ডেস্ক রিপোর্টার,২মার্চ।।
গৌতম দাশ থেকে বিজন ধর, রমেন্দ্র চন্দ্র দেবনাথ থেকে নারায়ণ রুপিনী। মাত্র ছয় মাসের ব্যবধানে পতন ঘটেছে রাজ্য কমিউনিস্ট’র চার নক্ষত্রের।এটা অবশ্যই দুঃখ জনক। রাজ্য রাজনীতিতে চার নেতার যথেষ্ট প্রভাব ছিলো তাদের সময়ে।এবং তারা প্রত্যেকেই ছিলো রাজ্য রাজনীতির পরিচিত মুখ।এবং ছিলো বাম রাজনীতির থিঙ্ক-ট্যাঙ্কও বটে।
গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে করোনা আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হয়েছিলেন রাজ্য সিপিআইএমের সম্পাদক গৌতম দাস। গৌতম দাশের মৃত্যুর রেশ কাটতে না কাটতেই প্রয়াত হয়েছিলেন রাজ্য বামফ্রন্টের আহ্বায়ক বিজন ধর। দুই জনেই ছিলেন রাজ্য বাম রাজনীতির থিঙ্কট্যাঙ্ক। তারা কখনো নির্বাচনে লড়াই না করলেও দলের অলিন্দে ‘প্রাণ ভোমরা’র মত কাজ করেছেন তারা। দীর্ঘ সময় সিপিআইএম রাজ্য সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন বিজন ধর। উভয়ের জীবনে আছে লড়াইয়ের রাজনীতির উপাখ্যান। নিঃসন্দেহে গৌতম দাশ ও বিজন ধরের মৃত্যুতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে সিপিআইএমের। এই মুহূর্তে ক্ষমতায় নেই দল।. সিপিআইএমকে ফের ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে প্রয়াত দুই নেতা গৌতম দাশ-বিজন ধরের রাজনীতিক ‘মস্তিস্ক’ বাম শিবিরকে অতিরিক্ত অক্সিজেন দিতে পারতো।কিন্তু এই শূন্যতা পূরণ করার বিকল্প নেতা এই মুহূর্তে নেই বামেদের ঝুলিতে। এই দুই তাত্বিক নেতার মৃত্যু যে প্রধান বিরোধী দল সিপিআইএমকে ভাবিয়ে তুলবে এটা বলার অপেক্ষা রাখে না।
গৌতম দাশ-বিজন ধরের মৃত্যুর পর ফের বাম শিবিরে ধাক্কা লাগে। প্রয়াত হন সিপিআইএমের আরেক তাবর নেতা তথা রাজ্য বিধানসভার প্রাক্তন অধ্যক্ষ রমেন্দ্র চন্দ্র দেবনাথ। তিনি ছিলেন যুবরাজনগর বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক। উত্তর জেলার বাম রাজনীতির ‘টাইকুন’ বলা যায় প্রয়াত রমেন্দ্র চন্দ্র দেবনাথকে।ছিলেন স্বজন-ভদ্রলোক।দীর্ঘ সময় রাজনীতির অলিন্দে থাকলেও কোনো ‘দুর্নীতির’ অভিযোগ শুনা যায়নি প্রয়াত রমেন্দ্র চন্দ্র দেবনাথের বিরুদ্ধে। তিনি ছিলেন বাম রাজনীতির অনেক লড়াই-আন্দোলনের সেনানী।১৮-র নির্বাচনে যখন বামেরা বিজেপি’র সুনামীতে ধরাশায়ী,তখন যুবরাজনগরে সাবলীল ছিলেন রমেন্দ্র চন্দ্র দেবনাথ।তিনি বিজেপি’র বিজেপি’র জোয়ার আটকে দিয়ে যুবরাজ নগর বিধানসভা কেন্দ্রে উড়িয়ে ছিলেন বামেদের বিজয় কেতন। ২৩-র ভোট যুদ্ধে যুবরাজ নগরে রমেন্দ্র চন্দ্র দেবনাথের থাকা খুব জরুরি ছিলো।কিন্তু ভাগ্যের পরিহাস, পৃথিবীর নিয়ম অনুযায়ী না ফেরার দেশে চলে গেছেন রমেন্দ্র চন্দ্র দেবনাথ।
সদ্য প্রয়াত হলেন সিপিআইএম নেতা তথা প্রাক্তন বনমন্ত্রী নারায়ণ রুপিনী। তিনি ছিলেন এডিসি’র প্রথম চেয়ারম্যান। নারায়ণ রুপিনী দীর্ঘ সময় ধরে সিপিআইএমের উপজাতি সংগঠন জিএমপি’র মাথায় ছিলেন।পাহাড়ে বামেদের উপজাতি সংগঠনকে শক্তিশালী করতে নারায়ণ রুপিনী একটা ভূমিকা রয়েছে।১৮-র নির্বাচনের প্রাকলগ্নে নারায়ণ রুপিনীকে বার্ধ্যক জনিত কারণে জিএমপি’র দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিলো।এরপর জিএমপি’র দায়িত্বে আসেন জিতেন্দ্র চৌধুরী। নারায়ণ রুপিনীর মতো বর্ষীয়ান সিপিআইএম নেতাদের রাজনৈতিক চিন্তা ভাবনা দলের পক্ষে অমূল্য সম্পদ।তাদের পরামর্শ নানান ভাবে সঙ্কটে থাকা দলকে আরো শক্তিশালী করতে পারে।এই মুহূর্তে সিপিআইএমের উপজাতি সংগঠন চাঙ্গা করা খুব প্রয়োজন। তারজন্য দরকার বর্ষীয়ান নেতাদের যুক্তি-পরামর্শ। কিন্তু নারায়ণ রুপিনীর মতো বর্ষীয়ান উপজাতি নেতার মৃত্যু কিছুটা হলে প্রভাব পড়বে বলে মনে করছে রাজনীতিকরা।