
ডেস্ক রিপোর্টার, ৯জুলাই।।
রাজ্য রাজনীতিতে তৃণমূল কংগ্রেসের একটা ইতিহাস রয়েছে। প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সুধীর রঞ্জন মজুমদারের হাত ধরে তৃণমূল পৌঁছে গিয়েছিল মানুষের মনে।কিন্তু হঠাৎ ঘটে ছন্দ পতন।সুধীর রঞ্জন মজুমদার মমতার প্রতি বিরক্ত হয়ে তৃণমূলের সঙ্গ ত্যাগ করেছিলেন।এরপর তৃণমূল কংগ্রেসের পতাকা ধরে রেখেছিলেন প্রাক্তন বিধায়ক অরুণ চন্দ্র ভৌমিক,দুলাল দাসরা।তাদের পর তৃনমূল কংগ্রেসের ব্যাটন ধরে ছিলেন বর্তমান বিজেপির বিধায়ক সুরজিৎ দত্ত ও রতন চক্রবর্তী। তাদের পর তৃণমূল কংগ্রেসের দায়িত্ব নিয়েছিলেন বর্তমান কংগ্রেস বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মন। শেষে সুদীপও দিদি মমতাকে ছেড়ে দিয়েছিলেন।এরপর পালা এসে সুবল ভৌমিকের। কিন্তু সুবলও দিদির সঙ্গে থাকতে পারেন নি। সুধীর রঞ্জন মজুমদার থেকে সুবল ভৌমিক। অর্থাৎ ১৯৯৮ থেকে ২০২৩ । রাজ্য রাজনীতিতে তৃণমূল কংগ্রেসের এই জার্নিতে দিদি মমতাকে একে একে সবাই ছেড়ে গেলেও, আস্থা রেখেছিলেন দলের নেতা আশীষ লাল সিং। এবার
আশীষও দিদি মমতার উপর ধর্য্য হারিয়ে ফেললেন।এবং সঙ্গ ত্যাগ করলেন দিদির। যোগ দিয়েছেন বিজেপিতে।

রাজনীতিকরা বলছেন, আশীষ ছিলেন দিদি মমতার দীর্ঘ দিনের সৈনিক। ত্রিপুরার রাজনীতিতে তৃণমূল কংগ্রেসের উত্থান – পতন ও জোয়ার – ভাটার মধ্যে আশীষ ছিলেন অবিচল। দিদি আঁচল ধরে তৃণমূল কংগ্রেসকে রাজ্য রাজনীতিতে মাথা তুলে দাঁড় করানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু আশীষ বারবার হতাশ হয়েছিলেন। অবশ্যই এখন মমতা দিদির আঁচল ধরে রেখেছেন পীযূষ কান্তি বিশ্বাস। তবে এই মুহূর্তে রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেস শ্বাস প্রশ্বাসহীন। রাজ্য রাজনীতির আসরে তৃণমূল হয়ে উঠেছে কফিন বন্দী লাশ।
রাজ্যে রাজনীতিতে উর্বর জমি থাকা সত্বেও তৃণমূল কেন মেরুদন্ড সোজা করে দাঁড়াতে পারেনি? প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের নেতারা তার জন্য দায়ী করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এক গুয়েমি মনোভাব। ও ত্রিপুরার নেতাদের তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা। এই কারণেই সুধীর রঞ্জন মজুমদার থেকে শুরু করে হালের আশীষ লাল সিং মমতার সঙ্গ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। আশীষ লাল সিং বিজেপিতে যোগ দিয়ে মমতার প্রতি ক্ষোভ উগলে দিয়েছেন। আশীষ বলেন, ” মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বরাবর ত্রিপুরার লোকজনকে অবহেলা করেন।তার কাছে সঠিক মূল্যায়ন পান নি প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সুধীর রঞ্জন মজুমদার। মমতা ত্রিপুরার মানুষকে কখনো সন্মানের চোখে দেখেন নি। এই কারণেই নেতারা কালে কালে দিদিকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন।”

তৃণমূল কর্মীদের বক্তব্য, তৃণমূল কংগ্রেস কখনো তাদের উপযুক্ত সন্মান করতে পারে নি। তাছাড়া মমতা বরাবর ত্রিপুরা নিয়ে উদাসীন। মমতা কখনো চান নি তৃণমূল ত্রিপুরায় মাথা তুলে দাঁড়াক। জাতীয় রাজনীতির স্বার্থে মমতা তৃণমূলকে ত্রিপুরায় বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করেছিলেন। ত্রিপুরায় ক্ষমতা দখল করা কখনো মমতার উদ্দেশ্য ছিলো না।শুধু মাত্র ত্রিপুরার নেতা – কর্মীদের ভাবাবেগ নিয়ে খেলা করেছিলেন মমতা।

তৃণমূল বঙ্গ নেতৃত্বের দাবি, সুধীর রঞ্জন মজুমদার থেকে রতন চক্রবর্তী। সুদীপ রায় বর্মন থেকে সুবল ভৌমিক এবং হালের আশীষ লাল সিং থেকে পীযূষ কান্তি বিশ্বাসরা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে বার বার ঠকিয়েছেন।তারা ত্রিপুরায় সংগঠনের নাম করে বস্তা বস্তা টাকা এনেছেন। কিন্তু সাফল্যের মুখ দেখাতে পারেন নি। ২১- র পুর ভোট বা উপ নির্বাচনে দলের জন্য প্রচুর অর্থ খরচ করেছিলেন মমতা – অভিষেক। বঙ্গ নেতাদের কথায়, ২৩- র নির্বাচনেও প্রচুর অর্থ দিয়েছিলেন দিদি মমতা।কিন্তু নির্বাচনের সময়ে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব পীযূষ কান্তি বিশ্বাস, রাজীব বন্দোপাধ্যায়, সুস্মিতা দেব, আশীষ লাল সিংরা দলের টাকায় ত্রিপুরায় শুধু ভ্রমণ করেছেন। সংগঠনকে চাঙ্গা করতে পারেন নি। ত্রিপুরায় সংগঠন করতে হালের নেতারা পুরোপুরি ব্যর্থ। এটা বিলক্ষণ বুঝেতে পেরেছিলেন বঙ্গ নেতৃত্ব। তাই ২৩- র নির্বাচনে ৬০ আসনের মধ্যে মাত্র ২৮ আসনে প্রার্থী দিয়েছিলো তৃণমূল কংগ্রেস।