ডেস্ক রিপোর্টার।।১৯অক্টোবর।।
বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গাতে দুর্গা মণ্ডপে হামলার ঘটনায় তপ্ত হাসিনার দেশ।ভারত সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সরব হয়েছে প্রতিবাদে। বাংলাদেশ সরকার এখন পর্যন্ত দুইশোর অধিক লোকজনকে গ্রেফতার করেছে।হিংসা নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে পুলিশকে গুলি চালাতে হয়েছে।খবর অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত পুলিশের গুলিতে ছয় জনের মৃত্যু হয়েছে। আতঙ্কিত হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ।তারা দেশ ছাড়ার চিন্তাভাবনা শুরু করে দিয়েছে। শারদ উৎসবে দুর্গা মণ্ডপে কোরআন রেখে বাংলাদেশে হিংসার বারুদ ছড়িয়ে দেওয়ার পেছনে দায়ী কে? কাদের ব্লু-প্রিন্ট অনুযায়ী দুই ডজন পূজা মণ্ডপ সহ বিভিন্ন হিন্দু দেবদেবীর মন্দিরে তাণ্ডব শুরু করেছিল হামলাকারীরা? এই ঘটনা কি মৌলবাদীদের মস্তিষ্ক প্রসূত না কি বাংলাদেশের শাসক দল আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোনো বিষয়? তা নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।
বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বড় সংগঠন হিন্দু,বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত সাংবাদিক বৈঠক করে বলেন, চট্টগ্রামের ঘটনায় মূল অভিযুক্তদের মধ্যে ধৃত দুইজন আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা।বাংলাদেশের অন্যান্য জায়গাতে সংগঠিত ঘটনার পেছনেও আওয়ামী লীগের নেতারা জড়িত রয়েছে বলে দাবি সংখ্যালঘুদের। এই ঘটনা থেকে প্রমান করে পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে আওয়ামী লীগের একাংশ নেতা-কর্মী সমর্থকরা বাংলাদেশ থেকে হিন্দু বিতরণের কাজ শুরু করেছে।

ভারতীয় গোয়েন্দার দাবি, অষ্টমীর সকালে বাংলাদেশের কুমিল্লা জেলার নুনুয়ারদিঘি পূজামণ্ডপে কোরান শরিফ রাখার পেছনে ছিল গভীর ষড়যন্ত্র। কারণ রাতে দুর্গা মণ্ডপে যারা কোরআন শরিফ রেখেছিলো তারা বাংলাদেশের ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স(এন এস আই)-র সদস্য।রাতে মুখ কাপড় দিয়ে ঢেকে, মাথায় হেলমেট লাগিয়ে,হাতে গ্লাপস লাগিয়ে পূজো মণ্ডপে এসেছিলো দুই যুবক।তার মণ্ডপ স্থলে এসেছিলো বাইক চেপে। মণ্ডপে কোরআন শরিফ রেখে তারা বেরিয়ে যায়।ভারতীয় গোয়েন্দার দাবি, গভীর রাতে দুর্গা মণ্ডপে আসা দুই যুবক বাংলাদেশের এন এস আই’র সদস্য। মণ্ডপ সংলগ্ন স্থানে থাকা সিসি ক্যামেরাতে দুই যুবকের কার্যকলাপ স্পস্ট হয়।
ষড়যন্ত্র যে অনেক গভীরে প্রোথিত ছিলো তারও প্রমান রয়েছে ভারতীয় গোয়েন্দার কাছে। কারণ এদিনই রাতে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশ থেকে দুর্গা মণ্ডপে কোরআন শরিফ রাখার ভিডিও ভাইরাল করে দেওয়া হয় ফেসবুকে।এরপরই গোটা বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ে এই দৃশ্য। মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ রাস্তায় বেরিয়ে যায় প্রতিবাদে।তাদের দাবি, পবিত্র কোরআন শরিফ দুর্গা মণ্ডপে অবমাননা করা হয়েছে। এই ইস্যুকে সামনে রেখে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গাতে পুজো মণ্ডপে হামলা চালায় একাংশ মানুষ।তাদের মধ্যে রয়েছে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাও।
বাংলাদেশ গোয়েন্দার যুক্তি, আওয়ামী লীগের সমস্ত নেতা-কর্মীরা যে শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তকে মান্যতা দেয় তা নয়।তাদের মধ্যেও বিদ্রোহীরা রয়েছে।তারা বরাবর হাসিনার সরকারকে বেকায়দায় ফালানোর চেষ্টা করে।এই ঘটনা নতুন নয়।এর আগেও এই রকম ঘটনা ঘটেছিলো।শেখ হাসিনার জামানাতেই পিলখানায় বিডিআর(বর্তমানের বিজিবি) বিদ্রোহ হয়েছিলো। আওয়ামী লীগের জামানায় এর আগেই বহু হিন্দু নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে।হিন্দুরা কখনো উপযুক্ত বিচার পায় নি।এই রকম দৃষ্টান্ত গোটা বাংলাদেশে চোখ মেললেই দেখা যায়।
বাংলাদেশ গোয়েন্দার দাবি, এই মুহূর্তে নানান কারণে বাংলাদেশের ১১শতাংশ হিন্দু আওয়ামী লীগের উপর আস্থা রাখতে পারছে না। আগামীদিনে হিন্দুদের ভোট ব্যাংক নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব। হিন্দুদের নানান ভয় ভীতি দেখিয়ে তাদের ভোট দলের দিকে ধরে রাখার একটা ভিন্ন কৌশলও হতে পারে পুজোর মণ্ডপে কোরআন শরিফ রাখার ঘটনা।
বাংলাদেশের বিরোধীদের বক্তব্য, গোয়েন্দার কাছে আগাম খবর থাকা সত্তেও কেন কড়া ব্যবস্থা নিলো না হাসিনা সরকার? তাহলে বাংলাদেশে হিন্দু নিধনের পেছনে কি শাসক দল আওয়ামী লীগের কোনো সুপরিকল্পিত পরিকল্পনা রয়েছে? বিরোধীদের দাবি, শেখ হাসিনা সরকার বাংলাদেশের প্রতিটি পূজো মণ্ডপে সরকারি ভাবে অনুদান দিয়ে থাকে।এটা বাংলাদেশে নতুন নয়।এই অনুদান প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিলো প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি হোসেন মহাম্মদ এরশাদের জামানা থেকে। পরবর্তী সময়ে হাসিনা সরকার অনুদান কিছুটা বাড়িয়েছে।তথ্য বলছে , চলতি বছর বাংলাদেশে ৩২ হাজার ১১৮টি মণ্ডপ হয়েছে দুর্গাপূজা। গত বছরের চেয়ে এবার পূজার সংখ্যা বেড়েছে ১ হাজার ৯০৫টি। ঢাকা মহানগরে এ বছর পূজা হচ্ছে ২৩৮টি মণ্ডপে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত বছরের চেয়ে ৪টি বেশি হয়েছে এবছর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *