অভিজিৎ ঘোষ
****************

সুশান্ত চৌধুরী।তিনি মজলিশপুর কেন্দ্রের বিজেপি’র বিধায়ক।
রাজ্য রাজনীতিতে সুশান্ত চৌধুরী বারবার বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মনের অনুগামী হিসাবে পরিচিত। সুদীপের হাত ধরেই সুশান্তের উত্থান।
সুদীপ রায় বর্মনের ঘনিষ্ঠরা বলেন, ২০১৮-র বিধানসভা নির্বাচনে সুশান্ত চৌধুরী সুদীপের জন্যই টিকিট পেয়েছিলেন মজলিশপুর থেকে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেবের জনপ্রিয়তার মজলিশপুরে ভোট বৈতরণী অতিক্রম করেছিলেন সুশান্ত চৌধুরী।। মজলিশপুরে তাঁর কোনো রাজনৈতিক ভিত্তি ছিলো না। শুধুমাত্র বিজেপি’র দমকা হাওয়াতে বিধানসভা নির্বাচনে জয় পেয়েছিলেন তিনি।
শাসক দল বিজেপি’র ঘরোয়া রাজনীতিতে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব ও বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মনের ঠান্ডা লড়াই “ওপেন সিক্রেট”। সুদীপ রায় বর্মনকে মন্ত্রিসভা থেকে সরিয়ে দেওয়ার পর বিজেপি’র অভ্যন্তরীণ ফাটল আরো প্রকট হয়।সুদীপ রায় বর্মন তাঁর অনুগামী বিধায়কদের নিয়ে “অঘোষিত” ভাবে পৃথক হয়ে যান। তখন সুদীপের সঙ্গেই সঙ্গ দিয়েছিলেন মজলিশপুরের বিধায়ক সুশান্ত চৌধুরী। মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেবের বিরুদ্ধে তিনি নানান কথাও বলেছিলেন প্রকাশ্যে।
কিছুদিন পর হঠাৎ করেই বিধায়ক সুশান্ত চৌধুরী তাঁর “গুরুসম” সুদীপ রায় বর্মনের সঙ্গ ত্যাগ করে চলে আসেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেবের শিবিরে।ব্যাস,তখন মনে হয়েছিলো বিধায়ক সুশান্ত চৌধুরীর ‘শুভবুদ্ধি’র উদয় হয়েছিলো। মুখ্যমন্ত্রীও তাকে নিয়েছিলেন আপন করে।
এই সময়ের মধ্যেই রাজ্যে ঘটে করোনার “অনুপ্রবেশ”। অর্থাৎ কোভিড-১৯-র প্রথম ওয়েব। করোনার চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে সুদীপ রায় বর্মন রাজ্য সরকারকে তিক্ষণ ভাবে আক্রমণ করেন। রাজ্যের এই অচলাবস্থার বিধায়ক সুশান্ত চৌধুরী তাঁর ছলম পাল্টিয়ে নেন।তিনি ফের চলে আসেন সুদীপ রায় বর্মনের শিবিরে।
রাজনীতিকরা বলেন,সুশান্ত চৌধুরী মন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে গিয়েছিলেন বিপ্লব দেবের শিবিরে।”চিড়ে ভিজবে না” বুঝেই তিনি ফের চলে এসেছেন সুদীপ শিবিরে।অর্থাৎ মুখ্যমন্ত্রী ও সুদীপ রায় বর্মন উভয়ের সঙ্গেই তিনি করেছেন বিশ্বাস ঘাতকতা।দাবি বিজেপি’র কর্মী-সমর্থকদের।
এরপর সবই ইতিহাস। সংস্কারপন্থী বিধায়কদের সঙ্গে একজোট হয়ে তিনি চলে যায় দিল্লিতে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে নালিশ জানাতে বিজেপি’র সর্ব ভারতীয় নেতৃত্বের কাছে।জাতীয় সংবাদ মাধ্যমের কাছে তিনি
বলেছিলেন,”ত্রিপুরায় বিপ্লব দেবের জামানায় মাছ ব্যবসায়ী থেকে রিক্সাওয়ালা কেউই সুখে নেই।মানুষের কাছে নেই অর্থ”। এছাড়াও মুখ্যমন্ত্রী বিরোধী নানান মন্তব্যও করেছিলেন তিনি।রাজ্যের মানুষ সহ বিজেপি নেতৃত্ব এই সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। প্রদেশ বিজেপি’র প্রভারী বিনোদ শোনকরের প্রথম রাজ্য সফরে সরকারি অথিতি শালায় বিজেপির কর্মী-সমর্থকরা মুখ্যমন্ত্রী বিরোধী স্লোগান দিয়েছিলো।অভিযোগ, তখন সরকারি অথিতিশালায় বিধায়ক সুশান্তের অনেক অনুগামী ছিলো।বিধায়কের নির্দেশেই নাকি তারা মুখ্যমন্ত্রী বিরোধী স্লোগান কণ্ঠে ধরেছিলো।মজলিশপুরে কান পাতলেই এই সংক্রান্ত বক্তব্য শোনা যায় গেরুয়া শিবিরের কর্মী-সমর্থকদের মুখে। বিজেপির রাজ্য কমিটির বিনা অনুমতিতে সুশান্ত চৌধুরী মজলিশপুরে জনসভা ও বাইক রেলি করেছিলেন।জনসভায় দাঁড়িয়ে তিনি বলেছিলেন, “বিজেপি নেতৃত্ব তাঁকে ‘বাগি’ বিধায়কের তকমা দিয়েছে।ভাষণে তিনি মুখ্যমন্ত্রী বিরোধী বক্তব্যও রেখেছিলেন।
বিজেপির অন্দর মহলের দাবি,সম্প্রতি ভোল বদল করেছেন বিধায়ক সুশান্ত চৌধুরী।তিনি ফের সঙ্গ ছেড়েছেন বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মনের।গা ভাসিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীর শিবিরে। তাতে অবশ্যই কোনো সমস্যা নেই।কিন্তু এবারও নিজের ‘জাত’ চেনালেন সুশান্ত।বর্তমানে রাজ্য মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণ ও রদবদল হবে।তাই আবার মন্ত্রী হওয়ার বাসনা জেগেছে বিধায়কের মনে।এটা অবশ্যই বিধায়কের অধিকার।তাতে কোনো দোষের কিছু নেই। বলছেন নিন্দুকরা।
বিজেপির কর্মী-সমর্থকদের প্রশ্ন, ফের সুদীপ শিবির ছেড়ে মুখ্যমন্ত্রীর শিবিরে বিধায়ক সুশান্ত চৌধুরীর গা ভাসানোর ঘটনা “গট-আপ” গেম নাতো? সুদীপ বর্মনের সঙ্গে আগাম শলা-পরামর্শ করেই কি মুখ্যমন্ত্রীর দিকে ঝোঁকেছেন সুশান্ত চৌধুরী? এর পেছনে কি বড়সর কোনো পরিকল্পনা রয়েছে? নাকি নিছক মন্ত্রীত্বের আশায় বুক বাধা বিধায়ক সুশান্ত চৌধুরী সখ্যতা বাড়িয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে? সুশান্ত চৌধুরীর কার্যকলাপে এই সংক্রান্ত নানা প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে প্রদেশ বিজেপি’র অতল গহ্বরে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *