
ডেস্ক রিপোর্টার, ২৩আগস্ট।।
লোকসভা নির্বাচনের আগেই হিন্দুত্বের গ্রাসে রাজ্যের পাহাড়।পাহাড়ের সর্বত্র গড়ে তোলা হবে হিন্দু দেবদেবীর মন্দির।পাহাড়ের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা প্রাচীন মন্দিরগুলিকে করা হবে জাগ্রত।মন্দিরগুলিতে স্থাপন করা হবে বিভিন্ন দেব-দেবীর মূর্তি।রাজ্যের পাহাড়গুলিত ধর্মান্তকরন কমানোর জন্যই এই উদ্যোগ।নেপথ্যে আরএসএস ও বিশ্বহিন্দু পরিষদ।

গোটা উত্তর – পূর্বাঞ্চল সহ রাজ্যের জনজাতি সম্প্রদায়ের একাংশ মানুষের মধ্যে খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করার প্রবণতা বাড়ছে দিন দিন। রাজ্যের পাহাড়ি অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ছোট, বড় বহু গীর্জা। বিভিন্ন হিন্দুবাদী সংগঠনের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে রাজ্যের পাহাড়ী অঞ্চলে মন্দিরের তুলনায় গির্জার সংখ্যা বেশি।প্রতিনিয়ত পাহাড়ে ঘটছে ধর্মান্তরন। হিন্দু জনজাতির ঝুঁকছে খ্রিস্টান ধর্মের দিকে। দীর্ঘ দিন ধরে পাহাড়ে চলতে থাকা এই প্রবণতা লক্ষ্য করেছে বিভিন্ন হিন্দুবাদী সংগঠন। রাজ্যের পাহাড়গুলিতে হিন্দু ধর্মের প্রচার ও প্রসারের জন্য কাজ করছে আরএসএস, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, বজরং দল সহ অন্যান্য হিন্দু সংগঠন। পাহাড়ে ধর্মান্তরন আটকানোর জন্য মুখ্য ভূমিকা পালন করছে শান্তি কালি আশ্রমও। বহু দিন ধরেই চলছে এই প্রক্রিয়া।

বিভিন্ন হিন্দুবাদী সংগঠনের খবর অনুযায়ী, তারা নির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে পাহাড়ে কাজ শুরু করেছে।ধর্মান্তরন আটকানোর পাশাপাশি পাহাড়ের প্রাচীন মন্দির গুলিকে জাগ্রত করা হবে। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রাজ্যের পাহাড়ি অঞ্চলে উৎকর্ষতা বাড়াবে স্পিরিচুয়াল ট্যুরিজম অর্থাৎ আধ্যাত্মিক পর্যটনেরও। উদ্দেশ্য সাধন করতে আরএসএস, বিশ্বহিন্দু পরিষদের নেতারা মাঠে নেমে গিয়েছেন। এই চিত্র প্রতিফলিত হলো তেলিয়ামুড়ার দক্ষিণ হদ্রাই এ.ডি.সি ভিলেজের মুড়িসিং পাড়াস্থিত বুদ্ধিয়া সন্ন্যাসী আশ্রমে। এই আশ্রমের নতুন নামকরণ করা হয়েছে ত্রিপুরেশ্বর মহাদেব পীঠ।

বুদ্ধিয়া সন্ন্যাসী আশ্রমটি দেড়শো বছরের পুরনো। আশ্রমের রয়েছে অনেক ইতিহাস। মঙ্গলবার বিশ্ব হিন্দু পরিষদের পক্ষ থেকে এই ঐতিহাসিক আশ্রমে স্থাপন করা হয়েছে শিব লিঙ্গ। এছাড়া কলস যাত্রা এবং জলাভিষেক পূজা বিধি অনুষ্ঠিত হয়েছে।এদিন সকাল থেকেই হিন্দু সনাতনী ধর্ম মতে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তথা ধর্মগুরু গৌতম মিশ্র শিবলিঙ্গের পূজার্চনা এবং অভিষেক করেন। আর তাতেই এলাকার ধর্মীয় পরিবেশের পরিমণ্ডলে নতুন আটি বাঁধতে শুরু করে দিয়েছে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্ট সংগঠনের নেতারা।

এদিন বুদ্ধিয়া সন্ন্যাসী আশ্রমে শিবলিঙ্গ অভিষেক অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের অর্থ মন্ত্রী প্রনজিৎ সিংহ রায়। পর্যটন মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী ও উপজাতি কল্যাণ দপ্তরের মন্ত্রী বিকাশ দেববর্মা। তাদের সঙ্গে ছিলেন স্থানীয় বিধায়িকা তথা
রাজ্য বিধানসভার মুখ্য সচেতক কল্যাণী রায়। মন্ত্রীরা প্রত্যেকেই শিবের মাথায় জল ঢালেন। অংশ নিয়েছেন কলসি যাত্রা ও জলাভিষেক পূজা বিধিতে।রাজ্যের অর্থ মন্ত্রী প্রনজিৎ সিংহ রায় বলেন, ” শিবলিঙ্গ স্থাপন করা হিন্দু ধর্মের একটা সংস্কৃতি।শিবলিঙ্গ স্থাপনের ফলে এলাকায় ঈশ্বরের উপর ভাবনা আরোও গভীর হবে। মন্দিরে পূজো দিয়ে মন্ত্রী সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের মানুষের মঙ্গল কামনা করেছেন।”

রাজ্যের পর্যটন মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী বলেন, আগামী দিনে এই মন্দির সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে হিন্দু ধর্মের কৃষ্টি-সংস্কৃতি রক্ষা করবে।এবং বিশিষ্ট ধর্মীয় স্থান হিসাবে পরিণত হবে।
মন্ত্রীর কথায়, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ধর্মীয় রীতি নীতি মেনে গোটা উত্তর পূর্বাঞ্চলেই শিব মন্দির স্থাপন করছে। এখন বুদ্ধিয়া সন্ন্যাসী আশ্রমেও শিবলিঙ্গ স্থাপন করা হয়েছে। এর ফলে এই সমস্ত অঞ্চলে প্রসার ঘটবে ধর্ম ও সংস্কৃতির।

রাজ্যের মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী স্পষ্ট ভাবেই বুঝিয়ে দিয়েছেন বুদ্ধিয়া সন্ন্যাসী আশ্রমে শিবলিঙ্গ স্থাপনের উদ্দেশ্য এবং মূল লক্ষ্য। রাজনীতিকরা বলছেন, আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যে পাহাড়ি অঞ্চলে হিন্দু ধর্মের প্রচার ও প্রসার ঘটানোর উদ্যোগ নিয়েছে আরএসএস সহ বিভিন্ন হিন্দু সংগঠনগুলি।কারণ রাজ্যে পাহাড়ি অঞ্চলে দিন দিন বিপন্ন হচ্ছে হিন্দু ধর্ম।

জনজাতি অংশের মানুষ নানান কারণে খ্রিস্টান ধর্মে দীক্ষিত হচ্ছে। খ্রিস্টান মিশনারি গুলিও প্রবল ভাবে সক্রিয় পাহাড়ে। তেলিয়ামুড়া মহকুমার পার্বত্য অঞ্চল গুলিতে হিন্দুধর্মকে সুরক্ষিত রাখতে বিভিন্ন হিন্দুবাদী সংগঠনের সঙ্গে নিরলস ভাবে কাজ করছেন স্থানীয় বিধায়িকা কল্যাণী রায়ও।