ডেস্ক রিপোর্টার,২৮অক্টোবর।।
ভোটের মুখে মন্ডল সভাপতির বাড়িতে বিধায়ক পুত্রের হামলার ঘটনা কেন্দ্র করে তপ্ত প্রতাপগড়ের বিজেপি’র রাজনীতি।এই ঘটনায় রীতিমতো জেহাদ ঘোষণা করেছে বুথ সভাপতিরা।তারা স্থানীয় বিধায়ক রেবতী মোহন দাসের ছেলে তথা বিজেপির সর্ব ভারতীয় যুবমোর্চার কার্যকরী কমিটির সদস্য কিশোর দাসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছে তারা। নিগম ভোটের মুখে প্রতাপগড়ে বিজেপি’র গোষ্ঠী সংঘর্ষ বিরোধী দল সিপিআইএম ও তৃণমূল কংগ্রেসকে যে অতিরিক্ত অক্সিজেন জোগাবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আহত মণ্ডল সভাপতি সুকুমার ঘোষ বৃহস্পতিবার সকালে আইজিএম হাসপাতালে যান। চিকিৎসকের নির্দেশে তার এক্সরে, সিটি স্ক্যান করা হয় আইজিএমে। প্রতাপগড়ের আক্রান্ত মন্ডল সভাপতি সুকুমার ঘোষ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন। বাড়িতে ঢুকে মারধরের ঘটনা সম্পর্কে তিনি রাজ্য সভাপতি মানিক সাহাকে অবগত করেন। এখন মানিক সাহার সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন মন্ডল সভাপতি।তারপরও তিনি অনুগামীদের সঙ্গে কথা বলে নেবেন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।
প্রতাপগড়ে কান পাতলে শুনা যায়, মূলত পুর নিগম ভোটে বিজেপি’র সদর জেলার (শহর) সভাপতি অলক ভট্টাচার্যকে প্রার্থী করা নিয়েই কিশোর দাস ও সুকুমার ঘোষের মধ্যে ঝামেলা শুরু হয়। বনমালীপুর মন্ডলের অন্তর্ভুক্ত আগরতলা পুর নিগমের কোনো ওয়ার্ড থেকেই প্রার্থী হতে পারছেন না অলক ভট্টাচার্য।তার পেছনে নানান কারণ রয়েছে। নিগমের ২৮নম্বর ওয়ার্ডটি জেনারেল ক্যাটাগরির জন্য।এই কারণেই অলক ভট্টাচার্যকে ২৮নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী হওয়ার জন্য প্রস্তাব দেন মন্ডল সভাপতি সুকুমার ঘোষ।
প্রতাপগড় বিজেপি’র অন্দর মহলের খবর অনুযায়ী, এই ওয়ার্ডে বিধায়ক রেবতী মোহন মোহন দাস ও তাঁর ছেলে কিশোর দাস চাইছিলেন তাদের পছন্দের প্রার্থী দিতে। তাদের প্রার্থীর নাম কৌশিক। বিধায়ক পুত্র কৌশিককে প্রায় চূড়ান্ত কথা দিয়ে দেন। আর তাতেই বাড়ে বিপত্তি।কারণ মন্ডল চাইছে অলক ভট্টাচার্যকে আর বিধায়ক গোষ্ঠি চাইছে কৌশিককে। কৌশিক ইস্যুতে একটু গভীরে গেলেই পাওয়া “নোটের ঈষদ গন্ধ”।বলছে প্রতাপগড়ের বিজেপি’র কর্মীরা।
প্রতাপগড় মন্ডলের সভাপতি সুকুমার ঘোষ আইজিএম হাসপাতালে দাঁড়িয়ে জানিয়েছে, “বুধবার রাতে বিধানসভার প্রাক্তন অধ্যক্ষ তথা বিধায়ক রেবতী দাসের পুত্র কিশোর দাস তার বাড়িতে যান।সঙ্গে ছিলেন কিশোরের দুই ভাইপো গৌতম দাস ও আরেকজন। বাড়িতে প্রবেশ করেই কিশোর দাস সুকুমার ঘোষকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “তোর জন্য আমার ২৩-র ভবিষ্যত নষ্ঠ হয়ে গেছে,তোকে আমি মেরে ফেলবো”।…এই কথা বলেই কিশোর সহ তার দুই ভাইপো সুকুমার ঘোষকে মারধর শুরু করে। সিনিয়র নেতা সুকুমারকে মাটিতে ফেলে কিশোর ও অনুগামীরা নির্যাতন করে।এই ঘটনা দেখে ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন সুকুমার ঘোষের স্ত্রী ও পুত্র। কিশোর দাসের রোষানল থেকে বাদ যাননি মন্ডল সভাপতির স্ত্রী-পুত্র। সুকুমার ঘোষের সিসি ক্যামেরায় পুরো ঘটনা বন্দি রয়েছে।
বিধায়ক পুত্র কিশোর দাসের হামলার ঘটনা জানাজানি হতেই মন্ডল সভাপতি সুকুমার ঘোষের লোকজন বেরিয়ে আসে।তারাও কিশোর দাসকে পাল্টা আক্রামনের পরিকল্পনা নেয়।যদিও এলাকায় একজন সজ্জন ব্যক্তি হিসাবে পরিচিত মন্ডল সভাপতি সুকুমার ঘোষ তার অনুগামীদের আটকে দেয়।তিনি রাতেই এই ঘটনা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব,রাজ্য সভাপতি মানিক সাহা, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রতিমা ভৌমিক, দলের সহ-সভাপতি রাজীব ভট্টাচার্য, সম্পাদক টিঙ্কু রায়, প্রাক্তন প্রভারী সুনীল দেওধরকে অবগত করেন। প্রতাপগড় মন্ডলের বুথ সভাপতিরা জানিয়ে দেয়, প্রয়োজনে এই ঘটনার প্রেক্ষিতে সবাই এক সঙ্গে তাদের “পদ” থেকে পদত্যাগ করতেও প্রস্তুত।কারণ তারা কিশোর দাসের এই ঘটনা মেনে নিতে পারছে না। দলগত ও আইনগত ভাবে তারা কিশোরের শাস্তি চাইছে।
আক্রান্ত মন্ডল সভাপতি সুকুমার ঘোষ বলেন, এই ঘটনার পর কিশোরকে মাপ চাওয়ার কথা বলা হয়েছিলো।কিন্তু তাতে কিশোর রাজি নয়।এই ঘটনার সঙ্গে কিশোর দাসের বিধায়ক পিতা রেবতী মোহন দাসও জড়িত বলে অভিযোগ মন্ডল সভাপতির। রাজনীতিকরা বলছেন, বিজেপি একটি সুশৃঙ্খল দল।এই দলে কিভাবে একজন জুনিয়র নেতা তার সিনিয়র নেতাকে রাতের আধারে মারধর করে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। কিশোর দাসের রাজনৈতিক পরিধি এখন রাজ্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়।সে এখন বিজেপি’র যুব মোর্চার কার্যকরী কমিটির সদস্য। সব কিছু মিলিয়ে প্রতাপগড়ের বিজেপির বড় অংশের লোকজন কিশোর দাসের এই ঘটনা মেনে নিতে পারছে না।আসন্ন পুর নির্বাচনে তার প্রভাব পড়তে পারে।এবং হতে পারে রাজনৈতিক বিস্ফোরণও।খুব শীঘ্রই দলের শীর্ষ নেতৃত্ব এই ঘটনার ড্যামেজ কন্ট্রোল না করলে নিগম ভোটে এর ফায়দা তুলবে বিরোধী সিপিআইএম ও তৃণমূল কংগ্রেস।এবং এই অপ্রীতিকর ঘটনার জন্য অবশ্যই দায় এড়াতে পারবেন না দলের শীর্ষ নেতৃত্বও।বলছেন রাজ্য রাজনীতির বিশারদরা।
