ডেস্ক রিপোর্টার,আগরতলা।।
আগামী ২৩জুন অনুষ্ঠিত হবে রাজ্যের চার কেন্দ্রের উপনির্বাচন। উপ নির্বাচনে কোনো দল কতটা আসন পাবে।বা কি হবে ভোটের সমীকরণ? তা নিয়ে সর্বত্র চলছে আলোচনা।
আসন্ন উপ ভোটে ‘সুরমা” কেন্দ্রটি যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ এবারই প্রথম বিধানসভা ভোটে লড়াই করবে তিপ্রামথা। সবাইকে চমকে দিয়ে তিপ্রামথা সুরমা কেন্দ্রে প্রার্থী করেছে হিন্দুস্থানী যুবক বাবুলাল সাতনামিকে। আর এখানে শেষ মুহূর্তে মাস্টার স্ট্রোক দিলেন মথার সুপ্রিমো প্রদ্যুত কিশোর।
রাজনীতিকরা পরিসংখ্যান অনুযায়ী ব্যাখ্যা করে বলেছেন, এই কেন্দ্রে মোট ভোটার ৪৬৪২১ জন। তার মধ্যে ৩৭ শতাংশ এসটি, ১০শতাংশ ভোটার হিন্দুস্তানী এবং ৪শতাংশ ভোটার সংখ্যালঘু। বাদবাকি ভোটার অনুপজাতি অংশের। অর্থাৎ এসটি, হিন্দুস্তানী ও সংখ্যালঘু ভোট মিলিয়ে রয়েছে মোট ৫১ শতাংশ।বাদবাকি ভোট ৪৯ শতাংশ।
উপভোটের প্রাক লগ্নে বড় ধাক্কা খেয়েছিলো বিজেপি। সুরমা কেন্দ্রের বিজেপি’র জনজাতি নেতা তথা দুর্গা চৌমুহনী ব্লকের প্রাক্তন চেয়ারম্যান কুমার হালাম পদ্ম শিবিরকে আলবিদা জানিয়ে দিয়ে যোগ দিয়েছিলেন তিপ্রামথাতে। কুমার হালামের নেতৃত্বে জনজাতি ভোটের বড় অংশ যে চলে যাবে তিপ্রামথাতে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। স্বাভাবিক ভাবেই ৫১ শতাংশ ভোটের খেলার চক্করে আটকে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে শাসক দল বিজেপি ও বিরোধী সিপিআইএমের। বাবুলাল সাতনামি প্রার্থী হওয়াতে হিন্দুস্থানী ভোটের সিংহ-ভাগ অংশ চলে যাবে তিপ্রামথাতে। বাবুলাল ছিলেন এক সময়ের সুরমা কেন্দ্রের দাপুটে সিপিআইএম নেতা। বাবুলাল এক্ষেত্রে বাম ভোটেও একটা থাবা বসাবে বলেই মনে করা হচ্ছে।সংখ্যালঘু মুসলিমরা বারবার বিজেপিকে ভোট দান থেকে বিরত থাকে। সুতরাং সুরমার ৪ শতাংশ মুসলিম ভোটও বিজেপি’র বিপক্ষেই যাবে। হিসাব অনুযায়ী মুসলিম ভোটের সংখ্যা প্রায় ২হাজার। উপভোটে বহুমুখী লড়াইয়ে এই ২হাজার ভোট ধন্বন্তরীর মতো কাজ করবে বলেই মনে করছেন ভয় বিশেষজ্ঞরা।
বিজেপি-সিপিআইএম, তৃণমূল বাদবাকি ৪৯ শতাংশ ভোট নিয়ে করবে কাড়াকাড়ি।যদিও বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, জনজাতি ও হিন্দুস্থানী ভোটে দখল বসাতে পারবে বিজেপি। পদ্ম শিবির জনজাতি ভোটে দখল নিলেও খুব বেশি সুবিধা হবে না।কারণ সুরমা কেন্দ্রে গোষ্ঠি কোন্দলে জড়িত বিজেপি। তাও জলের মতো স্পস্ট হয়ে গেছে। দলীয় প্রার্থীর মনোনয়ন পত্র দাখিলের সময় সুরমার প্রথম সারির পাঁচ নেতা অনুপস্থিত ছিলেন। ৪৯ শতাংশ ভোটে সিপিআইএমেরও একটা ভীত রয়েছে। জনজাতি-হিন্দুস্থানী ও মুসলিম ভোট সর্ব ক্ষেত্রেই দখল ছিলো বামেদের।তবে এখন অবশ্যই লাল ফ্রন্টের আগের দাপট নেই। কিন্তু ভোট বলে কথা!
পরিসংখ্যান বলছে ১৯৭২ সালে সুরমা বিধানসভা কেন্দ্রের জন্ম। ৭২-র বিধানসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রে জয়ী হয়েছিলেন কংগ্রেস প্রার্থী ক্ষিতিশ দাস। এরপর টানা ৮টি বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী হয়েছে বামেরা। ২০১৮-তে বিজেপি’র দখলে গিয়েছিলো। স্বাভাবিক ভাবেই এই কেন্দ্রে বামেদের একটা আধিপত্য রয়েছে। তারাও ছেড়ে কথা বলবে না। স্থানীয় ভোটাররা ১৮-র নির্বাচনে বিজেপিকে জয়ী করেও তারা বিধায়ককে তেমন ভাবে পাননি।এটা অবশ্যই বিজেপি’র বিপক্ষেই যাবে। এক্ষেত্রে বামেদের দিকে একটা অংশের ভোট ঝুঁকে যেতে পারে।তাহলে মথার সঙ্গে লড়াইয়ের অলিন্দে চলে আসবে বামেরাই। এক্ষেত্রে তিপ্রামথা-সিপিআইএম ও বিজেপি’র মধ্যেই হবে লড়াই। ভোট পরিস্থিতি বিচার বিবেচনা করে মথার দিকেই সুরমা কেন্দ্রের বাজি ধরে রেখেছে স্থানীয় ভোটারদের একটা বড় অংশ।
