ডেস্ক রিপোর্টার,১৬জানুয়ারি।।
       রাজ্য বিধানসভা নির্বাচন দৌঁড় গোড়ায়। আগামী মাসেই অনুষ্ঠিত হবে ভোটের মহাযুদ্ধ। সব রাজনৈতিক দলেই প্রার্থী নিয়ে শুরু হয়েছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কারা হবেন সেনানী? কোন কেন্দ্রে কোন প্রার্থীর সম্ভবনা বেশি?গৃহিণীর হেসেল থেকে শুরু করে চায়ের দোকান। অফিস থেকে আদালত সর্বত্রই ২৩- র ভোট পাখিদের নিয়ে চলছে জোড় চর্চা। তার মধ্যে বেশি কৌতুহল শাসক দল বিজেপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে।
        বিজেপির  গঠন তন্ত্র অনুযায়ী ৭০বছরের ঊর্ধ্বে থাকা নেতাদের নির্বাচনে টিকিট  দেওয়া হয় না। ২৩ – র নির্বাচনে যদি প্রদেশ বিজেপি দলীয় গঠন তন্ত্রের এই নিয়মকে মান্যতা দেয়,তাহলে বেশ কয়েকজন হেভিওয়েট নেতৃত্ব বাদ পড়তে পারেন প্রার্থী তালিকা থেকে।
  এই মুহুর্তে বিজেপির কোনো কোনো হেভিওয়েট নেতৃত্ব বয়সের কারণে বাদ পড়তে পারেন প্রার্থী তালিকা থেকে? তা নিয়ে খোদ গুঞ্জন শুরু হয়েছে বিজেপির অন্দর মহলে।
    এই তালিকার শীর্ষে রয়েছেন রামনগরের বিধায়ক    সুরজিত দত্ত,খয়েরপুরের বিধায়ক তথা রাজ্য বিধানসভার অধ্যক্ষ রতন চক্রবর্তী ও মোহনপুরের বিধায়ক তথা রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী রতন লাল নাথ। প্রত্যেকের বয়স ৭০ ঊর্ধ্ব ।

রামনগরের বিধায়ক সুরজিৎ দত্ত।

রাজধানীর রামনগর বিধানসভার কেন্দ্রের বিধায়ক সুরজিৎ দত্ত।তিনি রাজ্য রাজনীতির মোগাম্বু হিসাবে পরিচিত। রাজনৈতিক জীবনের সিংহ ভাগ সময় তিনি কাটিয়েছে কংগ্রেসের প্রতীক হাত চিহ্নকে বুকে নিয়ে। ৮৮ র কংগ্রেস – টি ইউ জি এস  জোট সরকারের মন্ত্রিসভায় ছিলেন পূর্ত মন্ত্রী।এর আগে অবশ্যই তিনি জড়িত ছিলেন নকশাল রাজনীতির সঙ্গেও। অল্প সময় তিনি ছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আচলেও।এখন তিনি বিজেপির বিধায়ক।এক সময় রামনগর বিধানসভা কেন্দ্রে তার জনপ্রিয়তা ছিল প্রশ্নাতীত।কিন্তু এখন বয়সের ভারে তিনি নুজ্য।পাশাপাশি শারীরিক ভাবে অসুস্থ। অসুস্থ থাকার কারণে বিজেপি – আইপিএফটি জোট সরকারের জামানায় নিয়মিত বিধান সভা অধিবেশনেও যোগ দিতে পারেন নি। এই মুহূর্তে নানান করবে জনমনে তার জন প্রিয়তাতেও ধাক্কা লেগেছে। মানুষের কাছে তার আগের মত গ্রহণ যোগ্যতা নেই। সব মিলিয়ে ২৩- র ভোটে বিজেপি থেকে সুরজিৎ দত্তেও টিকিট না পাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল হচ্ছে।তবে নাছুর বাধা বিধায়ক সুরজিৎ দত্ত। যেকোনো মূল্যে তিনি চাইছেন টিকিট। তবে শেষ কথা বলবে বিজেপির দিল্লি নেতৃত্ব।

খয়েরপুরের বিধায়ক রতন চক্রবর্তী।

খয়েরপুর কেন্দ্রের বিজেপি বিধায়ক রতন চক্রবর্তী রাজ্য রাজনীতির একজন সুবক্তা।তিনি রাজনৈতিক জীবনের সিংহ ভাগ সময় কাটিয়েছেন কংগ্রেসের পতাকাকে সঙ্গে নিয়ে। ৮৮ র জোট জামানায় তিনি ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রীও। মাঝে দুইবার করে তিনি চলে গিয়েছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসে। কিন্তু সুবিধা করতে পারেন নি।২০১৮ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে সুরজিৎ দত্তের মতোই তিনিও যোগ দিয়েছিলেন বিজেপিতে।প্রার্থী হয়েছিলেন খয়েরপুর কেন্দ্র থেকে।নরেন্দ্র মোদীর ফ্লো ও তীব্র বাম বিদ্বেষের কারণে ১৮- র ভোটে খয়েরপুর কেন্দ্র থেকে তিনি জয়ী হন।স্থান পান নি মন্ত্রিসভার।তবে বিজেপি লিড সরকারের আড়াই বছর হওয়ার পর তাঁকে রাজ্য বিধানসভার অধ্যক্ষ হিসেবে বসানো হয়। তিনি পূর্বের অধ্যক্ষ রেবতী মোহন দাসের স্থলাভিষিক্ত হন। খয়েরপুর বিধানসভা কেন্দ্রে এখন বিজেপি বেশ কিছু উপ দলে বিভক্ত।তারা চাইছেন স্থানীয় প্রার্থী।তাছাড়া বিধায়কের সঙ্গে বড় অংশের স্থানীয় নেতৃত্বের মিল নেই। ধাক্কা লেগেছে জন প্রিযতাতে। তাছাড়া বোধজংনগরের শিল্প তালুকের নিগোসিয়েশন সংক্রান্ত অর্থনৈতিক লেনদেন ও জমি সংক্রান্ত বিষয়েও  এই প্রবীণ বিধায়কের নামের অস্তিত্ব খুঁজে পাচ্ছে সাধারণ মানুষ।স্বাভাবিক ভাবে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে দিল্লির নেতৃত্বের কাছে খুব একটা সুবিধা জনক জায়গাতে নেই তিনি। তাছাড়া খয়েরপুরে তার জনভিত্তি একেবারেই কম।

মোহনপুরের বিধায়ক রতনলাল নাথ।


রতন লাল নাথ রাজ্য রাজনীতির চানক্য হিসাবে পরিচিত। তিনিও সুরজিৎ দত্ত ও রতন চক্রবর্তীর মতোই কংগ্রেস রাজনীতি থেকে এসেছেন বিজেপিতে। তবে ৮৮ – র জোট মন্ত্রিসভায় সুরজিৎ দত্ত ও রতন চক্রবর্তী মন্ত্রী ছিলেন। রতন নাথ সেই সুযোগ পান নি।১৯৯৩ – র বিধানসভা নির্বাচনে মোহন পুর থেকে জয়ী হয়ে তিনি এসেছিলেন রাজনীতির লাইম লাইটে। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি,বিরোধী দলনেতার দায়িত্ব সামলেছেন তিনি।। সুরজিৎ দত্ত,রতন চক্রবর্তীদের মতো ১৮ র বিধানসভা নির্বাচনে তিনি গেরুয়া শিবিরে গা ভাসিয়েছিলেন। এবং নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন।স্থান পান রাজ্য মন্ত্রিসভায়। কিন্তু এবার রাজনীতির চানক্যেরে টিকিট পাওয়ার সম্ভাবনা কমতে শুরু করেছে।একদিকে তার বয়স বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্য দিকে আঘাত লেগেছে জন প্রিয়তাতে। তাছাড়া তার বিধানসভা কেন্দ্রে জনজাতি ভোট বড় ফ্যাক্টর হয়ে উঠেছে। অনুপজাতি ভোটারের মধ্যেই মানুষ নানান কারণে  তাকে আর পছন্দ করছে না। শেষ এডিসি নির্বাচনে রতন লাল নাথের নির্বাচনী ক্ষেত্রে থাকা দুইটি আসনেই গো হারা হেরেছে বিজেপি।স্বাভাবিক ভাবেই তার জনজাতি ভোটারদের মধ্যে তার গ্রহন যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে জনমনে।এবং দিল্লির নেতৃত্বের গুড বুকেও নাকি তিনি নেই বলে গুঞ্জন বিজেপির অন্দরে।
     তাহলে কি বয়সের ভরে চামড়া কুঁচকে যাওয়া দুই রতন ও সুরজিৎ বসে থাকবেন।না।তাদের জিহ্বায় ক্ষমতার স্বাদ লেগেছে।তারা এখনও সেই অমতৃতের স্বাদ ভুলতে পারছেন না। তারা এখন স্বপ্ন দেখছেন ২৩ র নির্বাচনে ফের ললাটে লাগবে টিকিট। এবং ভোগ করবেন ক্ষমতার আস্বাদন।তাই নাছুর বাধা তারা। টিকিট তাদের লাগবেই। জোট সরকারের আমলের ৫৮মাসে তারা সেই অর্থে জনসংযোগ করার সময় পান নি।কিন্তু এখন মুহূর্তে মুহূর্তে দৌড়াচ্ছেন মানুষের দরজায় দরজায়।তবে গণ দেবতারা তা মনে রেখেছে অক্ষরে অক্ষরে। তাদের এই সংক্রান্ত রিপোর্ট কার্ড সম্পর্কে ওয়াকিবহাল বিজেপির সর্ব ভারতীয় নেতৃত্ব।এবং টিকিটের বিষয়ে চূড়ান্ত কথা বলবেন দিল্লি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *