পুলিশের সামনেই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উত্তেজিত জনতা কদমতলা বাজারে ধংস লীলা চালিয়ে ছিলো । তারা একের পর এক দোকানে করেছিলো ভাঙচুর।
কদমতলায় লণ্ডভণ্ড হিন্দুদের দোকানপাট(ফাইল – ছবি)
প্রশ্ন হলো তখন কেন পুলিশ উগ্র জনতাকে শক্ত হাতে বাধা দেয় নি? যদি প্রথম দিকে তারা বাধা প্রাপ্ত হতো,তাহলে পরিস্থিতি এতো দূর যেতো না। এই ঘটনার জন্য প্রত্যক্ষদর্শীরা উত্তর জেলার পুলিশের ব্যর্থতাকে দায়ী করছেন।
ডেস্ক রিপোর্টার, ১৫ অক্টোবর ।। সাম্প্রতিক কালে রাজ্যে পর পর তিনটি সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। গণ্ডাছড়া থেকে রানিরবাজার।এবং কদমতলা। ধলাই থেকে পশ্চিম জেলা ও উত্তরের ঘটনায় বারবার ব্যর্থ পুলিশ। কারণ, দুষ্কৃতিরা প্রতিটি ঘটনা সংঘটিত করেছে পুলিশের উপস্থিতিতেই। পুলিশ ছিলো ঠুটো জগন্নাথ। তবে কদমতলার ঘটনায় সিআরপিএফের ছোড়া গুলিতে মৃত্যু হয়েছে হামলাকারীদের একজনের। কদমতলা কাণ্ডে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উগ্র জনতা যখন সিআরপিএফ ও পুলিশকে লক্ষ্য করে আক্রমণ শানিয়েছিল,তখন কয়েকজন পুলিশ কর্মী সহ সিআরপিএফ জওয়ান রক্তাক্ত হয়েছিলেন।এরপরই সিআরপিএফ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে গুলি চালিয়েছিলো। সুলতান আহমেদ নামে এক যুবকের পায়ে এই গুলি লাগে। অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণে তার মৃত্যু হয়েছে।
এই ঘটনার আগে পুলিশের সামনেই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উত্তেজিত জনতা কদমতলা বাজারে ধংস লীলা চালিয়েছিলো । তারা একের পর এক দোকান ভাঙচুর করেছিলো। হিন্দু বাড়িঘরে প্রবেশ করে মারধর করেছিলো।আগুন লাগিয়ে ছিলো দোকানপাটে।.
প্রশ্ন হলো তখন কেন পুলিশ উগ্র জনতাকে শক্ত হাতে বাধা দেয় নি? যদি প্রথম দিকে তারা বাধা প্রাপ্ত হতো,তাহলে পরিস্থিতি এতো দূর যেতো না। এই ঘটনার জন্য প্রত্যক্ষদর্শীরা উত্তর জেলার পুলিশের ব্যর্থতাকে দায়ী করছেন।
।।বিজ্ঞাপন।।
কেন,না গত ৬ অক্টোবর দিনভর তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছিল কদমতলাতে। এসপি ভানুপদ তখন কেন কদমতলাতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করেন নি জেলার এসপি ভানু পদ চক্রবর্তী?
পুলিশের এই ব্যর্থতার কারণেই ঘটনার সন্ধ্যা রাতে সংখ্যালঘুরা সম্মিলিতভাবে হামলা করে কদমতলা বাজার ও আশপাশ অঞ্চলের হিন্দুদের বাড়িঘরে। প্রায় এক ঘন্টা ধরে অপরেশন চালায় উগ্র জনতা।অথচ পুলিশ ছিলো দর্শকের ভূমিকায়। এক সময় উগ্র জনতা পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীকে পাল্টা আক্রমণ করে, তখনই প্রথমে টিয়ার গ্যাস, পরে গুলি ছোড়া হয়। কিন্তু অবাক করার মতো বিষয় ঘটনার পর উত্তর জেলার এসপি ভানু পদ চক্রবর্তী নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে সামাজিক মাধ্যমকে দোষারোপ করতে থাকেন। ছিঃ ছিঃ।
দুষ্কৃতীদের আগুনে পুড়েছে হিন্দুর দোকান(ফাইল ছবি)
এসপি ভানুপদ চক্রবর্তী বলেছেন, ” কিছু মানুষ না বুজেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে দিয়েছে। তার কারণেই পরিস্থিতি বিগড়ে গিয়েছে।”সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জুজু’র কারণে উৎসবের মুখে গোটা উত্তর জেলাতে প্রশাসন বন্ধ করে দিয়েছিলো ইন্টারনেট পরিসেবা। কদমতলাতে পাল্টা আক্রমণে ধংস হয়েছে স্থানীয় একটি মসজিদ।এবং সংখ্যালঘুদের দোকানপাটও। তখনও পুলিশ ছিলো নিশ্চুপ।
।।উত্তর জেলার এসপি ভানুপদ চক্রবর্তী।।
কদমতলাতে পাল্টা আক্রমণে ধংস হয়েছে স্থানীয় একটি মসজিদ।এবং সংখ্যালঘুদের দোকানপাটও।
।।কদমতলার মসজিদে ধ্বংসাবশেষ।।
গত ১২- জুলাই রাতে গণ্ডাছড়ার ঘটনার ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে একই দৃশ্য। পুলিশের সামনেই সনাতনী বাঙালিদের বাড়ি ঘরে হামলা চালিয়ে ছিলো দুষ্কৃতীরা। একের পর এক বাড়ি ঘরে দিয়েছিল আগুন। কিন্তু উপস্থিত পুলিশ ছিলো নিরব দর্শক। দুয়েকটি টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করেছিলো। এই টুকুই। গণ্ডাছড়ার ঘটনায় পুলিশ একটি বুলেটও নিক্ষেপ করে নি।অথচ এই রাতে সাম্প্রদায়িক দুষ্কৃতিদের সংহারে নিঃস্ব হয়ে গিয়েছিল সনাতন বাঙালি অংশের মানুষ। আজও তারা আছেন শরণার্থী ক্যাম্পে। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন ওঠছে গণ্ডাছড়ার ঘটনার সময়ও কেন নিষ্ক্রিয় ছিলো পুলিশ প্রশাসন। একই সঙ্গে সাধারণ প্রশাসনও। কদমতলা ঘটনার ক্ষেত্রেও দায় এড়াতে পারবেনা সাধারণ প্রশাসন। গণ্ডাছড়াতেও প্রায় তিন ঘন্টা ধরে সংহার চালিয়ে ছিলো সাম্প্রদায়িক দুষ্কৃতীরা। পুলিশ তাদের টিকিতে ধরার চেষ্টাও করে নি।আজকের দিনেও তারা আছে বহাল তবিয়তে।
।। গণ্ডাছড়াতে নিঃস্ব বাঙালি মা।।
সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে হামলা করেছিল দুষ্কৃতীরা। ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলো পুলিশ।
প্রায় একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়েছিলো পশ্চিম জেলার রানির বাজারের কইতুর পাড়াতে। এখানেও কালী মূর্তি ভাঙ্গার ঘটনা কেন্দ্র করে সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে হামলা করেছিল দুষ্কৃতীরা। ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলো পুলিশ।কিন্তু দুষ্কৃতীদের পুলিশ আটকাতে ব্যর্থ। তবে রানির বাজারের ঘটনায় পুলিশ চার অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছিলো। গণ্ডাছড়ার ঘটনায় অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের আনুষ্ঠানিক ভাবে কোন খবর নেই আজ পর্যন্ত।
।।রানিরবাজারে জ্বলছে সংখ্যালঘু বাড়ি ঘর।।
পরিস্থিতি বিচার বিবেচনা করে গ্রেফতারের বিষয়টি গোপন রেখেছে আরক্ষা প্রশাসন।
মানুষের বক্তব্য,কদমতলার ঘটনার নেপথ্যে ছিল তাদের জুলুম। পুলিশের উচিত যারা চাঁদা জুলুমবাজির সঙ্গে জড়িত তাদেরকে গ্রেফতার করা। এবং একই সঙ্গে কদমতলা বাজারে হামলা ও অগ্নি সংযোগকারীদেরও জালে তোলা। তবে এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। কোন পথে হাঁটবে পুলিশ? এটাই লাখ টাকার প্রশ্ন।