* অঙ্কুরেই কি ধ্বংসের আর্তনাদ?

* নেতৃত্বের দ্বৈরথ প্রদেশ তৃণমূল কংগ্রেসের সংসারে।

* দলের মধ্যেই নাকি লুকিয়ে আছে শাসক দল বিজেপি’র চর।

ডেস্ক রিপোর্টার, ২৪অক্টোবর।।
পুর ও নগর ভোটকে সামনে রেখে “ত্রিপুরার জন্য তৃণমূল”—এই শ্লোগানকে হাতিয়ার করে শুক্রবার প্রচারে বেরিয়ে ছিলো তৃণমূল কংগ্রেস। রাজধানীর আমতলী বাজার এলাকায় সাংসদ সুস্মিতা দেবের নেতৃত্বে প্রচার শুরু করেছিল তৃণমূল। ঘাসফুলের প্রচারে আক্রমণ করেছিলো দুস্কৃতিরা।তাতে গুরুতর আহত হন তৃণমূল নেতা মামুন খান।সঙ্গে আরও কয়েকজন।সুস্মিতা দেবকে করা হয় হেনস্থা।দাবি তৃণমূল নেতৃত্বের।
আমতলীর আক্রামনের ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে প্রদেশ তৃণমূল নেতৃত্ব পুলিশ সদর দপ্তরে গিয়ে দিয়েছে ডেপুটেশন। তাদের ডেপুটেশন গ্রহণ করেছেন ডিআইজি এল ডারলং।ডেপুটেশনকারী দলে ছিলেন বঙ্গ থেকে আসা তৃণমূল সাংসদ শান্তনু সেন, বাংলার আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক, সংসদ সুস্মিতা দেব, প্রদেশ তৃণমূল কংগ্রেসের আহবায়ক সুবল ভৌমিক, যুব নেতা বাপটু চক্রবর্তী সহ অন্যান্যরা।
এদিন সন্ধ্যায় জিবি বাজারে অনুষ্ঠিত হয় তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিবাদ সভা।এই সভাতেও ছিলেন সংশ্লিষ্ট নেতারা।কিন্তু প্রদেশ তৃণমূল কংগ্রেসের প্রথম সারির নেতা আশীষ লাল সিংহকে খুঁজে পাওয়া যায়নি প্রতিবাদ সভা চত্বরে।তিনি ছিলেন না পুলিশ সদর দপ্তরে ডেপুটেশনকালে।
তৃণমূল কংগ্রেসের অন্দর মহলের খবর বেশ কিছু দিন ধরেই দলের নেতৃত্বের মধ্যে অবিশ্বাসের বাতাবরণ সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিয়ে শুরু হয়েছে মত বিরোধ। প্রদেশ তৃণমূল কংগ্রেসের একে অপরকে সন্দেহের চোখে দেখতে শুরু করেছে। দলের কিছু নেতার অভিযোগ আশীষ লাল সিংহের বিরুদ্ধে। আশীষ লাল সিংহকে শাসক দল বিজেপি’র দূত বলে সিলমোহর দিয়েছেন প্রদেশ তৃণমূল কংগ্রেসের আহবায়ক সুবল ভৌমিক।তিনি সুস্মিতা দেব ও মলয় ঘটককে এই বিষয়ে মগজ ধোলাই করতে সক্ষম হয়েছেন। তবে তৃণমূল সাংসদ শান্তনু সেনের উপর এতটা হাবি হতে পারেননি সুবল ভৌমিক। বক্তব্য আশীষ অনুগামীদের। তাদের কথায়, এখনো সুবল ভৌমিকের শরীর থেকে বের হচ্ছে বিজেপি ও কংগ্রেসের বুদবুদে গন্ধ।
আশীষ লাল সিংহ কেন আসেন নি জিবি বাজারের প্রতিবাদ সভায়? বঙ্গ তৃণমূল সূত্রের খবর, প্রতিবাদ সভায় উপস্থিত থাকার জন্য নেতৃত্বের যে নামের তালিকা তৈরি করা হয়েছে তাতেই নাকি আশীষ লাল সিংহের নাম নেই।কারণ রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শচীন্দ্র লাল সিংহের ছেলে আশীষ বিজেপি’র এজেন্ট। এই খবর পৌঁছে যায় আশীষ লালের কাছে।
প্রতিবাদ সভায় নেতৃত্বের তালিকায় নাম না থাকার ক্ষোভে আশীষ লাল সিংহও পা মারান নি জিবি বাজারে।
এই ঘটনা থেকে পরিষ্কার তৃণমূল কংগ্রেস শিবিরেরও প্রদেশ কংগ্রেসের “কাঁকড়া সংস্কৃতি”র আবির্ভাব হয়েছে।আর হবেই বা না কেন? এই মুহূর্তে প্রদেশ তৃণমূল কংগ্রেসের ভর কেন্দ্রে বসে থাকা নেতারা তো সেই কাঁকড়া সংস্কৃতির ধারক-বাহক। এই কারণেই গত দেড় বছর আগে বিস্ফোরণ হয়েছিলো কংগ্রেসে।দল ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন প্রদ্যুত কিশোর। তিনি এখন পাহাড় রাজনীতির অধিশ্বর। একই কারণে সদ্য গজিয়ে উঠা তৃণমূল কংগ্রেসেও যদি বিস্ফোরণ হয় তাহলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবেনা।তার জন্য অবশ্যই দায়ী থাকবে কাঁকড়া রাজনীতির ধারক-বাহকরা।এই আওয়াজ উঠছে খোদ তৃণমূল কংগ্রেসের অন্দর মহল থেকে।
তৃণমূল কংগ্রেসে আশীষ অনুগামীদের বক্তব্য, ২০১৮-র নির্বাচন থেকে শুরু করে,২০১৯-এ লোকসভা নির্বাচন এবং পরবর্তী পরিস্থিতিতে আশীষ লাল সিংহ তার অনুগামীদের দিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের ঝান্ডা ধরে রেখেছিলেন ত্রিপুরায়। ধর্মনগর থেকে সাব্রুমের নন্দীগ্রাম।সব জায়গাতেই আশীষ লাল সিংহের লোকজন সক্রিয় ছিলো। বঙ্গ নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের জয়ের পর ঘাসফুল যে সক্রিয় হয়েছে তার পেছনে আশীষ লালের অবদান রয়েছে বলেই মনে প্রদেশ তৃণমূল কংগ্রেসের একাংশ। তাহলে হঠাৎ করে আশীষ লাল সিংহ কিভাবে হয়ে উঠলেন বিজেপি’র এজেন্ট? প্রশ্ন আশীষ লালের অনুগামীদের। হ্যাঁ, এই সমস্ত বিষয় বিচার করবে তৃণমূল কংগ্রেসের থিংক-ট্যাংক। তবে তৃণমূল নেতৃত্ব বুঝিয়ে দিলেন অঙ্কুরেই তাদের মধ্যে ব্যাপক সমন্বয়ের অভাব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *