ডেস্ক রিপোর্টার,আগরতলা।।
     রাজনীতি শব্দটি বড়ই রূঢ়। দাপুটে নেতারা যতক্ষণই রাজনীতির ময়দানে বিচরণ করতে পারবেন, ততক্ষণই দলের কর্মী-সমর্থক থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ তাকে নিয়ে করবে লম্পট জম্প। নেতার ক্ষমতা খোয়া গেলে বা তার প্রয়াণের পর তাকে কেউ মনে রাখেন না।তখন তিনি হয়ে যান অপাংত্তেয়। তিনি নেতা বা জননেতা যাই হন না কেন, মানুষ তাকে ছুড়ে ফেলে দেয় আস্ত কুড়ের ঘরে। এই ধ্রুব সত্যটা মেনেও কালে কালেই রাজনীতিতে ঘটছে নেতাদের আগমন তারা শাসন করছে রাষ্ট্র ও রাজ্য।
সাধারণ মানুষ নেতাদের মনে নাই রাখতে পারে কিন্তু নেতার রক্ত ঘাম ঝরানোর কথা যদি তার দলের নেতৃত্বই ভুলে যান, তাহলে নিশ্চয়ই তারাও ক্ষমার অযোগ্য। এবং বুঝতে হবে শুরু হয়ে গিয়েছে হালের নেতাদের রাজনৈতিক স্খলন। যদি দলের নাম কমিউনিস্ট হয়,তাহলে তো এটা আরো দাগ কাটে।কারণ কমিউনিস্ট নেতারা দাবি করেন, তারা সুশৃঙ্খল দলের সৈনিক।কমিউনিস্টদের নেই। পুর্বসুরীদের ভাব ধারাকে এগিয়ে নিয়ে যান উওরসুরীরা। এটা বোধহয় কমিউনিস্ট নেতাদের কথার কথা। বাস্তবের সঙ্গে তাদের কথার কোনো মিল নেই। এই কারণেই রাজ্য এবং দেশীয় রাজনীতিতে কমিউনিস্টরা আজ অপ্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে।


রাজ্যের মাটিতে যে সকল কমিউনিস্ট নেতারা কমিউনিজমের বীজ বপন করেছিলেন, আজ তাদের অধিকাংশই মেলারমাঠের লাল বাড়ির কর্তাদের  কাছে ব্রাত্য।  মৃত্যুর পরও তারা পাচ্ছেন না ন্যূনতম সম্মান। ত্রিপুরাতে কমিউনিস্ট পার্টিকে মাথা তুলে দাড়ানোর ক্ষেত্রে নৃপেণ চক্রবর্তী, দশরথ দেব, বৈদ্যনাথ মজুমদার,  বিদ্যা দেববর্মাদের সঙ্গে এক সারিতে নাম উচ্চারণ হয় অনিল সরকারের। তারা অনেক রক্ত ঘাম খরচ করে রাজ্যের মাটিতে কমিউনিস্টদের ভিত মজবুত করেছিলেন। কিন্তু আজ তারা প্রত্যেকেই ছবি হয়েও আছেন লালবাড়ির ডাস্টবিনে।


অনিল সরকার তিনি একধারে রাজনীতিবিদ অন্যদিকে কবি, সাহিত্যিক, লেখক।তিনি বাম রাজনীতিকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি রাজ্যের সংস্কৃতির অঙ্গনে জ্বালিয়ে ছিলেন আলো। অনিল সরকার ছিলেন কমিউনিস্ট পার্টির নেতা ও সভ্যদের শিক্ষক। কাকে বলে কমিনিস্ট? কমিউনিস্টদের ভাব ধারা কি হবে? কমিউনিজমের দর্শনই বা কি? এবং
কমিউনিজমের নানান খুঁটিনাটি কমিউনিস্টদের।মধ্যে আকতরে বিতরণ করতেন তিনি। সংসদীয় রাজনীতিতে অনিল সরকার ছিলেন সর্বজন বিদিত নেতা। কমিউনিস্ট রাজনীতিতে তিনি ছিলেন শ্রেণী আন্দোলনের স্রষ্টা। আজ তাকেই মনে রাখতে পারেন নি হালের লালবাড়ির কান্ডারী জিতেন্দ্র চৌধুরী নারায়ণ কররা। অনিলকে ভুলে গিয়েছেন পলিটব্যুরোর সদস্য মানিক সরকারও।


আজ শুক্রবার, ১লা সেপ্টেম্বর, ছিলো রাজ্যের প্রয়াত কবি মন্ত্রী অনিল সরকারের ৮৪ তম জন্মদিন। কিন্তু দূর্ভাগ্যের বিষয় রাজ্যের কমিউনিস্টদের শিক্ষক অনিল সরকারের জন্ম দিনের কথা ভুলেই গেলো মেলারমাঠের দন্ডমন্ডের কর্তারা। দুই বিধানসভা কেন্দ্রের অকাল ভোটের কারণে জিতেন্দ্র,সুধন দাসরা মনেই রাখতে পারেন নি অনিল সরকারের মতো কিংবদন্তি কমিউনিস্ট নেতাকে। তবে মনিক সরকার জিতেন্দ্র চৌধুরী, সুধন দাসরা মনে না রাখলেও অনিল সরকারকে মনে রেখেছেন
ত্রিপুরা তপশিলি জাতি সমন্বয় সমিতি সদর বিভাগীয় কমিটির নেতৃত্ব। তারা আম্বেদকর ভবনে পালন করেছেন কবি মন্ত্রী অনিল সরকারের ৮৪ তম জন্মদিন।.
এদিন আম্বেদকর ভবনে উপস্থিত ছিলেন সদর বিভাগীয় সম্পাদক কাজল দাস, হরিজন উন্নয়নের রাজ্য সভাপতি শঙ্কর হরিজন ও মৎস্যজীবীর সদর বিভাগীয় সম্পাদক মৃন্ময় দাস।


সিপিআইএম রাজ্য সম্পাদক জিতেন্দ্র চৌধুরী হয় তো ভুলে গেলেন, কিন্তু ত্রিপুরা তপশিলি জাতি সমন্বয় সমিতির রাজ্য কমিটির সম্পাদক সুধন দাস কিভাবে ভুলে গেলেন? তপশিলি জাতি সমন্বয় সমিতির রাজ্য কমিটিও অনিল সরকারের জন্ম দিন পালন করার সময় পায় নি।নাকি তারাও শ্রেণী আন্দোলনের স্রষ্টা অনিল সরকারের জন্ম দিন কেলেন্ডার থেকে মুছে ফেলে দিয়েছেন? তার দায় ভার অবশ্যই নিতে হবে সুধন দাসকে।


প্রতাপগড় বিধানসভা কেন্দ্র ছিল প্রয়াত কবি মন্ত্রী অনিল সরকারের রাজনৈতিক ঘর। এই কেন্দ্র থেকে অনিল সরকার টানা আটবার বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন।১৯৭৭ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত অনিল সরকারই ছিলেন প্রতাপগড় কেন্দ্রের শেষ কথা। তিনি সংসদীয় রাজনীতিতে শুধু একবার পরাজিত হয়েছিলেন।তাও ১৯৭২- র বিধানসভা নির্বাচনে। তখন তিনি তেলিয়ামুড়া বিধানসভা কেন্দ্র থেকে সিপিএমের টিকিটের লড়াই করেছিলেন। এবং পরাজিত হন।পরের নির্বাচনে তিনি টিকিট পেয়েছিলেন প্রতাপগড় থেকে এরপর অনিল সরকারকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় অনিল সরকারের গড় বলে পরিচিত বিধানসভা কেন্দ্রের কমিউনিস্টরাও ভুলে গিয়েছেন অনিল সরকারকে। তারাও পালন করেন নি কিংবদন্তি নেতার জন্মদিন।


এই কেন্দ্রের বাম বিধায়ক রাম দাস কোথায়? অনিল সরকারের মৃত্যুর পর ২০১৫ সালে উপনির্বাচনে রামদাস প্রতাপগড় কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়েছিলেন। তিনি প্রয়াত মন্ত্রী অনিল সরকারের উত্তরসূরী অনিল সরকারের ফ্লেভারকে কাজে লাগিয়েই রামু জয়ী হয়েছিলেন নির্বাচনে। ২০১৮ সালে রামু পরাজিত হন। তবে ২৩- র ভোটে দেখেন জয়ের মুখ। কিন্তু রামুর উদ্যোগে প্রতাপগড় বিধানসভা কেন্দ্রে কোথাও। অনিল সরকারের জন্মদিন পালন করা হয়নি। এই বিধানসভা কেন্দ্রের সিপিআইএমের অঞ্চল কমিটির নেতাদের অবস্থায়ও অথৈ জলে। অথচ ২০২২ এ প্রতাপগরে ঘটা করে পালন করা হয়েছিল অনিল সরকারের ৮৩ তম জন্মদিন। আসলে ২৩- র বিধানসভা ভোটে অনিল সরকারের ভাবাবেগকে ভোটারদের মনে আকৃষ্ট করে ভোট বাজারে ফায়দা তোলাই ছিলো বাম নেতাদের মূল কাজ।

বিধায়ক রামু দাস

রাজনীতিকরা বলছেন, খেলার মাঠের লাল বাড়ির নেতারা কাল মার্কস ,লেলিন, মাও সেতুং সহ বিদেশি কমিউনিস্ট নেতাদের জন্মদিন ও মৃত্যুদিন পালন করাতে ভুলেন নি। কিন্তু নৃপেন চক্রবর্তী, অনিল সরকার, বিদ্যা দেববর্মাদের স্বরণ রাখতে লজ্জা লাগে তাদের। খবর অনুযায়ী, মেলার মাঠের নেতারা শুক্রবার অনিল সরকারের  ৮৪তম জন্মদিন পালন করতে ভুলে গিয়েছেন।ত্রিপুরা তপশিলি জাতি সমন্বয় সমিতি সদর বিভাগীয় কমিটির নেতাদের উদ্যোগের কথা জানার পর, টনক নড়ে মেলারমাঠ নেতৃত্বের।  এদিন বিকেল পাঁচটায় তারা প্রয়াত কবি মন্ত্রী অনিল সরকারের ৮৪ তম জন্মদিন পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *