ডেস্ক রিপোর্টার,১৩মার্চ।।
‘সন্ত্রাস’— শব্দটি যথেষ্ট অর্থবহ। পৃথিবী সৃষ্টির পর থেকেই ‘সন্ত্রাস’ নামক শব্দটি প্রচলিত হয়ে যায়। ভারত বর্ষে বরাবর সন্ত্রাস পেয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ।কিন্তু কোনো সন্ত্রাস উত্তরণের পথ দেখতে পারেনি।
পরাধীন ভারতে ব্রিটিশরা শুরু করেছিলো ‘শ্বেত সন্ত্রাস’। এক সময়ে গোটা বিশ্ব জুড়ে উপনিবেশ স্থাপনের মধ্য দিয়ে ব্রিটিশরা শ্বেত সন্ত্রাস চালিয়ে গেছে বছরের পর বছর। শ্বেত সন্ত্রাসের কান্ডারী আমেরিকাও। আফগানিস্থান থেকে ইরাক। এবং আজকে রুশের ইউক্রেন আক্রমণ সবই শ্বেত সন্ত্রাসের অঙ্গ।
সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস এই দেশের অন্যতম ‘হাতিয়ার’। সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসকে রাজনীতির গোল আলু বানিয়ে দখল করা যায় মসনদও। দেশীয় রাজনীতির অলিন্দে অলিন্দে বপন করেছে সন্ত্রাসের বীজ। কিন্তু সন্ত্রাসের জুজু দেখিয়ে কখনো কেউ সমস্যার চিরস্থায়ী সমাধান খুঁজে পায়নি।হয়তো বা সাময়িক লাভালাভ হতে পারে।এটুকুই।
বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, অসম ও ত্রিপুরার মতো রাজ্য গুলিতে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে রাজনৈতিক সন্ত্রাস। পার্বত্য ত্রিপুরাতে দীর্ঘ বছর ধরে রাজনৈতিক সন্ত্রাসের আতঙ্কে ভুগছে মানুষ।ক্ষমতার মসনদে যারাই যখন এসেছে তারা করেছে ‘সন্ত্রাস’। তবে তরিকা ভিন্ন ভিন্ন। তার মধ্যে গোদের উপর বিষ ফোঁড়ার মতো অবস্থা সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের ” রক্তের সন্ত্রাসের হোলি খেলা”। এই অভিশাপ কয়েক দশক বয়ে চলেছিলো এই রাজ্যের মানুষ। এখনো শেষ হয়নি এই সন্ত্রাস। কিন্তু সন্ত্রাস করে আজও “স্বাধীন ত্রিপুরা” গঠন করতে পারেনি রক্ত পিপাসুরা।
১৯৮৮-১৯৯৩ এই পাঁচ বছর রাজ্যের ক্ষমতার মসনদে ছিলো কংগ্রেস-টিইউজেএস জোট। বিরোধী দল সিপিআইএমের ভাষায় এই সময়টা ছিলো রাজ্য রাজনীতির জন্য “কালো দিন”। এই সন্ত্রাসই কংগ্রেস জোটের পতনের অন্যতম কারণ ছিলো। জোট জামানার সন্ত্রাসের ক্যাসেট বাজিয়ে বামেরা বছরের পর বছর ক্ষমতায় স্থায়ী হয়েছিলো।
৯৩-এ ক্ষমতার হাত বদল হয়ে মসনদে বসে বামেরা। তৎকালীন বিরোধী দলও বামেদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে সরব হয়েছিলো। ১৯৯৩ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত কংগ্রেস বারবার বামেদের সন্ত্রাস নিয়ে গলা ফাটিয়েছে। নানান কায়দায় রাজনৈতিক সন্ত্রাসের বীজ বপন করেছিলো বামেরা।বিরোধীদের উপর সামাজিক সন্ত্রাস, অর্থনৈতিক সন্ত্রাস, শারীরিক সন্ত্রাস, লিঙ্গ সন্ত্রাস, হামলাবাজী সন্ত্রাস। বামেদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগে মুখর ছিলো তৎকালীন বিরোধী দল কংগ্রেস।
২০১৬ সাল থেকে রাজ্য রাজনীতিতে একটা পরিবর্তন আসতে শুরু করে। কংগ্রেস বিরোধী দল থাকলেও অঘোষিত ভাবে বিরোধীদের ভূমিকা পালন করে বিজেপি।তারাও কংগ্রেসের মতো “লাল সন্ত্রাস” নিয়ে সরব হয়েছিলো। “লাল সন্ত্রাস”কে কর্পোরেট কায়দায় প্রচারে নিয়ে এসেছিলো বিজেপি। বামেদের সন্ত্রাস নিয়ে হিন্দি সিনেমা “লাল সন্ত্রাস” তৈরি করেছিলো বিজেপি।ইউ টিউবে কিছু টেলর দেখা গিয়েছিলো।কিন্তু পূর্ণাঙ্গ ছবি দেখতে পারেনি রাজ্যের মানুষ(যদি না ভুল হয়ে থাকে)। বামেদের লাল সন্ত্রাস নিয়ে বই লিখে ছিলো বিজেপি।এই দুইটি কাজের পেছনে মূল মস্তিস্ক কাজ করছিল রাজ্য বিজেপি’র তৎকালীন প্রভারী সুনীল দেওধরের। এমন গুঞ্জন পদ্ম শিবিরে।
বামেদের সন্ত্রাসকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ কিভাবে দিতে হয় তাও দেখিয়েছিলো বিজেপি। গেরুয়া শিবিরের কর্মী চাঁনমোহন ত্রিপুরার খুনের(বিজেপি’র বক্তব্য) পর তার চিতাভস্ম নিয়ে গোটা রাজ্যে আন্দোলন করেছিলো বিজেপি। অর্থাৎ বামেদের সন্ত্রাস কর্পোরেট কায়দায় প্রকাশ্যে নিয়ে আসতেই আমজনতা সাহস পেয়ে যায়।একসময় “লাল সন্ত্রাস” নিয়ে সাধারণ মানুষ ভয়ে মুখে কুলুপ এটে রাখতো। বিজেপি’র দৌলতে মানুষ ভয়হীন ভাবে বামেদের বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস পায়।তার পরিণাম ২০১৮। বামেদের সন্ত্রাসে অতিষ্ট হয়ে মানুষ তাদের বিসর্জন দিয়ে দেয় হাওড়া-গোমতী-ধলাই-ফেনী-লঙ্গাই নদীর জলে।
এই মুহূর্তে রাজ্যের ক্ষমতায় বিজেপি-আইপিএফটি জোট। আবারও বিজেপি’র সন্ত্রাস নিয়ে সোচ্চার হয়েছে প্রধান বিরোধী দল সিপিআইএম, কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস, তিপ্রামথা সহ অন্যান্য ছোট ছোট রাজনৈতিক দলগুলো। বিরোধীদলের নেতৃত্বের অভিযোগ, বিজেপি’র জামানায় সন্ত্রাসের ধারক-বাহক “বাইক বাহিনী”। একেবারে অর্গানাইজড ভাবে রাজ্য জুড়ে হামলা-হজ্জুতি শুরু করেছে বিজেপি’র বাইক বাহিনী। মিছিল থেকে ছুটে গিয়ে সংবাদ পত্র অফিসে তালিবানি কায়দায় হামলা। আগুন দেওয়া। প্রধান বিরোধী দল সিপিআইএমের সদর দপ্তরে হামলা, গাড়িতে অগ্নিসংযোগ। সিপিআইএমের রাজ্য নেতাদের চলন্ত নেতাদের গাড়িতে আক্রমণ, বিরোধী দলের জনসভা,মিছিলে হামলা। নেতাদের হেনস্থা আরো কত কি। বিজেপি’র এই সন্ত্রাসের তালিকা তৈরি করেছে বিরোধী দল সিপিআইএম।
রাজ্য রাজনীতিতে সদ্য গজিয়ে ওঠা তৃণমূল কংগ্রেসও শাসক দল বিজেপি’র বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে গলা ফাটিয়ে চলছে।তাদের বক্তব্য, বিজেপি’র বাইক বাহিনী নিয়মিত হুমকি-হজ্জুতি দিয়ে চলছে টিএমসি’র নেতা-কর্মীদের। বিজেপি’র দুই বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মন ও আশীষ সাহা কংগ্রেসে যোগ দিতেই অতীতের এই বিরোধী দল চাঙ্গা হয়ে উঠে। কংগ্রেস নেতৃত্বের অভিযোগ, সংগঠন চাঙ্গা হতেই বিপাকে পড়ে গেছে শাসক দল বিজেপি।তারাও কংগ্রেস নেতৃত্বের উপর ক্রমাগত আক্রমণ শুরু করেছে।গোলাঘাটি থেকে শুরু রাজধানীর মঠ চৌমুহনী, পোস্ট অফিস চৌমুহনী, ইন্দ্রনগর,ভাটিঅভয় নগর থেকে শুরু করে অরুন্ধতী নগর সব জায়গাতেই কংগ্রেসের উপর বিজেপি’র সন্ত্রাসের কদর্যরূপ।বিজেপি’র এই অভিযোগ নিয়ে সরব হয়েছে কংগ্রেস নেতৃত্ব। অর্থাৎ বিরোধীরা শাসক দল বিজেপি’র সন্ত্রাসের ভয়ে তটস্থ।কখনো তারা চেষ্টা করছে পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে।
বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর নেতৃত্বের বক্তব্য, সাধারণ মানুষ বিজেপি’র সন্ত্রাসের ভয়ে জুবুথুবু।তারা কথা বলতে পারছে না। কিন্তু ভোটবাক্সে ঠিক তার জবাব দেবে সাধারণ মানুষ।গত বছর পুর ও নগর ভোটে তারই ঝলক দেখা গিয়েছে বলে মন্তব্য করেন বিরোধী নেতৃত্ব।
পরিশেষে বলা যায়, রাজ্যের ইতিহাসের দিকে নজর রাখলে দেখা যায় ‘রাজনৈতিক সন্ত্রাস’ কখনো স্থায়ী সমাধান এনে দিতে পারে নি।যারাই সন্ত্রাস করেছে তারাই কালের বিবর্তনে হারিয়েছে ক্ষমতা। অর্থাৎ সন্ত্রাসকে কখনো মেনে নেয় নি মানুষ,এখনো মেনে নেবে না।তাই “সন্ত্রাস” থেকে বিরত থাকায় হবে বুদ্ধিমানের কাজ। বলছেন রাজনীতিকরা।
সন্ত্রাস নিয়ে বিরোধীদের সমস্ত বক্তব্য খণ্ডন করে দিয়েছে বিজেপি নেতৃত্ব।তাদের দাবি সন্ত্রাসের ‘গডফাদার’ ছিলো বামেরা। বিজেপি সন্ত্রাসকে প্রশ্রয় দেয় না।এবং দলের কর্মী-সমর্থরা সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িত নয়। সিপিআইএম সহ বিরোধী দলগুলো সন্ত্রাস নিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।তাছাড়া সন্ত্রাস নিয়ে কংগ্রেসের দিকে অভিযোগের তির শাসক দল বিজেপি’র।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *