ডেস্ক রিপোর্টার,৯সেপ্টেম্বর।।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী থেকে নবাগত তথ্যমন্ত্রী সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতার কথা বলেন। কিন্তু গণতন্ত্রের পূজারীরা আজ সংবাদ মাধ্যমের টুঁটি চেপে ধরে হত্যা করলো গণতন্ত্রকে। এক নজির বিহীন ঘটনার সাক্ষী থাকলো ত্রিপুরা। এর আগে রাজ্যের সংবাদ মাধ্যমের উপর এত বড় সুনামি আসেনি কখনো।৮৮-র অভিশপ্ত জোট জামানাতেও রাজ্যের সংবাদ মাধ্যমে এইভাবে স্টিমরোল চালানো হয়নি। শাসক গোষ্ঠী বরাবর সংবাদ মাধ্যমের উপর চাপ সৃষ্টি করে থাকে।এটা চলে এসেছে কালে কালে।কিন্তু বুধবার বিকালে মিছিলের নামে শাসক দল বিজেপি সংবাদ মাধ্যমকে নিয়ে যে বেলেল্লাপনা দেখিয়েছে এটা তাদের রাজনৈতিক দেওলিয়াপনা ছাড়া কিছুই নয়।
এদিন সকাল থেকে তপ্ত হয়ে ওঠে রাজ্যের মন্দির নগরী। সংঘর্ষ হয় সিপিআইএম; বিজেপি’র। সরোবর নগরীর হিংসা আছড়ে পড়ে বিশালগড়ে।তারপর বিস্তার লাভ করে রাজধানীর বুকে। তাতে অবশ্যই দোষের কিছু নেই। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে সংঘর্ষ হবে। হবে আক্রমণ, পাল্টা আক্রমণ।কিন্তু শেষ পর্যন্ত রোষ আছড়ে পড়ে অসহায় সংবাদ মাধ্যমের উপর। তাও আবার সরাসরি সংবাদ মাধ্যমের গর্ভগৃহে। এই ঘটনা অত্যন্ত লজ্জার।
উদয়পুরের ঘটনার প্রতিবাদে শাসক দল বিজেপি বুধবার বিকালে জঙ্গি মিছিল বের করে রাজধানীতে।মিছিল প্যারাডাইস চৌমূহনী থেকে মেলারমাঠে পৌঁছতেই সব তালগুল পাকিয়ে যায়।সিপিআইএম’র মেলারমাঠস্থিত সদর কার্যালয়,ডিসি অফিসে আক্রমণ করে মিছিলে থাকা বিজেপির লোকজন।অভিযোগ বামেদের।তারা একের পর এক গাড়ি পুড়িয়ে দেয়। ততক্ষণ পর্যন্ত সব ছিলো ঠিকঠাক।কিন্তু আচমকা মিছিলে থাকা বিজেপির একাংশ লোকজন ঢুকে পড়ে মেলারমাঠস্থিত রাজ্যের প্রথম সারির প্রভাতি দৈনিক “প্রতিবাদী কলম” পত্রিকার দপ্তরে। আর তারপরও প্রকাশ্যে গণতন্ত্রকে ধুলোয় মিশিয়ে দিয়ে শুরু হয় নিধন
যজ্ঞ।
গণতন্ত্রের পূজারীরা “প্রতিবাদী কলম” পত্রিকার দপ্তরে প্রবেশ করে নির্বিচারে শুরু করে ভাঙচুর।তাও আবার পুলিশের সামনে।বিজেপির নেতা-কর্মী-সমর্থকদের সামনে পুলিশ ছিলো কাঠ পুতুল। অফিসের কম্পিউটার,সিসি ক্যামেরা সহ প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র গুঁড়িয়ে দেয় মিছিলে আসা বিজেপির উগ্র সমর্থকরা।তারা তাতেই ক্ষান্ত হননি। তখন অফিসের থাকা পত্রিকার সম্পাদক অনল রায় চৌধুরী সহ তিন সাংবাদিককে মারধর করা হয়। সাংবাদিক প্রসেনজিৎ সাহার মাথায় আঘাত করা হয়।তার মাথায় তিনটি সেলাই লাগে। তাতেও যেন বিজেপি’র লোকজনের খাই মেটে নি। রাস্তায় দার করানো পত্রিকার সম্পাদকের গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। পুলিশের সামনেই চলে একের পর এক ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ।তখন শাসকের ভয়ে আঙ্গুল চুষছিল খাকিউর্দি ওয়ালারা।
বিজেপির উগ্র কর্মী সমর্থকদের আস্ফালনে পত্রিকার দপ্তরে থাকা সাংবাদিক ও সংবাদ কর্মীরা প্রানের ভয়ে পালাতে শুরু করে।প্রায় ঘন্টা খানেক ধরে চলে এই তাণ্ডব লীলা।একেবারে গোটা পত্রিকা দপ্তরকে শ্মশান করে দিয়ে শাসক দলের কর্মী-সমর্থকরা বেরিয়ে যায়।গণতন্ত্রকে কিভাবে নিমিষেই খুন করা যায় বিজেপি এদিন তা দেখিয়ে দিলো । ঘটনার পর পর প্রতিবাদী কলম পত্রিকার পক্ষ থেকে সম্পাদক অনল রায় চৌধুরী পশ্চিম থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।অভিযোগ পত্রে তিনি লিখেন, বিজেপি নেতা টিঙ্কু রায়,পাপিয়া দত্ত ও রাজীব ভট্টাচার্য’র নেতৃত্বেই তাঁর অফিসে হামলা গুরু হয়েছিলো।অফিসের কম্পিউটার, সিসি ক্যামেরা সহ অন্যান্য আসবাবপত্র ভাঙচুর করা হয়।এবং সব শেষে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয় গাড়ি।
“প্রতিবাদী কলম” পত্রিকা অফিসে হামলার ঘটনা কেন্দ্র করে ঝড় বয়ে যায় রাজ্যের সর্ব স্তরে।মানুষ ধিক্কার জানায়।বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয় তীব্র নিন্দা।আগরতলা প্রেস ক্লাবের সম্পাদক প্রণব সরকার, সভাপতি সুবল দেব সহ সংবাদ জগতের প্রত্যেকেই এই ঘটনা মেনে নিতে পারেনি। সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন এই ঘটনার প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছে। বিজেপি শাসিত ত্রিপুরায় সংবাদ মাধ্যম আক্রান্ত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়েছে গোটা দেশে।সিপিআইএম, তৃণমূল সহ কংগ্রেস নেতৃত্ব এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছে আগরতলা প্রেস ক্লাবের পক্ষ থেকে দোষীদের শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত শাস্তির দাবিও জানানো হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *