সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী

আগরতলা, ৩রা এপ্রিল।।
    উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনার মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন ও সবুজ শক্তির উৎস সৃষ্টির উপর প্রাধান্য দিয়েই রাজ্যে সোমবার থেকে শুরু হয়েছে জি-২০ বিজ্ঞান সম্মেলন৷ এই সম্মেলনে জি-২০ ভুক্ত দেশ সহ দেশের বিজ্ঞানী ও বিভিন্ন সংস্থার মোট ১৫০ জন প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেছেন। এদিন হাঁপানিয়াস্থিত আন্তর্জাতিক মেলা প্রাঙ্গণের ইন্ডোর প্রদর্শনী হলে এক সাংবাদিক সম্মেলনে জি-২০ বিজ্ঞান সম্মেলনের বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা একথা জানান। সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী জানান, ৬টি থিম নিয়ে গত বছরের ২ ডিসেম্বর, থেকে দেশে জি-২০ প্রেসিডেন্সি শুরু হয়। যা ৩০ নভেম্বর, ২০২৩ পর্যন্ত চলবে। ত্রিপুরায় আয়োজিত জি-২০ বিজ্ঞান সম্মেলনের থিম হচ্ছে ‘ক্লিন এনার্জি ফর এ গ্রিনার ফিউচার’। পুনর্নবীকরণ শক্তিকে বৈজ্ঞানিকভাবে ব্যবহার করে কিভাবে অগ্রসর হতে হবে সে বিষয়েও জি-২০ বিজ্ঞান সম্মেলনে আলোচনা হবে।

বিজ্ঞাপন

সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ভারত জি-২০ প্রেসিডেন্সি আয়োজনের দায়িত্ব পাওয়ার পর গত ২০২২ সালের আগস্ট মাস থেকে এই সম্মেলন আয়োজনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আমাদের বিভিন্ন নির্দেশ ও পরামর্শ দিয়েছেন। জি-২০ সম্মেলন নিয়ে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন পুরো বিশ্ব এক। অর্থাৎ এক বিশ্ব, এক পরিবার ও এক ভবিষ্যত। আর এটা ভারতেরও সংস্কৃতি যা জি-২০ সম্মেলনের মাধ্যমে দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সমগ্র বিশ্বকে বার্তা দিতে চান। মুখ্যমন্ত্রী জানান, ত্রিপুরায় আয়োজিত জি-২০ বিজ্ঞান সম্মেলনে চিন, অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়া, ইউনাইটেড স্টেটস, ইউনাইটেড কিংডম, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, দক্ষিণ কোরিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মরক্কো, তানজিনিয়া এবং ইথিওপিয়া দেশের প্রতিনিধি সহ দেশের বিজ্ঞানী ও দেশের বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিগণ অংশগ্রহণ করেছেন। ভ্রমণের অঙ্গ হিসেবে সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী প্রতিনিধিগণ এলবার্ট এক্কা পার্ক, কুমারীটিলা মিউজিক্যাল ফাউন্টেন, যোগার উদ্দেশ্যে অক্সিজেন পার্ক, পূর্বাশা, সিপাহীজলা অভয়ারণ্য এবং নীরমহল পরিদর্শন করবেন। এছাড়াও ৩ এপ্রিল সন্ধ্যায় উজ্জয়ন্ত প্রাসাদে আয়োজিত লাইট এন্ড সাউন্ড শো এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেও প্রতিনিধিগণ উপস্থিত থাকবেন।


সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী জানান, রাজ্য সরকার বাঁশভিত্তিক শিল্পের উন্নয়নে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী বিনিয়োগকারীরাও রাজ্যে বাঁশভিত্তিক সহ খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, পর্যটন, তথ্য-প্রযুক্তি ও ফার্মাসিটিক্যাল ভিত্তিক শিল্প স্থাপনে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এছাড়াও রাজ্য সরকার গ্রীন হাইড্রোজেনের উপর জোর দিয়ে কাজ করছে। বাঁশকে ভিত্তি করে গ্রীন হাইড্রোজেনকে কিভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় তাও এই সম্মেলনে আলোচনা করা হবে।
মুখ্যমন্ত্রী জানান, দেশে গ্রীন হাইড্রোজেন বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে কেন্দ্রীয় সরকার গ্রীন হাইড্রোজেন পলিসি গ্রহণ করেছে। এজন্য ২০২৩-২৪ সালের কেন্দ্রীয় বাজেটে ১০ হাজার কোটি টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী জানান, রাজ্য সরকার পুনর্নবীকরণ শক্তি হিসেবে সোলার এনার্জি ও বায়োমাস প্রকল্পের উপরও গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। দূর্গম এলাকায় যেখানে বিদ্যুৎ পৌঁছানো সম্ভব নয় সেই সব এলাকায় ইতিমধ্যেই ১৮টি মাইক্রো গ্রীড স্টেশন স্থাপন করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এছাড়া আরও ১২৭৪টি মাইক্রো গ্রীড স্টেশন স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ডুম্বুর এলাকায়ও সোলার এনার্জি স্থাপনের কাজ চলছে। তিনি জানান, রাজ্যের ২০০৫টি পরিবারকে বায়োগ্যাস প্রকল্পের আওতায় আনা হয়েছে। আরও ৩ হাজার পরিবারকে বায়োগ্যাস প্রকল্পের আওতায় আনার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন দিক দিয়ে উন্নয়নের ফলে ত্রিপুরা বর্তমানে দেশের পাশাপাশি বিশ্বেও পরিচিতি লাভ করেছে। প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিক সহযোগিতার ফলেই এটা সম্ভব হয়েছে বলে মুখ্যমন্ত্রী সাংবাদিক সম্মেলনে জানান।


সাংবাদিক সম্মেলনে শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রী সান্ত্বনা চাকমা, জনজাতি কল্যাণ মন্ত্রী বিকাশ দেববর্মা, আগরতলা পুরনিগমের মেয়র দীপক মজুমদার, তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের সচিব প্রদীপ কুমার চক্রবর্তী এবং শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের বিশেষ সচিব অভিষেক চন্দ্রা উপস্থিত ছিলেন। এদিন সাংবাদিক সম্মেলনের পূর্বে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা জি-২০ বিজ্ঞান সম্মেলন উপলক্ষে আন্তর্জাতিক ইন্ডোর প্রদর্শনী হলে এক প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন। মুখ্যমন্ত্রী সম্মেলন উপলক্ষে আগত বিনিয়োগকারীদের সাথেও মতবিনিময় করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *