আবার স্বাধীনতা দিবসে। তবে ব্যার্থ হয়েছে প্রদেশ তৃণমূল কংগ্রেস। অন্যান্য বার প্রদেশ তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় পালন করা হয় শচীন্দ্র লাল সিংয়ের জন্ম দিন। কিন্তু এবার তৃণমূল কংগ্রেস “জননেতা” তথা স্বাধীনতা সংগ্রামী শচীন্দ্র লাল সিংয়ের জন্ম দিন পালন করে নি।তবে শচীন্দ্র লাল সিংয়ের ছেলে আশীষ লাল সিং এখনো প্রদেশ তৃণমূল কংগ্রেসের কোর কমিটির সদস্য।
রাজনৈতিক বিশারদদের কথায়, কংগ্রেস,বিজেপি যখন শচীন্দ্র লাল সিংকে রাজনীতির “বর্ম” হিসাবে ব্যবহার করার কাজ শুরু করেছে, তাহলে কি রাজ্য রাজনীতিতে নতুন কোনো আভাস আছে? ত্রিপুরায় তৃণমূলের কংগ্রেসের অবস্থা ভালো নয়। দীর্ঘ দিন ধরেই দলের সঙ্গে যোগাযোগ ছিন্ন শচীন সিংয়ের ছেলে তথা তৃণমূল নেতা আশীষ লাল সিংয়ের।এই অবস্থায় আশীষ লাল সিং কি সুবল ভৌমিকের পথে হেঁটে দল ত্যাগ করার কথা ভাবছেন? খবর অনুযায়ী, আশীষ লাল সিংয়ের সঙ্গে তিপ্রামথা, কংগ্রেস এবং বিজেপি প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকেই নাকি যোগাযোগ করা হচ্ছে। যদি আশীষও আগামী দিনে তৃণমূল কংগ্রেসকে আলবিদা জানিয়ে দেন তাহলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *