ডেস্ক রিপোর্টার,৪জুলাই।।
রাজধানীর বোধজং নগর থানার ডিসি পাড়ার থেকে জোড়া লাশ উদ্ধারের ঘটনায় সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ এক যুবককে গ্রেফতার করেছে। তার নাম রহিত সিনহা।বাড়ি শহরের বৌদ্ধমন্দির এলাকায়। তদন্তকারী পুলিশ রহিত সিনহাকে সোমবার আদালতে সোপর্দ করে। আদালত তাকে ছয়দিনের পুলিশ রিমান্ডের নির্দেশ দেয়। আগামী ৯ জুলাই ফের তাকে তোলা হবে আদালতে । সোমবার তদন্তকারী পুলিশ কাশিপুর এলাকা থেকে একটি আই টোয়েন্টি গাড়ি উদ্ধার করেছে। পুলিশের প্রাথমিক সন্দেহ,এই গাড়িটি খুনের কাজে ব্যবহার করা হয়েছিল। পুলিশের ফরেনসিক টিম এই গাড়ি থেকে তদন্ত স্বার্থে বেশ কিছু নমুনা সংগ্রহ করেছে। নিয়েছে ফিঙ্গারপ্রিন্টও।
বোধজং নগর থানার পুলিশ জানিয়েছে, রবিবার পুষ্পক সাহা ও বাসুদেব দেববর্মার মৃতদেহ উদ্ধারের পরেই তদন্তে নামে পুলিশ। খুন হওয়া দুই যুবকের পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলার পরেই পুলিশের কাছে প্রাথমিকভাবে খুনের মোডাস অপারেন্ডি পরিষ্কার হয়ে যায়। এর সূত্র ধরেই রাতেই পুলিশ নন্দনগরস্থিত নেশা মুক্তি কেন্দ্রে অভিযান চালায়। এই নেশা মুক্তি কেন্দ্রের লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদের পর পুলিশের কাছে খুনির লেজ ধরার রাস্তা উন্মুক্ত হয়ে যায়।
রাতেই অনুসন্ধানকারী পুলিশ সন্দেহভাজনদের বাড়ি ঘরে অভিযান চালায়। এই ঘটনার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত বৌদ্ধ মন্দিরের বাসিন্দা রহিত সিনহা। বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পরই রবিবার গভীর রাতে পুলিশ রহিত সিনার বাড়িতে হানা দেয়। এবং তাকে গ্রেফতার করে।পুলিশ রহিত সিনহাকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে টানা জিজ্ঞাসাবাদ করে । পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে রহিত খুনের ঘটনা কবুল করে। দাবি তদন্তকারী পুলিশের।
তদন্তকারী পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, রহিত সিনহা পুলিশকে জানিয়েছে,তার সঙ্গে পুষ্পক সাহা ও বাসুদেব দেববর্মার দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক।সেই সম্পর্কের সুবাদে পুষ্পক ও বাসুদেব প্রায়শই যাতায়াত করত নন্দননগর নেশা মুক্তি কেন্দ্রে। এই নেশা মুক্তি কেন্দ্রে কাজ করে রহিত সিনহা। স্বাভাবিকভাবেই নন্দননগর নেশা মুক্তি কেন্দ্রে প্রায় রাতে আড্ডা জমাতো তারা। ধৃত রহিত সিনহার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, ঘটনার রাতেও পুষ্পক ও বাসুদেব নন্দনগরস্থিত নেশা মুক্তি কেন্দ্রে গিয়েছিল। এরপর তারা সেইখানে মদের আসরে বসে। এই আসরে নেশা মুক্তি কেন্দ্রের আরও কয়েকজন যুবক উপস্থিত ছিল। একসময় আসরেই পুষ্পক ও বাসুদেবের সঙ্গে রহিত সিনহার বাগ বিতণ্ডা শুরু হয়। পরিস্থিতি একসময় পৌঁছায় চরম পর্যায়ে। শুরু হয় তাদের মধ্যে দস্তদস্তি।
রহিত পুলিশকে জানায়, উত্তেজনার বসে নেশা মুক্তি কেন্দ্রের উপস্থিত অন্যান্যরা একজোটে আক্রমণ করে পুষ্পক ও বাসুদেবকে। তারা ধারালো অস্ত্র ও রড দিয়ে আঘাত করে তাদেরকে।একসময় রক্তাক্ত অবস্থায় পুষ্পক ও বাসুদেব লুটিয়ে পড়ে নেশা মুক্তি কেন্দ্রের ঘরের মেঝেতে।তাদের মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর রহিত সহ অন্যান্যরা মৃতদেহ গুম করার সিদ্ধান্ত নেয়। তাদের প্রাথমিক পরিকল্পনা ছিল জঙ্গলের গাছ গাছালির সঙ্গে কোথায় পুষ্পক ও বাসুদেবের লাশ দাড়ি দিয়ে ঝুলিয়ে দেবে। উদ্দেশ্য পুলিশের সন্দেহ এড়ানো। পুলিশ যেন ভাবতে পারে তারা দুইজনেই ফাঁসিতে আত্মহত্যা করেছে।
এই পরিকল্পনা অনুযায়ী, আততায়ীরা গভীর রাতে পুষ্পক ও বাসুদেবের লাশ দড়ি দিয়ে বেঁধে গাড়িতে করে নন্দন নগর নেশা মুক্তি কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে আসে।তারা গাড়িতে লাশ নিয়ে বিভিন্ন নির্জন জায়গাতে চক্কর কাটে।কিন্তু কোথাও সুবিধা করতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত রহিত ও তার সঙ্গে থাকা আততায়ীরা গাড়ি নিয়ে চলে আসে বোধজংনগর থানার ডিসি পাড়ার বিন্দুমুড়াতে। প্রথমে গাছের সঙ্গে লাশ ঝুলানোর চেষ্টা করেছিলো খুনিরা।কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়। স্থানীয় মানুষের আচ পেয়ে যাওয়ার ভয়ে তারা জঙ্গলে পুষ্পক ও বাসুদেবের লাশ রেখে চলে যায়।
রহিত সিনহা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, তারা খুনের কাজে একটি আই- টোয়েন্টি গাড়ি ব্যবহার করেছিলো।পুষ্পক ও বাসুদেবের লাশ গুম করার পর তারা গাড়িটি নিয়ে রেখে দেয় কাশিপুরে একটি বাড়ীতে।পুলিশের নজর এড়ানোর জন্যই গাড়িটি গোপন জায়গাতে রেখে দিয়েছিলো তারা।
ধৃত রহিত সিনহার বক্তব্য মোতাবেক তদন্তকারী পুলিশ কাশিপুর থেকে খুনের কাজে ব্যবহৃত আই – টুয়েন্টি গাড়ি উদ্ধার করে।তদন্তের স্বার্থে পুলিশের ফরেনসিক টিম এই গাড়ি থেকে নানান নমুনা সংগ্রহ করেছে। ফরেনসিক ল্যাব থেকে রিপোর্ট আসলে পুলিশের কাছে বিষয়টি আরো পরিষ্কার হবে।এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত আরো কয়েকজনকে খুঁজছে পুলিশ।এই মুহূর্তে তারা পলাতক।তবে তাদেরকে গ্রেফতারের জন্য সর্বত্র জাল বিস্তার করেছে অনুসন্ধানকারী পুলিশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *