ত্রিপুরা নিয়ে চিন্তায় মমতা – অভিষেক! (ফাইল ছবি)।

ডেস্ক রিপোর্টার, ১৩সেপ্টেম্বর।।
                 রাজ্য রাজনীতিতে সাড়া জাগিয়ে চতুর্থ ইনিংস শুরু করেছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস। কিন্তু ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেনি। পুর নির্বাচনের পর বিধানসভার উপভোটে খেই হারিয়ে ফেলে। এবং সুপার ফ্লপ করে।
                 প্রদেশ তৃণমূল কংগ্রেসের এই ব্যর্থতার কারণ কি? রাজনীতিকরা বলছেন, তৃণমূল কংগ্রেসের অধিক সুবল নির্ভরতা দলকে খাদের কিনারায় ঠেলে দিয়েছে। বঙ্গ নেতৃত্ব তৎকালীন রাজ্য সভাপতি সুবল ভৌমিককে দিয়েছিল ফ্রী – হ্যান্ড। কিন্তু সুবল আক্ষরিক অর্থে দলকে সফলতা এনে দিতে পারেননি। সঙ্গে চূড়ান্ত ব্যর্থ তৃণমূলের রাজ্য সভার সাংসদ সুস্মিতা দেব।তিনি দীর্ঘদিন ধরে রাজ্যে থাকলেও কাজের কাজ কিছুই করতে পারেননি। উপভোটে চার বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূল প্রচারের কোনো খামতি রাখেনি।বরং তারা অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোকে প্রচারের ক্ষেত্রে টেক্কা দিয়েছে। কিন্তু তাতে কি হবে? সুবল – সুস্মিতার রসায়ন যে চূড়ান্ত ফ্লপ করেছে।

অপ্রাসঙ্গিক তৃণমূলকে কি প্রাসঙ্গিক করবেন রাজীব?

“ভোট বাজারে তৃণমূল কংগ্রেসের এই ব্যর্থতার পেছনে ছিলো নেতৃত্বের ল্যাং মারামারি।”বলছে খোদ তৃণমূল কর্মীরা। সুবল – সুস্মিতার কথা রাখতে গিয়ে ত্রিপুরাতে দলের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপনকারী কর্মীদের অসহায়ের মতো গোমতী- হাওড়ার জলে ভাসিয়ে দেয় নেতৃত্ব।দল থেকে ব্রাত্য হয়ে অভিমানে ঘরে বসে যায় তারা। এতে ব্যাপক প্রভাব পড়ে দলীয় সংগঠনে। তার ফল পাওয়া যায় চার বিধানসভা কেন্দ্রের উপভোটে। দাবি বঞ্চিত তৃণমূল কর্মীদের।
                 তৃণমূল কর্মীদের কথায়, পুর ও নগর ভোটে ২৩শতাংশ ভোট পেয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস।  তার পেছনে ছিল সুদীপ “ফ্লেভার” এবং বিজেপির প্রতি মানুষের অনাস্থা। এখানে সুবল – সুস্মিতা কোনো ফ্যাক্টর ছিলো না। তার প্রমাণ অবশ্যই পাওয়া গিয়েছিল রাজধানীর দুই বিধানসভা কেন্দ্রের উপভোটে। তৃণমূল কংগ্রেসের দুই  প্রার্থী পান্না দেব ও সংগীতা ব্যানার্জী এক হাজার থেকেও কম ভোট পেয়েছেন।
                 তৃণমূল কর্মীরা দৃষ্টান্ত স্বরূপ তেলিয়ামুড়া ও আমবাসার পুর সভার ভোট চিত্র তুলে ধরেন।তাদের যুক্তি,এই দুইটি জায়গাতে সুদীপ ফ্লেভার কাজ করেনি। সংশ্লিষ্ট পুরসভা গুলিকে সুবল সুস্মিতারা ছিলেন অস্তিত্বহীন।  তা সত্ত্বেও শাসক দল বিজেপির সঙ্গে সেয়ানে সেয়ানে লড়াই করে তৃণমূল।এবং আমবাসাতে একটি আসনও দখল করে।ভোটের শতাংশের হিসাবে প্রধান বিরোধী দল বামেদের পেছনে ঠেলে দেয় তৃণমূল। কিভাবে তা সম্ভব হয়েছে? তৃণমূল কর্মীদের সটান জবাব,  তেলিয়ামুড়া ও আমবাসাতে তৃণমূল কংগ্রেসের এই সাফল্যের পেছনে ছিলেন আশীষ লাল সিং। তৃণমূল কর্মীদের বক্তব্য, পুর ও নগর ভোটে বিশালগড় ও কৈলাসশহরে ভালো ফলাফল করতে পারতো তৃণমূল কংগ্রেস। কিন্তু সুবল ভৌমিকের  নির্দেশ অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট দুই পুরসভাতে প্রার্থী দেওয়া হয়নি। অথচ আশীষ লাল সিং প্রার্থী তালিকা তৈরি করে পাঠিয়েছিলেন নেতৃত্বের কাছে। বঙ্গ নেতৃত্ব সুবলকেই তখন অধিক গুরুত্ব দিয়েছিলো। তবে পেয়েছে তার ফলও।

সুপার ফ্লপ সুবল – সুস্মিতার রসায়ন!

তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীদের বক্তব্য,দলের মধ্যে উড়ে এসে জুড়ে বসা সুবল ভৌমিকের বাড়বাড়ন্ত  দেখে দলের পুরনো কর্মীরা সাইড লাইনে চলে যায়। দলের মধ্যে গুরুত্বহীন হয়ে পড়েন আশীষ লাল সিংয়ের মতো নেতাও। সুবল ভৌমিকের কাজ কর্মের প্রতি বিতশ্রদ্ধ হয়ে দল ছেড়ে দেন প্রাক্তন বিধায়ক আশীষ দাস। স্বাভাবিকভাবেই তৃণমূল কংগ্রেসে তৈরি হয় নেতৃত্বের শূন্যতা এবং দলের মধ্যে মাশরুমের মত মাথাচারা দেয় অন্তর্কোন্দল। দলের এই  অস্থির পরিস্থিতির বিরূপ চিত্র ফুটে উঠে চার বিধানসভা কেন্দ্রের উপভোটে।
                 ভোট শেষে অবশ্যই তৃণমূল কংগ্রেসের ল্যাবে ত্রিপুরার রেজাল্ট নিয়ে ময়নাতদন্ত করে বঙ্গ নেতৃত্ব।এখানে বেরিয়ে আসে জঘন্য রেজাল্টের মূল কারণ । তা অনুধাবন করতে পারেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্ব ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও পর্যবেক্ষক রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপরই বঙ্গ নেতৃত্ব সুবল ভৌমিকের লাগাম টানার সিদ্ধান্ত নেয় এবং তাকে সভাপতির পথ থেকে অব্যাহতি দেয়।
                 রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের কথায়, উপভোটে আশীষ লাল সিং,আশীষ দাস সহ ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা দলের দুর্দিনের অসংখ্য কর্মী – সমর্থকদের পিছু টান অশনি সংকেত ডেকে আনে। তার দায় অবশ্যই এড়াতে পারবে না তৃণমূল কংগ্রেসের ভোট সমীক্ষক সংস্থা আই – প্যাক। “প্রশান্ত কিশোরের সংস্থা আই – প্যাকের বেতন ভুক্ত কর্মীরাও তৃণমূল কংগ্রেসকে ঠেলে দিয়েছে ব্যাকফুটে।কারণ বাস্তবতার সঙ্গে তাদের রিপোর্টের কোনো মিল ছিলো না।” আই – প্যাকের বিরূদ্ধে এই অভিযোগ তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীদের।

দুই আশীষ কি আসবেন দলের মূল স্রোতে?

ক্ষুব্ধ তৃণমূল কর্মীদের কথায়,”শ্বাশত”(প্রতারক) নামক আই – প্যাকের এক কর্মীর সঙ্গে গোপন চুক্তি ছিলো সুবল ভৌমিকের! তা নাকি জানতেন সুস্মিতা দেব। তৃণমূল কর্মীরা বলেছেন, শ্বাশত  মূলত ত্রিপুরার উদয়পুরের বাসিন্দা। কিন্তু দুর্ভাগ্যের হলেও সত্যি, প্রতারক শ্বাশত নিজেকে ত্রিপুরার লোক বলে পরিচয় দিতে লজ্জা পান।আসলে প্রতারণার ঢালি সাজানোর জন্যই শ্বাশত নিজেকে ত্রিপুরার বাসিন্দা বলে পরিচয় দিতে চাইতেন না। প্রসঙ্গত সুবল ভৌমিকের শশুর বাড়ি উদয়পুর। সেই সূত্র ধরে শ্বাশতের সঙ্গে সুবল ভৌমিকের পরিচয় নাকি দীর্ঘ পুরনো। শ্বাশত নাকি ঘুর পথে তৃণমূল থেকে টাকা নেওয়ার পাশাপাশি বিজেপি থেকে কামাতেন মোটা অঙ্কের টাকা। প্রদেশ তৃণমূল কংগ্রেসের বহু গুরুত্ব পূর্ণ তথ্য,এবং দলের পরিকল্পনার কথা ফাঁস করে দিতেন গেরুয়া শিবিরে।শ্বাশতের বিরুদ্ধে এই মারাত্বক অভিযোগ তৃণমূল কর্মীদের।
          প্রদেশ তৃণমূল কংগ্রেসের পর্যবেক্ষক রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি কোন খেদ নেই তৃণমূল কর্মীদের। রাজীব প্রসঙ্গে বিক্ষুব্ধ তৃণমূল কর্মীদের বক্তব্য, সুবল জামানায় তিনি সঠিকভাবে দল পরিচালনা করতে পারেননি। কারণ সুবল –  সুস্মিতারা তার কোন কথাই শুনেননি। এখন সুবল বিহীন তৃণমূলকে একটা জায়গায় দাঁড় করানোর জন্য রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় চেষ্টা করেছেন। তাতে আবার বাধ সাধার কাজ শুরু করেছেন সুস্মিতা দেব। দলীয় কর্মী সমর্থকদের কোন সমস্যা হলেই তাদের বাড়িতে ছুটে যাচ্ছেন রাজীব।কথা বলছেন সমস্যা নিরসনের জন্য। প্রয়োজনে করছেন আর্থিক সাহায্য। কিন্তু বিপদের দিনে সুবল বা সুস্মিতা থেকে এই ধরনের কোন সাহায্য সহযোগিতা পাচ্ছেন না দলের কর্মী সমর্থকরা। একথা অকপটে স্বীকার করেছে দলের কর্মীরা।

প্রশান্ত কিশোরকে কালিমালিপ্ত করছেন শ্বাশ্বত!

সুস্মিতা সম্পর্কে তৃণমূল কর্মীদের অভিমত,  নিজের রাজ্য অসমে সুস্মিতা জনবর্জিত (!) অসম রাজনীতিতে নেই তার নাম গন্ধ।এখন ত্রিপুরাতে এসে শুরু করেছে ফাঁকা আওয়াজ। বিঘ্ন ঘটাচ্ছেন পর্যবেক্ষক রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাজে। আর তিনি দলের মধ্যে বিভিন্ন  উপদল করতে উস্তাদ। তৃণমূল কংগ্রেসের অন্দর মহলের খবর, ইতিমধ্যেই নাকি রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বঙ্গ নেতৃত্বের কাছে নালিশ জানিয়েছেন। কারণ সুস্মিতা দেবের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত এই মুহূর্তে দলের জন্য  ডেকে আনছে  বিপদের ঘণ্টা ।
         
                
                
                
                

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *